সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা ও সুবিধাভোগী বাড়ছে

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর চলমান বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা—সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেটে – সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ –- উভয়ই বৃদ্ধি করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর থেকে বেশকিছু ভাতার হার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বয়স্ক ভাতার মাসিক হার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা, বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতা মহিলাদের মাসিক ভাতা ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা হতে ৯০০ টাকায়, এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতার হার ৮০০ হতে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতার হার ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন কর্মসুচির ভাতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌক্তিক পরিমাণে উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
অর্থ বিভাগ প্রকাশিত সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে বয়স্কভাতার সুবিধাভোগী ৯৯ হাজার জন বাড়ানো হবে। বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতা মহিলা সুবিধাভোগী বাড়ানো হবে ১ লাখ ২৫ হাজার জন। প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তির সুবিধাভোগী বাড়ানো হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী খাতে সুবিধাভোগী বাড়ানো হবে ৯৪ হাজার জন। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের সুবিধাভোগী বাড়বে ২ লাখ। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী বাড়বে ১ লাখ ১৬ হাজার জন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সুবিধাভোগী বাড়বে ২ লাখ জন। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপবৃত্তির সুবিধাভোগী বাড়বে ৯ লাখ ৯০ হাজার জন।
এ ছাড়া সরকার বর্তমানের তুলনায় ১১ লাখ ৪৭ হাজার ব্যক্তিকে ওএমএস সুবিধা বেশি দেওয়ার প্রক্ষেপণ করেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসুচিতে ৩ লাখ ৩৭ হাজার জনকে নতুন করে অন্তর্ভূক্তির পরিকল্পনা নিয়েছে। আর আগামী অর্থবছরে ৫০ হাজার মানুষ পেনশন সুবিধা পাবেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সঠিক ব্যক্তি যাতে উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচিত হন সে লক্ষ্যে ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি (ডিএসআর) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে পেনশন বাবদ থাকছে ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে পেনশন ব্যতীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ থেকে—সঞ্চয়পত্রের সুদে সরকার যে প্রিমিয়াম দেয়, সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের সহায়তা
আগামী অর্থবছরের বাজেটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। ১৫ হাজার ব্যক্তি এই সুবিধা পাবেন। তবে কে কীভাবে সুবিধা পাবেন—সেটি বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেননি ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেছেন, শীঘ্রই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং গণভবনকে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর' হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ভাতা, চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৩২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।