মধ্যমেয়াদে ৭ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত, ধীরে উত্তরণের আশা অর্থ মন্ত্রণালয়ের

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশা, স্থিতিশীল নীতিমালা ও খাতভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরের মধ্যে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং বৈদেশিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা—এই তিনটি ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগই সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে মূল ভূমিকা রাখবে।
মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (এমটিএমপিএস)-তে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। কঠোর মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির কারণে বর্তমানে একটি সীমিত ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে উচ্চ নীতিগত হারের কারণে বাজারে সুদের হারও বেড়েছে।
আগামী মাসগুলোতে যদি মূল্যস্ফীতি না কমে, তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি কমে যেতে পারে এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এতে বেকারত্ব বাড়ার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর চলতি বছর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যদিও তা ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। এতে রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের এপ্রিলের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলেছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের পণ্যের বৈদেশিক চাহিদাও কমতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১০ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হতে পারে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ এখনও কর-জিডিপি অনুপাতের দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার মুখোমুখি। এর ফলে সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে উন্নয়ন ও সামাজিক খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক খাত এখন তীব্র চ্যালেঞ্জে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অনাদায়ী ঋণ (এনপিএল) বেড়ে যাওয়া, কিছু ব্যাংকের দুর্বল অবস্থা এবং চলমান তারল্য সংকট।
যদিও কিছু ব্যাংক তাদের অবস্থা উন্নত করেছে, তবে অনেক ব্যাংক এখনো দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সুশাসন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আইনগত আদায় এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত বা অধিগ্রহণ না করলে আর্থিক খাতের এই দুর্বলতা স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারানো, রপ্তানির প্রতিযোগিতা ধরে রাখা এবং অর্থনীতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করা।
এ ছাড়া, রেয়াতি অর্থায়ন ও জলবায়ু তহবিলে কম প্রবেশাধিকার থাকায় বাংলাদেশের জন্য অভিযোজিত হওয়াটাও জরুরি হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দেশটি অন্যতম।
অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের ২০২৫ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়, যা দেশের জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ। এতে প্রতি বছর ৬ দশমিক ৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এই ধরনের দুর্যোগ বারবার ঘটায় সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানো এবং জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে বিস্তৃত মূল্যায়ন ও কার্যকর কৌশল নেওয়া জরুরি—বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।