২০২৫ সালের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামার আশাপ্রকাশ গভর্নর মনসুরের

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশে নামবে। আগস্টের মধ্যে তা ৭ শতাংশে নেমে আসবে। আর ২০২৫ সালের শেষে এটি ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছি। মূল্যস্ফীতি ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে তখন সেটা মুদ্রার বিনিময় হারকে (এক্সচেঞ্জ রেট) সাপোর্ট দিতে পারবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় "বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের প্রয়োগ ও প্রভাব" শীর্ষক এক গোলটেবিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দৈনিক বণিক বার্তা রাজধানীর একটি হোটেলে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে।
"আগামী বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় কিছু হস্তক্ষেপ আসবে, আর ব্যাংকগুলো রিক্যাপিটালাইজ হবে"- বলেও জানিয়েছেন গভর্নর।
মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকলে বিনিময় হার স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) রাখা কঠিন মন্তব্য করে ড. মনসুর বলেন, ইনফ্লেশনকে ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ভারত ও আমেরিকাতে এটা ২-৩ শতাংশ। আমাদেরও সে জায়গায় আসতে হবে। আমার ইনফ্লেশন রেট আগামী দুই বছর যদি ৯.৫ শতাংশ হয়, তাহলে আমি কীভাবে বিনিময় হারকে ধরে রাখব। আমি যদি সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঠিক না করতে পারি, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এর সার্বিক ভারসাম্য ঠিক না করতে পারি, তাহলে তো এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক রাখতে পারব না। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, "আমাকে অনেকেই বলছে ব্যাংকগুলোতে ইন্সপেকশন পাঠাতে বলেছে, বাট আমি রাজি হইনি। যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার মার্কেট ইন্টারভেনশন ফান্ড গঠন করা হয়েছে, এটা ব্যবহার করতে হবে না বলে আমি মনে করি। এটাকে আমি রাখব— বাট ব্যবহার করতেই হবে, এমন নয়। ঢাল-তলোয়ার হাতে থাকলেই কি মানুষ মারতে হবে!"
আমদানি সংকোচন করা হয়নি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, "আগে আমরা যে পরিমাণ কমোডিটি (পণ্য) আমদানি করতাম, এখনও সে পরিমাণই করছি। পার্থক্য হলো- বিশ্ববাজারে দাম কমেছে, যেটা আমাদের হেল্প করছে। আমি আমদানিতে বিধিনিষেধ দেওয়ার পক্ষপাতী নই। ট্যাক্স দিয়ে কেউ যদি লাক্সারি (বিলাস) পণ্য ব্যবহার করতে চায়, আমার সমস্যা নেই।"
তিনি বলেন, "ব্যাংকগুলোকে বলব, ফরোয়ার্ড মার্কেটকে ডেভেলপ করার চেষ্টা করেন। ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা এক্সচেঞ্জ রিস্ক নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্যালকুলেশন করবেন। ডেফার্ড পেমেন্টে রিস্ক মনে করলে স্পটে পেমেন্ট করে দিন।"
বাংলাদেশিদের শত শত বিলিয়ন ডলার বাইরে আছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, "আমরা নিজেরাই নিজেদের গরিব করে রাখি। এটা তারা বাইরে রাখে, সম্পদের সিকিউরিটির (নিরাপত্তার) জন্য। আমরা যদি এই সিকিউরিটি মেন্টেইন করতে না পারি, তাহলে ক্যাপিটাল ফ্লাইট থামানো যাবে না।"
"২-২.৫ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে চলে গেলো। এটার একটা প্রভাব তো দেশে থাকবেই। এই কারণে অনেক রেট অফার করার পরও— ডিপোজিট গ্রোথ হচ্ছে না। কারণ, টাকাটা তো দেশে নাই। আমাদের এক্ষেত্রে ফরেক্স রিজার্ভ বিল্ড আপ করার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে।"
তিনি বলেন, "আমি আবারও বলতে চাই, এক্সচেঞ্জ রেট বাংলাদেশেই নির্ধারণ হবে, দুবাই বা অন্য দেশে নয়। কোনো এগ্রিগেটর ৫ কার্যদিবসের বেশি ডলার ধরে রাখতে পারবে না।"
প্রবাসী আয় প্রেরণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "আমি সব রেমিটার্সদের বলবো, আপনারা স্পেকুলেশন করবেন না—ডলারের রেট হুট করে অনেক বেশি বেড়ে যাবে না। পরিবারের কাছে আপনারা চাইলে টাকা পাঠাতে পারেন। এগুলো পরে পাঠালে খুব বেশি লাভ হবে না।"
"আমি ব্যাংকগুলোকে বলবো, আপনারা স্কুলে যান। আপনি যদি সেখান থেকে একজন গ্রাহক তৈরি করতে পারেন, তাহলে সে হয়তো সারাজীবনের জন্য আপনার গ্রাহকে পরিণত হবে, যদি সার্ভিসটা ঠিক রাখা যায়। তারাই সামনে রেমিটার হয়ে আপনার ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাবে।"