২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কাটছাঁট করা ২.৩ লাখ কোটি টাকার এডিপির প্রাথমিক অনুমোদন পরিকল্পনা কমিশনের

অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয়-সংকোচন নীতি ও কম গুরুত্বের প্রকল্পে কাটছাঁটের ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা কমিশন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
এই প্রস্তাবিত এডিপি চলতি বছরের মূল এডিপির তুলনায় ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ বা ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত এডিপির তুলনায় ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।
মঙ্গলবার (৬ মে) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
এই মাসের শেষ দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে বিভিন্ন খাতে কিছুটা সমন্বয় হতে পারে।
তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার তার ব্যয়-সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে এবং আগের সরকারের রেখে যাওয়া কম গুরুত্বের প্রকল্প বাদ দেওয়ায় এবারের প্রস্তাবিত এডিপির আকার তুলনামূলকভাবে ছোট।
এছাড়া গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার সরে যাওয়ায় উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ শুরু হলেও পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়, ফলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প চাহিদা তুলনামূলক কম।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও এম মাসরুর রিয়াজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রস্তাবিত এডিপি চলতি বছরের মূল এডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ কম এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ বেশি—এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, 'বড় এডিপি মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে। তুলনামূলকভাবে ছোট এডিপি অভ্যন্তরীণ চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং রাজস্ব নীতির সঙ্গে সরকারের কৃচ্ছ্র আর্থিক অবস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখবে। এতে ব্যালেন্স অভ পেমেন্ট ভারসাম্যও রক্ষা পাবে।'
মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, নতুন এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও কমানো হয়েছে, যা ভালো লক্ষণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে। বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানো ঋণ ব্যবস্থাপনা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
কমানো হয়েছে সরকারি অর্থায়ন ও বৈদেশিক অর্থায়ন
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এডিপিতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা—যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। তবে সংশোধিত এডিপির তুলনায় এটি ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে এটি সংশোধিত এডিপির চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।
পাঁচটি খাতে ৭০ শতাংশ বরাদ্দ
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের বছরগুলোর মতো এবারও প্রস্তাবিত এডিপির ১৫টি খাতের মধ্যে পাঁচটি খাতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই পাঁচ খাত হলো—পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি, এবং স্বাস্থ্য।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত, যা মোট এডিপির ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা (১৪ শতাংশ)।
শিক্ষা খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (১২ দশমিক ৪ শতাংশ)। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে বরাদ্দ ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ যুক্তিসঙ্গত। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে হবে সময়োপযোগী ও বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতেও আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।