জুলাই-মার্চে এডিপি ব্যয় কমেছে ২৪,৭১৮ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের তিন-চতুর্থাংশ সময় পার হয়ে গেলেও— বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি কম সরকারের। গত জুলাই থেকে মার্চ সময়ে উন্নয়ন ব্যয় গত বছরের তুলনায় ২৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা কমেছে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, এই ৯ মাসে এডিপি খরচ হয়েছে মাত্র ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা—যা সংশোধিত এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার মাত্র ৩৬.৬৫%।
অপরদিকে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি ব্যয় ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের ৪২.৩০%। আইএমইডির ২০১২ সাল থেকে সংরক্ষিত তথ্যমতে, এটি গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ৯ মাসের বাস্তবায়ন হার।
সাধারণত, এসময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪২% থেকে ৪৫% এর মধ্যে থাকে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফা কে মুজেরি বলেন, "গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতাই এডিপি বাস্তবায়নের ধীর গতির মূল কারণ। এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি।"
তিনি আরও সতর্ক করেন, শেষ প্রান্তিকে তড়িঘড়ি করে অর্থ খরচ করার প্রবণতা অনেক সময় অপচয় ও দুর্নীতির সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, "চাপের মধ্যে গুণগত মান বজায় রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অনেক সময় উচ্চ ব্যয়ের ছবি দেখাতে অগ্রিম বিল দিয়ে দেওয়া হয় ঠিকাদারদের, যা বন্ধ করতে হবে।"
আইএমইডির কর্মকর্তারাও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং তহবিল ছাড়ে ধীরগতির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অনেক প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তন বা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, অন্যদিকে অনেক স্থানীয় ঠিকাদার এখনও কাজ শুরু করেননি।
বিদেশি অর্থায়নকৃত বেশ কিছু প্রকল্পেও – বিদেশি ঠিকাদার না থাকায় বিলম্ব দেখা দিয়েছে।
ব্যয়ের বিবরণ
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি খরচের মধ্যে:
? সরকারি অর্থায়ন থেকে ব্যয় হয়েছে ৪৪,৩৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৩২.৮৭%। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এই হার ছিল ৩৬.১৪%।
? বিদেশি উৎস থেকে ব্যয় হয়েছে ৩২,৪১১ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৪০%। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৪৪,০৬৬ কোটি টাকা বা ৫২.৭৭%।
? সরকারি সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ৬,১০৭ কোটি টাকা (প্রথম আট মাসে)।
বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পেয়েছে মোট এডিপির ৭৪.৪৮%। তবে তাদের মধ্যে অনেকের বাস্তবায়ন হার ছিল হতাশাজনক।
দুর্বল বাস্তবায়নকারী বিভাগ ও মন্ত্রণালয়:
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ: খরচ করেছে মাত্র ১৪.৪১%। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে 'পঞ্চম স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচি' (এইচএনপিএসপি) অনুমোদনে বিলম্ব। এই পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মসূচি জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়: বরাদ্দের ২৪.৮৩%, সেতু বিভাগ: ২৭% এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়: ৩২.৭১% এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
পারফরম্যান্স ভালো যাদের:
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বরাদ্দের ৭৯.৭১%, বিদ্যুৎ বিভাগ ৫৬% এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ৫৪% ব্যয় করতে পেরেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ৪৫% করে ব্যয় করেছে।
এই ব্যয়চিত্র থেকেই স্পষ্ট যে এডিপি বাস্তবায়নে বড় একটি বৈষম্য কাজ করছে—কোনো কোনো খাতে দ্রুত অগ্রগতি হলেও, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক খাতে (যেমন স্বাস্থ্য) অগ্রগতি নেই বললেই চলে। কার্যকর সিদ্ধান্ত, দ্রুত প্রকল্প অনুমোদন এবং নিরবচ্ছিন্ন তহবিল ছাড়ই এখন বাস্তবায়নের গতি ফেরাতে সবচেয়ে জরুরি।