কিস্তি ছাড় স্থগিতই রাখল আইএমএফ, দ্রুত সংস্কারের তাগাদা

বাংলাদেশে দুই সপ্তাহের মিশন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি সতর্ক ও কৌশলগত বিবৃতি দিয়েছে— যেখানে ঋণের কিস্তি ছাড়ের সবুজ সংকেত দেওয়া যেমন হয়নি, তেমনি তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানও করা হয়নি।
এর বদলে, তারা বাংলাদেশকে শেষ মুহূর্তের একটি সুযোগে রেখেছে— তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
আইএমএফ মিশনের বিবৃতিতে যে বার্তা রয়েছে, তা উপেক্ষার সুযোগ নেই ঢাকার নীতিনির্ধারকদের। আর তা হলো– পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের জন্য বাংলাদেশকে সব শর্ত পালন করতে হবে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অধীনে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি—যার পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি—ছাড়ের জন্য এখনও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ হয়নি। এই কিস্তিগুলো ছাড় হওয়া এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)-এর আওতাধীন সংস্কারের সঙ্গে জড়িত।
ক্রিস পাপাজর্জিওয়ের নেতৃত্বে আইএমএফের মিশন ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাঁরা বাংলাদেশের আর্থিকখাতের স্বাস্থ্য, রাজস্ব কৌশল, ও অর্থনীতির সূচকগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছেন।
তবে এই পর্যালোচনা বাংলাদেশের পক্ষে যায়নি- অন্তত এখনো পর্যন্ত নয়।
আইএমএফ তাদের চূড়ান্ত বিবৃতিতে জানায়, "কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে — যার মধ্যে আগামী এপ্রিল ২০২৫ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিতব্য আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকও অন্তর্ভুক্ত। আমরা এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে, বাংলাদেশ ও এর জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।"
এই বার্তাও বেশ গূঢ়, কারণ 'স্টাফ-লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি না হলে আইএমএফ পর্ষদ থেকে ঋণের অনুমোদন ও তহবিল ছাড় সম্ভব হয় না। তাই বসন্তকালীন বৈঠকের উল্লেখ একদিকে যেমন একটি সম্ভাব্য সময়সীমা নির্দেশ করে, তেমনি তা জোর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে—এখন প্রয়োজন দ্রুত ও বাস্তব সংস্কার।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিস্তি ছাড়ে মূল বাধাগুলো আগের মতোই—বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, কর সংস্কার, ভর্তুকি হ্রাস এবং ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা। সরকার কিছু অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে বটে, তবে তা এখনও আইএমএফকে টেকসই পথে থাকার ব্যাপারে পুরোপুরি আশ্বস্ত করতে পারেনি।