Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ঢালচর: নিশ্চিহ্ন হতে চলা ভূখণ্ড!

ঢালচরে বন বিভাগের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমলেই। এই দ্বীপে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বন বিভাগ এই কাজ শুরু করেছিল। লক্ষ লক্ষ কেওড়া এবং অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছিল দ্বীপকে ঘিরে। এই কাজের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় মানুষেরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন বন বিভাগের সাথে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দ্বীপে কাজ বলতে ছিল শুধু এই গাছ লাগানো। 
ঢালচর: নিশ্চিহ্ন হতে চলা ভূখণ্ড!

ইজেল

দীন মোহাম্মদ শিবলী
06 December, 2025, 02:00 pm
Last modified: 06 December, 2025, 01:59 pm

Related News

  • পদ্মায় লাল মুনিয়ার ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ যেভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা মিঠাপানির কুমিরের দেখা মিলল
  • সুন্দরবনের মালঞ্চ নদীর চর দখল করে নির্মিত রিসোর্ট উচ্ছেদ করলো প্রশাসন
  • জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিনের বাজার খরচ
  • জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল কলার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে: গবেষণা
  • শত বছর ধরে মেঘনার চরে টিকে আছে দেশীয় ধানের জাত, জলবায়ু পরিবর্তনেও স্থিতিশীলতার আশা

ঢালচর: নিশ্চিহ্ন হতে চলা ভূখণ্ড!

ঢালচরে বন বিভাগের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমলেই। এই দ্বীপে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বন বিভাগ এই কাজ শুরু করেছিল। লক্ষ লক্ষ কেওড়া এবং অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছিল দ্বীপকে ঘিরে। এই কাজের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় মানুষেরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন বন বিভাগের সাথে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দ্বীপে কাজ বলতে ছিল শুধু এই গাছ লাগানো। 
দীন মোহাম্মদ শিবলী
06 December, 2025, 02:00 pm
Last modified: 06 December, 2025, 01:59 pm
ঢালচর তলিয়ে যাচ্ছে সাগরে: বঙ্গোপসাগরের বুকে গত একশ বছর ধরে জেগে থাকা এই পাললিক চর এখন পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। বিশ্বের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে তার লাগাম যদি টেনে ধরা না হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত আধা মিটার বেড়ে বাংলাদেশের বাসযোগ্য অন্তত ২০০০ বর্গকিলোমিটার চলে যাবে পানির নিচে এবং বাস্তুচ্যুত হবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। ঢালচর, চর ফ্যাশন, ভোলা। জুন ৩, ২০২৪।

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভোলার দ্বীপ 'ঢালচর' 

ভোলার মানচিত্রের দিকে লক্ষ করলে অসংখ্য ছোট ছোট চরের অস্তিত্ব চোখে পড়বে। সবচেয়ে নিচের দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় সর্বশেষ দ্বীপটির নাম ঢালচর। বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এই দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সর্বদক্ষিণের মনুষ্য বসবাসকারী দ্বীপ। এরপর খোলা সাগর। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে যাওয়ার লাইনের নৌকা করে আমি এই দ্বীপে প্রথম পা রাখি। 

একেবারেই অচেনা অদেখা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আমি ও ক্লাসমেট এন্ড্রু বিরাজ পৌঁছে ভীষণ আশ্চর্য হয়েছি অসংখ্য মানুষের কোলাহলে মুখরিত দ্বীপটিকে দেখে। ঢালচরে নৌকা পৌঁছায় শেষ বিকেলের দিকে। নৌকা থেকে নেমে প্রথমেই পড়বে ঢালচরের বিশাল বাজারটি। অনেক মানুষ আমাদের ঘিরে ধরলেন; বুঝতে পারলাম ঢালচরে দিনে একবারই নৌকা ভিড়লে তাদের দেখতে সবাই জড়ো হন বাজারসংলগ্ন নৌঘাটে। মানুষগুলোর সাথে কথা বলে বুঝলাম এদের অধিকাংশই জেলে-শ্রমিক। সারা দিন মাছ ধরে বাজারে এসেছে কিছুটা অবসর সময় কাটানোর জন্য। এই টাইমপাসই মূলত ঢালচরের মানুষদের একমাত্র বিনোদন। রেস্টুরেন্টগুলোতে মানুষের পদচারণে গমগম অবস্থা। বড় তাওয়ায় গরম তেলে ভাজা হচ্ছে পেঁয়াজু, পুরি, পরোটা, মোগলাই আরও কত কী?

আমরা জানতাম ঢালচরে থাকার হোটেল নেই এবং ফিরে যাওয়ার নৌকাও নেই। কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম চা-নাশতা খেতে। আমাদের অবস্থা দেখে সবাই পরামর্শ দিলেন 'আজহার মাস্টারে'র সাথে দেখা করতে। তিনি ঢালচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং এই দ্বীপের অভিভাবকের মতো। সন্ধ্যায় ঢালচর বাজারে তার সাথে আমাদের দেখা হলো এবং তিনি আমাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন সদ্য নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়া স্কুল বিল্ডিংয়ের দোতালায়। ঢালচর বাজারের শেষে মসজিদের ডান পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হবে পরীর খালের পাড় ধরে। বেশ খানিকটা হাঁটার পর কেল্লার মতো মাটির একটি উঁচু মাঠ পড়বে। 

এটি ১৯৯১ সালের সাইক্লোনের পরে হেলিপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০০৩ সালে আমাদের ভাড়া করা হেলিকপ্টারটিও এখানেই ল্যান্ড করেছিল। সে আরেক গল্প; পরবর্তী কোনো লেখায় সেটি নিয়ে আবার কথা হবে। মাঠের ডান দিকে তখনো দাঁড়িয়ে ছিল অবসরে যাওয়া ঢালচর সরকারি প্রাইমারি স্কুলটির সবচেয়ে বড় বিল্ডিংটি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটি দাঁড়িয়েছিল, মেঘনা খেয়ে ফেলার আগে পর্যন্ত! সরকারি বিল্ডিং হওয়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে সেটিকে ভেঙে ফেলতে হয়েছিল। 

একটি পাটি ও কাঁথা এবং দুটি বালিশ; পাশে মশা মারার কয়েল জ্বালিয়ে আমরা ঘুমিয়ে গেলাম নিশ্চিন্তে। পরদিন দীর্ঘ সময় ধরে হেঁটে হেঁটে দেখলাম পুরো দ্বীপটির কেন্দ্রীয় অংশটুকু। মনে পড়ে, একদিন সারা দিন ধরে হাঁটলেও দ্বীপের মূল ভূখণ্ড শেষ হতো না; পা ব্যথা হয়ে যেত। এখন ১৫ মিনিট হাঁটলেই লোকালয় শেষ হয়ে যায়! বর্তমানে ঢালচরের বিদ্যমান অংশের প্রায় পুরোটিই সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।

গোধূলিলগ্নে পারাপারের নৌকা: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শেষাংশ চর কচ্ছোপিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন একটি নৌকা বিকাল তিনটায় ঢালচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মূল ভূখণ্ড থেকে যাত্রা শুরু করে দিনের শেষভাগে এসে ঢালচরে পৌঁছে পারাপারের একমাত্র নৌকাটি। মানুষ সব নেমে গেলে শ্রমিকরা একে একে নামাতে শুরু করে মালামালসমূহ। ঢালচর, চর ফ্যাশন, ভোলা। ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪।

ঢালচরে বন বিভাগের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমলেই। এই দ্বীপে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বন বিভাগ এই কাজ শুরু করেছিল। লক্ষ লক্ষ কেওড়া এবং অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছিল দ্বীপকে ঘিরে। এই কাজের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় মানুষেরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন বন বিভাগের সাথে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দ্বীপে কাজ বলতে ছিল শুধু এই গাছ লাগানো। 

১৯৭০ সালের ভয়াবহ সাইক্লোনের পর ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে সর্বহারা দরিদ্র মানুষেরা ঢালচরে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে শুরু করে স্থায়ী বসতি। ২০০৩ সালে দ্বীপের মাঝখানে ইট বিছানো রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আমি হাতের বায়ে ঘন বন দেখেছি। ঢালচরে ইট বিছানো রাস্তা দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। পরে জেনেছি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড এই রাস্তা নির্মাণ করেছিল দ্বীপের মানুষদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য। সাগরের এত গভীরে গিয়ে ইটের রাস্তা তৈরি করা আসলেই একটি দুঃসাধ্য কাজ ছিল। ২০২৫ সালে এসে দ্বীপের কোথাও সেই রাস্তার অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সমগ্র সেই অঞ্চলটিই সাগরে ভেসে গেছে।

ঢালচরে নামার প্রথম দিনেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটল আমার জীবনে। প্রথম, একেবারেই অচেনা রুট ধরে ঢাকার সদরঘাট থেকে আমরা দুজন ভোলার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। একজন ভোলাবাসী লঞ্চে বসেই আমাদের জানিয়ে দিলেন, লঞ্চ থেকে নেমে আমরা কীভাবে ঢালচরে যেতে পারি। অনেক ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত আমরা ঢালচরে পৌঁছেছিলাম। 

দ্বিতীয়, আজহার স্যারের সাথে পরিচয় হলো আমার। তার মুখ থেকেই জানতে পেরেছিলাম ঢালচরের মানুষদের গল্প এবং তৃতীয়, ঢালচর সরকারি প্রাইমারি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে আমাদের নিরাপদ রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হলো। আমি আসলে এই স্কুলের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। ২০১৪ সালে বিল্ডিংটি ভেঙে ফেলা হলে সেই সংবাদে আমি নীরবে কেঁদেছিলাম।

এই তিনটি বিষয়ের সাথে আমার সম্পর্কের বয়স এখন ২২ বছরের বেশি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত বোঝার চেষ্টা করেছি দ্বীপের নানা পরিবর্তনকে চোখের সামনে দেখে দেখে। প্রাইমারি স্কুলটি বঙ্গোপসাগরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ১১ বছর আগে। আজহার স্যার এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। ২০২৫ সালে ঢালচর ছেড়ে যেতে হয়েছে তাকেও অগত্যা বাস্তুচ্যুত হয়ে। তিনি ও আমি এখনো বেঁচে আছি ঢালচরের অন্তিম যাত্রার সাক্ষী হতে।

দ্বীপের নতুন সদস্য: ঢালচরে নতুন সদস্যের আগমন। নৌকার সহকারী যত্ন ও মমতায় নৌকা থেকে নামিয়ে নিয়ে এলেন বাচ্চাটিকে। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন। সাগরের বুকে বৈরী আবহাওয়ায় টিকে থাকতে তাদেরকে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হয়। ঢালচর, চর ফ্যাশন, ভোলা। ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪

ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়ালেখা এবং ছবির ভাষায় জলবায়ু পরিবর্তনের গল্প বলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ালেখা শেষ করে ২০০২ সালে শুরু করি দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েশন ফটোগ্রাফি বিষয়ে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফিতে (বর্তমানে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি)। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ফটোগ্রাফির মতো ব্যয়বহুল বিষয় নিয়ে পড়ালেখা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করতে পাঁচ বছরে আমার পেছনে যে খরচ হয়েছে, পাঠশালায় প্রথম বর্ষে পড়তে তার সমান ব্যয় করতে হয়েছে। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে আমার জীবনে। ঘটনাটি আমার ভিজ্যুয়াল জার্নিতে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কাজটির সূচনা ঘটায়। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে জরুরি ভিত্তিতে একটি অ্যাসাইনমেন্টের প্রয়োজন ছিল। বেশ বড় অঙ্কের টাকা দরকার; তুলনামূলক টাকার অঙ্কে বলতে পারি, এটি ছিল প্রায় ১০ ভরি সোনার দামের সমান! নতুন বর্ষের ভর্তি ফি, ক্যামেরা ও লেন্স কেনা, দৈনন্দিন পড়ার খরচ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন ছিল এই টাকার। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বাবার কাছ থেকে এটি পাওয়া সম্ভব ছিল না। 

সে জন্য সরাসরি গিয়ে প্রয়োজনের কথা বলি আমার শিক্ষক ও মেন্টর ড. শহিদুল আলমকে। তিনি তৎক্ষণাৎ একটি ফিক্সারের কাজ দিয়েছিলেন আমাকে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকার সিনিয়র ফটোগ্রাফার পিটার ইসিকের ফটোগ্রাফি অ্যাসাইনমেন্টের জন্য এই ফিক্সিংটি করতে হবে। এটি ছিল আমার জন্য অত্যন্ত জটিল এবং রোমাঞ্চকর একটি সময়। প্রায় তিন মাসের অ্যাসাইনমেন্ট ছিল সেটি। এই কাজটির মধ্য দিয়ে মূলত আমার বর্তমান ফটো-জার্নির সূত্রপাত ঘটে এবং এখন পর্যন্ত জার্নিটি চলমান আছে।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। পরিচয় থেকে শুরু করে এই দ্বীপের সাথে আমার বর্তমান সম্পর্ক ২০২৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২২ বছরের। বাংলাদেশের উপকূলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সৃষ্ট সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদির ভয়াবহ তাণ্ডবকে বুঝতে আমার ভিজ্যুয়ালি জার্নিতে ঢালচর একটি আইকন হিসেবে কাজ করে। প্রাথমিকভাবে একজন ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার হিসেবে ৩০ বছর এই কাজটি চলমান রাখার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে ন্যূনতম ৩০ বছরের তথ্য ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

ঢালচর বাজার আর নেই: ঢালচরে ২০০৩ সালেও বিশাল একটি বাজার ছিল এবং ইলিশ বাণিজ্যের জন্য আলাদা বাজার ও ঘাট ছিল। শত শত ইলিশের ট্রলার ও হাজারো জেলের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো ঢালচর বাজার। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও তীব্র নদী ভাঙ্গনের মতো বিধ্বংসী নানান কারণে দ্বীপটির অধিকাংশই সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ঢালচর বাজার এখন আর মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। ঢালচর বাজার, ঢালচর, ভোলা। জানুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও অভিঘাত নিয়ে কাজের শুরুটি ২০০৩ সালে হলেও ২০১১ সাল পর্যন্ত আমি ছবি তুলেছি দেশের উত্তর ও দক্ষিণের সব অঞ্চলেই কোনো রকম বাছবিচার ছাড়াই। প্রায় সাত বছর পরে ২০১১ সালে পুনরায় ঢালচরের ছবি তুলতে গেলে আমি এর পরিবর্তিত রূপ দেখে হতবিহ্বল হয়ে যাই। এবং তখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি আমার ফটোগ্রাফির কেন্দ্রীয় ভাবনায় থাকবে বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্পূর্ণ অঞ্চলটি। সুন্দরবন থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত আমাদের রয়েছে দীর্ঘ উপকূল। ১৪টি জেলার মানুষ সরাসরি সাগরের পানিকে সামনে রেখে বসবাস করে। তাদের এই সংখ্যাটি মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

মূলত ২০১১ সালে এসে আমি বুঝতে সক্ষম হই, ফটোগ্রাফির মতো ভাষায় জলবায়ু পরিবর্তনকে দৃশ্যমান করতে এর প্রয়োগ হতে হবে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এই ভাষায় কথা বলতে এর অন্তর্নিহিত কাঠামো না বুঝতে পারলে যোগাযোগ সার্থক হবে না। প্রথমেই আসে জনরা নির্ধারণের বিষয়টি। ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির প্রয়োগ ছাড়া এই কাজটি করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির প্রায়োগিক সিদ্ধান্ত ও চর্চা অত্যন্ত বিস্তৃত। এখানে সচেতনভাবে চর্চার ধারা ও উপাদান নির্বাচন করতে হয়। আমি এই ক্ষেত্রে আমার ফটোগ্রাফি শিক্ষার অন্যতম শিক্ষক ও মেন্টর নরওয়ের আর্ট ফটোগ্রাফির মাস্টার মর্টিন ক্রগভল্ডের গভীর একটি মূল্যায়ন পেয়েছিলাম। 

আমার তৎসময়ে করা কাজের ৩০টির মতো ছবি পোর্টফোলিও আকারে তার সামনে হাজির করি। তিনি সেখান থেকে ১৪টি ছবি পৃথক করে আমাকে পরামর্শ দেন 'ল্যান্ডস্কেপ' জনরাটিকে সচেতনভাবে এখানে কাজে লাগাতে। ৩৫ মিমির ক্যামেরায় আমার লেন্সের ফোকাল লেন্থ ২৪ থেকে ২৮ মিমির সাবলীল ব্যবহারের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশনের প্রশংসা করেছিলেন তিনি। 

পাশাপাশি লাইনের ব্যবহার, কালারের ব্যবহারে যত্নবান হতে বলেছিলেন মূল্যায়নের সময়। সাধারণত বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের অধিকাংশ কাজ সাদাকালো ফরমেটের হলেও আমি রংকে বেছে নেই। এই কাজে পরবর্তী সময়ে পোর্ট্রেট জনরায় তোলা বেশ কিছু ছবি সংযুক্ত করি আমি। এটি গল্পের প্রয়োজনে অত্যন্ত জরুরি ছিল। তবে একজন মৌল-চর্চাকারী ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার হিসাবে আমি সচেতনভাবে 'ফাজি' ছবির ব্যবহার পরিহার করেছি এই কাজটিতে।

নদীভাঙ্গনে বাস্তুচ্যুত: নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের তুলনা চলে নাড়িছেঁড়া শিশুর সঙ্গে। যেন এক নতুন পৃথিবীতে এতোদিনের স্বাচ্ছন্দ ভেঙে ওরা হঠাৎ নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন। অসহায়, বিপর্যস্ত। মানুষের শেকড় কিন্তু গাছের মতোই মাটির গভীরে প্রোত্থিত। শেকড় কাটলে গাছকে বাঁচানো যেমন দুঃসাধ্য, শেকড়কাটা মানুষকেও তাই। একটা নতুন জায়গায় আবার জীবন শুরু করাটা কঠিন। তবু আশা নিরাশায় দোদুল্যমান তাদের নৌকা একসময় নতুন ভূখণ্ডে ভিড়ে, হয়ত নতুন কোনো চরে। এবার সেই ভূখণ্ডে ওরা ওদের মতোই একদল মানুষকে আবিষ্কার করে। যারা তাদের মতোই একই পরিণতির শিকার, হয়ত একই দুর্ভাগ্যের সমভোগী। আগে আসা মানুষগুলো কিন্তু বণ্য প্রাণীর স্বভাবমতো এরইমাঝে এলাকায় একটা দাপট প্রতিষ্ঠা করেছে। হয়ত অনেকখানি সংস্কারও করেছে। অতএব জায়গা, খাবারের ভাগীদার নতুন কোনো পরিবারকে ওরা চট করে গ্রহণ করবে কেন? সময়টা পরীক্ষার; কখনো নিষ্ঠুরতারও। তবু পেছন ফেরার উপায় নেই। একবার নৌকা ভাসিয়েছেন মানে পেছনে ফেরার পথ চিররুদ্ধ।

ঢালচর: জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের সাক্ষী 

বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদীবিধৌত বদ্বীপগুলোর একটি। শক্তিশালী সব নদীর বয়ে আনা পলিতে এর উদার উপকূল হাজারো বছর ধরে গঠিত হতে হতে আজকের আকার পেয়েছে। প্রধান তিন নদীর বয়ে আনা সুবিপুল পলি প্রতিবছর নদীর অববাহিকাসহ সমুদ্রে এসে জমা হয়, জেগে ওঠে বালুচর। সেইসব বালুচরে প্রথমে বৃক্ষ শেকড় বিস্তার করে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে লড়াকু জনপদ। সেই জনপদ একটা বিবর্তনশীল উপকূলে ভীষণ প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে এবং প্রজন্মান্তরে বয়ে যেতে থাকে তার ধারা। বাংলাদেশের উপকূল বেশ মিহিনভাবে জলসীমায় মিশে গেছে। যাকে বলে উপকূলীয় নতিমাত্রা, তা এখানে বেশ মার্জিত, চড়াই-উতরাইবিহীন।

নদীবিধৌত বদ্বীপ হওয়ায় এই মিহিনতা, সেই সাথে নদীগুলোর এমন সমুদ্রমুখীনতা সম্ভব হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলে বিন্দুরেখার মতো সৃষ্টি হয়েছে অন্তত পঁচাত্তরটি দ্বীপ। পৃথিবীতে যত বদ্বীপ আছে, তাদের ভেতর এমন সৌন্দর্য বিরল। কিন্তু জীবনসংগ্রামের সামনে এই সৌন্দর্যের চেয়েও কিছু বড় শর্ত দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে। প্রকৃতির এমন রূপের ভেতরে মানুষ এই উপকূলে প্রতিনিয়ত সামুদ্রিক ঝঞ্ঝার সঙ্গে লড়ছে। আরও আছে মেঘনার মতো বিপুলা নদীর দাপট। 

স্থানীয়দের তিল তিল করে গড়া বসতি সেই দাপটে প্রায়ই মুছে যেতে চায়। বৈশ্বিক উষ্ণতায় সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে ওঠায় হয়েছে আরেক বিপদ। এখন সাধারণ জোয়ারেও এদের যাপনের অংশ যেটুকু ভূমি, সেটুকুর অনেকাংশ তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণতম জেলা ভোলার বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত ছোট্ট একটি দ্বীপ ঢালচর। বঙ্গোপসাগরের বুকে গত কয়েক শ বছর ধরে জেগে থাকা একটি পাললিক চর এখন পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। বিশ্বের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে তার লাগাম যদি টেনে ধরা না হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত আধা মিটার বেড়ে বাংলাদেশের বাসযোগ্য অন্তত ২০০০ বর্গকিলোমিটার চলে যাবে পানির নিচে এবং বাস্তুচ্যুত হবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ।

স্থানীয় অধিবাসীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জানা যায়, ১৯৭০-এর ভয়াবহ সাইক্লোনের পরে মূলত ইলিশ মাছ ধরার মৌসুমে জেলেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন এই ঢালচরে। এটি ছিল মূলত একটি সংরক্ষিত বন; যার পূর্বতন নাম চর সত্যেন। ২০০৩ সালে যখন আমি এই দ্বীপে ছবি তোলা শুরু করি, তখন স্থানীয়দের ভাষ্যানুযায়ী তিন-চার হাজার পরিবার বসবাস ছিল। এখনকার অধিকাংশ মানুষই অগত্যা বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যান্য নিকটবর্তী দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ডে চলে গেছেন। তবে ঢালচর এখনো কোনোমতে টিকে আছে এবং কমবেশি ২০০টির মতো পরিবার বসবাস করছে।

ঢালচর তলিয়ে যাচ্ছে সাগরে: বঙ্গোপসাগরের বুকে গত একশ বছর ধরে জেগে থাকা এই পাললিক চর এখন পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। বিশ্বের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে তার লাগাম যদি টেনে ধরা না হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত আধা মিটার বেড়ে বাংলাদেশের বাসযোগ্য অন্তত ২০০০ বর্গকিলোমিটার চলে যাবে পানির নিচে এবং বাস্তুচ্যুত হবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। ঢালচর, চর ফ্যাশন, ভোলা। জুন ৩, ২০২৪

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সামাজিক ঝুঁকি মানচিত্র অনুযায়ী ২০১৪ সালে ঢালচরের খানার সংখ্যা ছিল ৪১৮টি। তথ্যানুযায়ী ঢালচরের সেই সময়ের মোট জনসংখ্যা ছিল ২১৯১ জন। ২০০৩ সালে প্রথম ছবি তোলার পর ২০১১ সালে প্রায় আট বছর পর আবার ঢালচরে গেলে আমি দ্বীপের অনেক অঞ্চলকেই আর খুঁজে পাইনি। দ্বীপের পূর্ব দিকের বিস্তৃত অঞ্চলের জনবসতি ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে তত দিনে। পশ্চিম প্রান্তের নতুন জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ জমিন ছিল, সেগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। 

ঢালচর ২০২৫ সালে এসে অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ নিয়ে কোনোরকমে অস্তিত্ব রক্ষা করে টিকে আছে। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বর্তমান গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকলে এটি সহসাই সাগরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

আলোকচিত্রী হিসেবে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছবি তোলার যাত্রায় অসংখ্য চর ও দ্বীপে গিয়েছি আমি। উত্তরাঞ্চলের নদীবিধৌত চরের জন্ম ও মৃত্যু যেমন দেখেছি; তেমনি সাগরের নোনা জলের মধ্যে জোয়ার-ভাটায় দ্বীপসমূহের ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়াও দেখেছি। ঢালচর তেমনি বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ, যেটি আমার চোখের সামনে মাত্র ২২ বছরের মধ্যে সাগরে বিলীন হতে দেখছি। 

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোই হাজার বছর ধরে গড়ে তুলেছে এই পাললিক বাংলাদেশকে। এটি এই অঞ্চলের হাজার বছরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী অভিঘাত এই গঠন প্রক্রিয়াকে ভীষণভাবে ব্যাহত করছে। হাজার বছরে গড়ে ওঠা দ্বীপসমূহ মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে একটি দ্বীপের ভূমি ও তার কোলে বসবাসকারী মানুষের কিছু গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি শুধু। কিন্তু আমি স্মরণ করতে চাই সকল গড়ে ওঠা ও বিলীন হয়ে যাওয়া চর ও দ্বীপসমূহকে। তারা আসলে একক নয়, বরং বহু প্রাণ; কিন্তু কান্না একই। এবং তাদের এখন বিলীন হওয়ার বা ডুবে যাওয়ার কাল চলছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের উপকূল

জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের যৌথ আঘাতে এ দেশটি গভীরভাবে জর্জরিত। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পৃথিবীর সকল দেশের মধ্যে অতি দুর্যোগপ্রবণ রাষ্ট্র হিসেবে সপ্তম অবস্থানে ছিল। এ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূলীয় বিস্তৃত অঞ্চল এবং অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের অন্তত ১৭ শতাংশ বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে (Khan, M A Halim and Awal, M A (2009). Global Warming and Sea Level Rising: Impact on Bangladesh Agriculture and Food Security. Department of Crop Botany, Bangladesh Agricultural University. Gazipur: April 2009)। বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের বৈশিষ্ট্য প্রতিনিয়ত আরও বৈরী রূপ ধারণ করছে। বাংলাদেশের ভূমির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৭.৬ মিটার উঁচু।

একটি নৌকা, একবার যাতায়াত: দিনে মাত্র একবার যাওয়া আসা করা যায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরে। ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপটি ইলিশ মাছের ব্যবসার জন্য গত পঞ্চান্ন বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জেলার অর্থনীতিতে। বর্ষায় বৈরী আবহাওয়া মাঝে মাঝেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ঢালচর। মেঘনা নদী, ঢালচর, ভোলা। সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৪

কিন্তু উপকূলীয় জেলাসমূহের এই গড় উচ্চতা ১.৫ মিটারের চাইতে বেশি নয়। বলা চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের সম-উচ্চতা বিশিষ্ট এই অঞ্চলের ভূখণ্ড। ফলে জোয়ারের সময় সমুদ্রসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ লোনাপানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষাকালে এই অবস্থা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। জোয়ারে দৈনিক অন্তত দুবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় অনেক অঞ্চলে। বর্ষাকাল ও পরবর্তী দুইটি ঋতু পর্যন্ত ঢালচরের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠের সম-উচ্চতার দ্বীপগুলোর যে করুণ হাল হয়, তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। বৈজ্ঞানিক আশঙ্কা রয়েছে, বর্তমান শতাব্দীর শেষে ঢালচরের মতো দ্বীপগুলো সাগরে সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের দক্ষিণে খোলা সাগর এবং বাকি তিন দিকে ভূমিবেষ্টিত। ভারত ও মিয়ানমার থেকে আগত অর্ধশতাধিক নদী ও পাহাড়ি ঢলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মিষ্টি পানি প্রবাহিত হয়। সাথে আসে বিপুল পরিমাণে পলিমাটি। এই পলি জমেই হাজার বছরে গড়ে উঠেছে দেশের বিস্তৃত অঞ্চল। ভূমিরূপের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের ফলে এ দেশে একধরনের অভিবাসন চলতেই থাকে। খাদ্য উৎপাদনে দেশের কৃষিব্যবস্থা প্রাকৃতিক ঋতুচক্রের ওপর নির্ভরশীল। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই ঋতুচক্রের ওপর লক্ষণীয়। দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনসংগ্রাম আবার ভিন্ন ধরনের। তাদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের ধরনও ভিন্ন। প্রাকৃতিক এই সমস্যাগুলো প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রামকে আরও কঠিন করে তুলেছে। বিপুল জনসংখ্যার ছোট্ট এই দেশে জলবায়ুতাড়িত উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এক সতর্কবার্তায় উল্লেখ করে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শরণার্থীর বোঝা বহুগুণে বাড়বে। সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বেড়ে দ্বীপাঞ্চলের মানুষ নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটবে। এতে সমগ্র বিশ্বেই শরণার্থী সমস্যা আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সমগ্র বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ দাঁড়াবে এক কোটিতে। সংঘাত কিংবা দমন-পীড়নের শিকার হওয়া মানুষজনদের জন্য আশ্রয়ের প্রশ্নটি স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন, মরুকরণ, সমুদ্রস্তর বেড়ে যাওয়া, বন উজাড় হয়ে যাওয়া, প্রভৃতি কারণে লোকজনের উদ্বাস্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অভিনব (বিশ্ব উষ্ণায়ন বহুগুণে বাড়াবে শরণার্থীর বোঝা, দৈনিক আমাদের সময়, জুন ২০, ২০০৭, পৃষ্ঠা: ৪, ঢাকা)। এই বিশেষ ধরনের শরণার্থীদের নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। 

শৈশবের স্মৃতি: শিশুটি তার শৈশবের একটি অংশ কাটিয়েছে ঢালচরের সংরক্ষিত বনের মধ্যে খেলাধুলা করে। সে বড় হতে হতেই চোখের সামনে সমগ্র বনসহ পুরো দ্বীপটিকেই নিশ্চিহ্ন হতে দেখছে। সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬

বেশ কিছু গবেষণা অনুযায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ফুট বেড়ে গেলে এই শতাব্দীতে বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের শতকরা সাড়ে ১১ ভাগ সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হবে। এছাড়া যে বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুতি ও কর্মচ্যুতি ঘটবে, তা অকল্পনীয়। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর নতুন বাসস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা বর্তমান বাস্তবতায় অত্যন্ত কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। এদের বেশির ভাগই আসবে দরিদ্র ও সমুদ্রতীরের নিচু জমির দেশগুলো থেকে। 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের 'ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৪' অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুতির তালিকায় এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শুধু ২০২২ সালেই নানান ধরনের দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে ১৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের সুস্পষ্ট উচ্চতা বৃদ্ধি, বিধ্বংসী ও প্রাণঘাতী সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা, নদীভাঙন ইত্যাদিও বাস্তবতায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ও এর অধিবাসীদের পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। 

২০০৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর ফটো-ডকুমেন্টারি করার সুবাদে আমি লক্ষ করেছি এই দ্বীপে জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দয় অভিঘাতকে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আঘাতের অন্যতম ক্ষতচিহ্ন বাংলাদেশের এই ছোট্ট দ্বীপ ঢালচর। বাংলাদেশের বর্তমান ভৌগোলিক সীমানায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের যেকোনো অভিঘাত অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এর পেছনের অনেকগুলো প্রত্যক্ষ কারণের মধ্যে অন্যতম দুটি হলো জনঘনত্ব এবং প্রান্তিক জনসাধারণের বিষম দারিদ্র্য।

ঢালচরের পথে প্রান্তরে হেঁটে চলা আমার ট্রেইল

২০১১ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই ঢালচরে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ভোলার মনপুরা, কলাতলী,  রামদাসপুর, চর কুকরি মুকরি ইত্যাদি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে গেলে সময়ের অভাবে ঢালচরে যাওয়ার সুযোগ হতো না। প্রতিটি দ্বীপই বিচ্ছিন্ন এবং একে অপরের সাথে সরাসরি যাতায়াতের বা নৌ-যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই। ইচ্ছা করলেই মনপুরা থেকে ঢালচর যাওয়া যায় না বা ইচ্ছা করলেই চর কুকরি মুকরি থেকে মনপুরা যাওয়া যায় না! ভোলার সর্বশেষ ভূখণ্ড চর কচ্ছোপিয়া থেকে প্রতিদিন বিকাল তিনটায় ঢালচরের উদ্দেশ্যে একটি বড় নৌকা ছেড়ে যায়। এটি একমাত্র লাইনের নৌকা; আমি গত ২২ বছর ধরে এভাবেই যাতায়াত করেছি। আর ঢালচর থেকেও নৌকা ছেড়ে আসে একবারই; সকাল আটটা ত্রিশ মিনিটে।

চর কচ্ছোপিয়ার খাল ধরে নৌকা প্রথমে গিয়ে পড়বে তেঁতুলিয়া নদীতে। তেঁতুলিয়ার পানি দুইটি চরকে স্পর্শ করে মেঘনা নদীর সাথে গিয়ে মিশেছে। নাক বরাবর ঘন বনাঞ্চল ঘেরা চর ক্কুরি মুকরিকে চোখে পড়বে প্রথমে। তেঁতুলিয়া নদী পার হয়ে চর কুকরি মুকরির পার ঘেঁষে চলতে চলতে চরের বন যেখানে শেষ, সেখান থেকে শুরু হয় চর পাতিলা। এই চরটি আমার কাছে এক অপার বিস্ময়ের বিষয় ছিল। আমার ২২ বছরের ঢালচর যাত্রায় মাত্র তিনবার এই চরে নামতে পেরেছিলাম আমি। নৌকা থেকে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ দেখতাম শুধু। যদিও বছরে একবার ধান হতো কিন্তু সেটি ছিল নয়নাভিরাম এক অপরূপ সৌন্দর্য্যের ছবি! বর্ষার শেষে লাগানো ধান কৃষক কেটে ঘরে তোলেন নভেম্বরের শেষ দিকে। এরপর থেকে আট মাস এখানে চড়ে শত শত মহিষ, গরু, ছাগল; সাথে দেখতাম কিছু রাখাল বালককে। আমার চোখের সামনে এই চর পাতিলার অধিকাংশই সাগরে বিলীন হতে দেখেছি।

জমজমাট ঢালচর বাজার: সারাদিন ইলিশ মাছ ধরে জেলেরা ফিরে এলেই সন্ধ্যা থেকে জমজমাট হয়ে ওঠে ঢালচার বাজার। ২০১৬ সালে ঢালচার বাজারের পূর্বের কোনো অংশই আর অবশিষ্ট ছিল না। নভেম্বরের পড়ন্ত বিকেলে ঢালচরে পা দিয়ে আমার মনটা দুঃখে মুষরে গিয়েছিল। এত তীব্র ভাঙ্গন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই দুষ্কর! প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাজারের শেষ প্রান্তে এসে বিস্মিত হয়েছিলাম ছোট্ট সিনেমা হলটিকে তখনো টিকে থাকতে দেখে। পরবর্তী বছরগুলোতে আর এই হলটির কোনো খোঁজ পাইনি। নভেম্বর ১৪, ২০১৬

দ্বিতীয় ঢালচর যাত্রায় আমার সঙ্গী হিসাবে ছিলেন নরওয়ে থেকে আসা ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার অড মেহুস। আমরা প্রথমে গিয়েছিলাম ঢালচরে। সেখান থেকে ফেরার পথে হঠাৎ সিদ্ধান্তে নেমে গিয়েছিলাম চর পাতিলায়। যদিও জানতাম চর পাতিলা থেকে আমরা ফিরতে পারবো না। পরে অবশ্য ভিন্ন নৌকা জোগাড় করে আমাদেরকে মূল ভূখণ্ডে আসতে হয়েছিল। এটি ছিল চর পাতিলায় আমার প্রথম পা রাখা। সে অন্য আরেক গল্প; অন্য একদিন বলা যাবে।

অড মেহুসের সাথে ঢালচর যাওয়ার সময় একই নৌকায় আজহার মাস্টারও আমাদের সাথেই ফিরছিলেন। এটি তার সাথে আমার দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ। এবার অবশ্য তার স্কুলে আমাদের থাকতে হয়নি। কেননা ঢালচরের পশ্চিম প্রান্তের আনন্দবাজার সংলগ্ন কোস্ট ট্রাস্টের (বর্তমানে কোস্ট ফাউন্ডেশন) অফিস কাম সাইক্লোন শেল্টারে থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম আমাদের জন্য। মূলত এই জার্নিতেই ঘটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। 

আমি ও মেহুস কোনও চিন্তা না করেই একটি দাঁড় বাওয়া নৌকায় করে ইলিশ মাছ ধরা দেখতে উঠে পড়েছিলাম ইউসুফ মাঝির সাথে। ইউসুফ মাঝি, তার তিন ছেলে ও আমরা দুই ফটোগ্রাফার মিলে টানা পাঁচ ঘন্টা বঙ্গোপসাগরে ভেসে রইলাম। আমাদের দুইজনকেই কিছুটা সি-সিকনেস ধরে ফেলেছিল। ইলিশের জাল ফেলা, মাছের জন্য অপেক্ষায় থাকার সময় লাল-কালো বড় পালটি হঠাৎ বাতাসে ফুলে উঠলে আমাদের আকাশ ঢেকে যায় বিশাল রঙিন ক্যানভাসে। তখন আমাদের ফিল্ম ক্যামেরায় সাথে সাথে ঝড় উঠেছিল! সেই সময়ে তোলা ছবিগুলো এখনো আমাদের দুইজনার অত্যন্ত প্রিয়। নৌকায় অপেক্ষার সময় ইউসুফ মাঝির ছোট্ট একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে ফেলি। 

কথার এক ফাঁকে সাগরের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে তিনি অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, "আগের চেয়ে সাগর এখন অনেক গরম। মাছ কোথায় যে হারালো?" আমি তখন তার এই কথার কোনও অর্থ ধরতে পারিনি। পরে অবশ্য বুঝেছি তিনি যা বলেছিলেন সেটির অর্থ কী। এর অর্থ হল, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অন্তত তিন থেকে চার ডিগ্রি বেড়ে গেছে। ফলে এখন এখানে ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হয়; যার কিছু কিছু বড় সাইক্লোনে রূপ নেয়। জাল টানা শুরু হলে আমাদের বুকের মধ্যে ধুক ধুক আওয়াজ বেড়ে যায়। হঠাৎ জলের মধ্যে আটকে থাকা বড় ইলিশের নড়াচড়া দেখে বিস্ময়ে-আনন্দে তাকিয়ে রইলাম। আমি অন্তত এই প্রথম দেখলাম জ্যান্ত ইলিশ। কীভাবে যে আমাদের সময়টা কেটে গেলো বলতে পারব না। নিরাপদে ফিরে এলাম ঢালচরে ইউসুফ মাঝির ছোট্ট নৌকায়। ইউসুফ মাঝির কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই দুইটি তাজা ইলিশ কিনে আমরা ফিরতে শুরু করলাম সাইক্লোন শেল্টারের দিকে। হাঁটতে হবে পাকা ৩০ মিনিট। কোথায় গেল সেই জনপদ? যে পথে আমি হেঁটেছি ঘন্টার পর ঘণ্টা!

সবুজ-বেষ্টনীর ম্যানগ্রোভ বন: বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ৪৫ বছরে বঙ্গোপসাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ১৯৮৯ সালে চালানো এই জরিপের পর সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে এই হার আরো বেড়েছে নিশ্চিতভাবেই। গত এক দশকে উপকূলীয় জেলাগুলোয় পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। বাগেরহাট, বরগুনা, ভোলা, কক্সবাজার, খুলনা, নোয়াখালি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর প্রভৃতি জেলাগুলোর অনেকাংশ বিগত দশকের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে প্লাবিত হয়ে থাকছে। ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচারের দক্ষিণে তিলে তিলে গড়ে তোলা সবুজ-বেষ্টনীর ম্যানগ্রোভ বন ধীরে ধীরে সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। ঢালচর, চর ফ্যাশন, ভোলা। জুন ৫, ২০২৪

২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে ঢালচর বাজারকে সরাতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। বর্তমানে ঢালচর বাজার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু ব্যবসায়ী আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই পশ্চিম প্রান্তের আনন্দবাজারে। এ বছর দেখে এসেছি আনন্দবাজারও সরানোর তোড়জোড় চলছে। ঢালচরে থাকা সকল স্কুল বিল্ডিং ভেঙে ফেলতে হয়েছে। একটিও সাইক্লোন শেল্টার আর অবশিষ্ট নেই। সংরক্ষিত বনের মধ্যে ঢালচরের পুলিশ ফাঁড়ি এবং বনবিভাগের অফিসটি শুধু উঁচু দুইটি বিল্ডিং হিসেবে ঢালচারের বুকে দাঁড়িয়ে আছে। বড় আকারের কোনও সাইক্লোন ঢালচরে আছড়ে পড়লে সবাইকে হয়তো বাঁচাতে পারবে না এই দুই বিল্ডিং। 

ঢালচর সরকারি প্রাইমারি স্কুলটি নিজে উদ্বাস্তু হয়ে যে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিল সেটিও ভেঙে ফেলতে হয়েছে এই বছরের অক্টোবর মাসে। আজহার মাস্টারও অবসর নিয়েছেন; তিনিও দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এ বছরেই। তাহলে শিশুদের শিক্ষার কী হবে? ঢালচরের প্রায় সকল অধিবাসী এখন জলবায়ু উদ্বাস্তু। বনের দক্ষিণে সাগরমুখী একটি চর জেগেছিল এক যুগ আগে। নাম তারুয়ার চর। অনেকটা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের মতো সুন্দর। কিছু অধিবাসী এখন চেষ্টা করছেন ওই চরের আশেপাশে গিয়ে নতুন করে বসতি স্থাপনের। 

আমি এবার সেখানে নতুন একটি রাস্তা তৈরি হতে দেখে এসেছি। আর বনের মাঝ বরাবর খালের পাশে মাঝের চর নামে একটি নতুন লোকালয় গড়ে উঠতে দেখেছি। মূলত ইলিশের বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই এই লোকালয়ের জন্ম। এর পাশেই ঢালচর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের একটি টিনশেড কাঠামো তৈরি অবস্থায় দেখে এসেছি গত মে মাসে। আশা করছি শিশুরা আবার তাদের স্কুলে ফেরত যেতে পারবে। ঢালচরের মূল অংশটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলা যায়। এখন শুধু অপেক্ষা বাকি অংশটুকু কতদিন টিকে থাকবে সেটি দেখার।


*ঢালচরের পরিচয়–পোস্ট: চর কুকরিমুকরি, থানা: দক্ষিণ আইচা, উপজেলা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা।


লেখক: আলোকচিত্রী, প্রিন্সিপাল, ছায়া ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেশন আ্যান্ড ফটোগ্রাফি। সম্পাদক, আলো (আলোকচিত্রবিষয়ক পত্রিকা)

 

Related Topics

টপ নিউজ

ঢালচর / জলবায়ু পরিবর্তন / চর / চরাঞ্চল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: সংগৃহীত
    মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কামাল ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
    ‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও
  • রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    ‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স 
  • ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
    ডাকসু নেতার ধাওয়া: দৌড়ে পালালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আ ক ম জামাল
  • ছবি: আনস্প্ল্যাশ
    বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট চালু, আকাশে উড়বে টানা ২৯ ঘণ্টা
  • ছবি: টিবিএস
    মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গলার পোড়া দাগের সূত্র ধরে যেভাবে ধরা পড়লেন আয়েশা

Related News

  • পদ্মায় লাল মুনিয়ার ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ যেভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা মিঠাপানির কুমিরের দেখা মিলল
  • সুন্দরবনের মালঞ্চ নদীর চর দখল করে নির্মিত রিসোর্ট উচ্ছেদ করলো প্রশাসন
  • জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিনের বাজার খরচ
  • জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল কলার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে: গবেষণা
  • শত বছর ধরে মেঘনার চরে টিকে আছে দেশীয় ধানের জাত, জলবায়ু পরিবর্তনেও স্থিতিশীলতার আশা

Most Read

1
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কামাল ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

2
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও

3
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স 

4
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
বাংলাদেশ

ডাকসু নেতার ধাওয়া: দৌড়ে পালালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আ ক ম জামাল

5
ছবি: আনস্প্ল্যাশ
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট চালু, আকাশে উড়বে টানা ২৯ ঘণ্টা

6
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গলার পোড়া দাগের সূত্র ধরে যেভাবে ধরা পড়লেন আয়েশা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab