Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 01, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 01, 2025
রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপূর্ব আত্মজীবনী

ইজেল

তারেক অণু
25 May, 2025, 04:10 pm
Last modified: 25 May, 2025, 04:16 pm

Related News

  • কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবির ম্যুরালে কালি, ভাঙচুর
  • প্রাণ ফিরে পেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩২ বছরের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার কাছারি বাড়ি
  • হিটলারকে হত্যা পরিকল্পনার জন্য যখন রবীন্দ্রনাথের ‘নাতিকে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল
  • জল্লাদের আত্মজীবনী: পুঞ্জীভূত ভুল আর আক্ষেপে ভরপুর যে জীবন
  • রবীন্দ্রনাথ হয়ে পর্দায় আসছেন অনুপম খের

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপূর্ব আত্মজীবনী

যদিও বাবার বড় ছেলে কিন্তু পরিবারের সকল ভাইয়ের মাঝে ছোট হওয়ায় রথী অন্যদের কর্তৃত্বের মাঝেই বেড়ে উঠেছিলেন। এরপর ছোট ছোট প্যারাতে অসাধারণ ঠাস বুনটের নান্দনিক সব বাক্যে রথী লিখেছিলেন তার ঠাকুরদা, কাকা, বাবা, অন্যদের নিয়ে।
তারেক অণু
25 May, 2025, 04:10 pm
Last modified: 25 May, 2025, 04:16 pm

রথীন্দ্রনাথের লেখা আত্মজীবনী On the Edges of Time। ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে রবীন্দ্রনাথ ১৯১২ সালে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে অবস্থান করেছিলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। কষ্টকর চিন্তাসাধ্য লেখালেখির ওপরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি তখন নিজের কিছু কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। মূলত ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাগুলো নেওয়া হলেও এর অর্ধেকই ছিল গীতাঞ্জলির।

সেই সময়ে কেউই তাঁকে বিরক্ত করতে যেত না, শুধু এক বৈষ্ণবী মাঝে মাঝেই দেখা করতে আসতেন, যাকে গুরুদেব সাধনা এবং অন্যান্য লেখাতে স্থান দিয়ে অমর করে রেখেছেন। তারা দুজন জীবন, দর্শন, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতেন। বৈষ্ণবীর সরলতা রবি ঠাকুরকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছিল। যেমনটা তাঁকে করেছিল বাউল দর্শন।

কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের মতে, সেই সরলা গ্রাম্য বৈষ্ণবীর সাথে কথা বলেই হয়তো ১০টি কাব্যগ্রন্থ খুঁজে খুঁজে বিশেষ কয়েকটি কবিতা বেছে নিয়ে, অতি বিশেষ ভঙ্গিতে আত্মিকভাবে ইংরেজিতে নিবেদন করেছিলেন; যা Song Offerings নামে প্রকাশিত হয়ে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিল। এবং সেই অনুবাদের সরলতাই প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছিল কবি ইয়েটসকে এবং সমগ্র পাশ্চাত্যকে।

কী অসাধারণ কাহিনি। জল ও মাটির ঘটনা। এমন সব আড়ালের অসংখ্য কাহিনি ও রবীন্দ্রনাথকে উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন স্বয়ং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী কর্তৃক ১৯৫৮ সালে ইংরেজিতে প্রকাশিত বইটির ছত্রে ছত্রে আছে এমন চমক ও বিশ্বকবিকে বোঝার চেষ্টা। বইয়ের প্রথম পাতাতেই আছে রথীন্দ্রনাথের জন্মের আগে আগেই ১৮৮৮-এর নভেম্বরে ঠাকুর পরিবারের পারিবারিক খাতায় লেখা হিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, রবি কাকার সন্তান হবে একটি ছেলে, মেয়ে নয়! যদিও বাবার বড় ছেলে কিন্তু পরিবারের সকল ভাইয়ের মাঝে ছোট হওয়ায় রথী অন্যদের কর্তৃত্বের মাঝেই বেড়ে উঠেছিলেন। এরপর ছোট ছোট প্যারাতে অসাধারণ ঠাস বুনটের নান্দনিক সব বাক্যে রথী লিখেছিলেন তার ঠাকুরদা, কাকা, বাবা, অন্যদের নিয়ে।

জানিয়েছেন কী করে তলস্তয়ের মতো ঋষি সুলভ চেহারা ও গাম্ভীর্য নিয়ে, কীভাবে দিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর সাইকেল নিয়ে ভিড় ঠেলে পার্ক স্ট্রিটে যেতেন, কীভাবে বন্ধুদের দাওয়াত করে বাসায় জানাতে ভুলে যেতেন–এমন সব রসঘন ঘটনা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ সবাইকে বাদ দিয়ে তার কনিষ্ঠ পুত্রকে, যে কিনা মূলত একজন কবি, জমিদারি দেখাশোনার জন্য তা যেমন রবীন্দ্রনাথের ভাতা মাসে ১০০ রুপি বেড়ে যায় (আগে ছিল ২০০ রুপি), কিন্তু সেই সাথে বাড়ে তার ওপরে অনেকের ঈর্ষাও। 

বইয়ের অনেকখানি জুড়ে আছে শিলাইদহের সুশীতল বর্ণনা। পদ্মার ঢেউ আর চরের গল্প। বাচ্চাবেলার মাস্টারদের কথা। বিশেষ করে মি. লরেন্স নামে ইংরেজের কথা যিনি হাজার হাজার রেশম পোকার সাথে এক বাড়িতে থাকেন (এই ব্যাপারে আবার উৎসাহ পেয়েছিলেন ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রয়র কাছ থেকে), মাস্টারদের কাছে বাচ্চারা ইংরেজি, সংস্কৃত ও গণিত শিখত, কিন্তু বাংলা পড়ত সবাই স্বয়ং কবিগুরুর কাছেই। শিলাইদহে নিয়মিত বেড়াতে আসতেন দিজেন্দ্রলাল রায় (যিনি কবিগুরুকে এক জমিতে আলু চাষের পরামর্শ দিয়েছিলেন, আলু তখনো বাংলায় এক অজানা ফসল), বিজ্ঞানী জগদীশ বসু (যিনি প্রতিদিন সকালে চরে ভ্রমণে যেতেন এবং অনেকগুলো কচ্ছপের ডিম দিয়ে নাশতা করতেন, সেই সাথে কাছিমের মাংস পেলে খুব খুশি হতেন), অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়সহ (রাজশাহীতে কর্মরত আইনজীবী এবং বাংলা ইতিহাস চর্চার দিকপাল) অনেকেই। 

নদীয়া, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, বগুড়া ও ওডিশার কটক পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা জমিদারিতে রবি ঠাকুর এমন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, যাতে প্রজারা সরাসরি তার সাথে দেখা করতে পারে। সেই এলাকার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল আখ মাড়ানোর জন্য Tagore and Co চেষ্টা করেছিল বিশেষ মোটরচালিত যন্ত্র চালু করতে, যা গরুর গাড়িতে করে পরিবহন করা হতো, যদিও ম্যানেজার অনেক টাকাপয়সা নিয়ে সটকে পড়ায় পুরো কোম্পানি লাটে ওঠে এবং রবি ঠাকুরের সারা জীবনের একমাত্র ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা থেমে যায়। 

পিতার সঙ্গে রথী। ছবি: সংগৃহীত

শিলাইদহের এক অজানা ঘটনার কথা রথী বর্ণনা করেছেন এইভাবে, হঠাৎ ব্যাপক ঝড় শুরু হলো, ঝড় থেকে বাঁচার জন্য একটা সরু খালমতো জায়গা, যাকে দহ বলে সেখানে নৌকা প্রবেশ করানো হলো। তিন দিনের মাথায় ঝড়ের প্রকোপ একটু কমলে বাবা নৌকার ডেকে হাঁটাচলা করে দেখছিলেন কী অবস্থা। হঠাৎ তিনি চিৎকার করে উঠলেন নদীর মাঝখানে এক ডুবো ডুবো মানবশরীর দেখে, যার ছিল বিশাল লম্বা চুল। 

বাবা সাথে সাথে মাঝিদের একটি ডিঙি নিয়ে সেই ডুবন্ত নারীকে উদ্ধার করতে বললেন। ঝড়ের মাঝে কেউ এ কাজ করতে রাজি না হওয়ায় বাবা খুবই বিরক্ত হলেন এবং নিজেই ডিঙির মধ্যে লাফিয়ে নেমে যাত্রা করতে উদ্যত হলেন। তখনো সবাই দাঁড়িয়েই ছিল। কিন্তু আমাদের মুসলিম বাবুর্চি অন্যদের কাপুরুষ বলে গালাগাল করে বাবাকে সাহায্য করতে গেলে অবশেষে আরও কজন তার সাথে যোগ দিল। যখন তারা সেই ডুবন্ত নারীর কাছে পৌঁছালেন, দেখা গেল সে উদ্ধার হতে মোটেও রাজি নয়! আসলে বেচারি আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল! বাবা আবিষ্কার করলেন, মহিলা তারই এক প্রজার স্ত্রী। কোনো এক অজানা অভিমানে পানিতে ডুবে মরতে গিয়েছিলেন। তার স্বামীকে তলব করা হলো, বাবা স্বয়ং সেই স্বামীর সাথে কথা বললেন। তারা একসাথে বাড়ি ফিরে তো গেলই এবং স্বামীপ্রবরটি তাকে আর কোনো দিনই অসুখী হতে দেননি। শিলাইদহ ও এর অধিবাসীদের জীবন থেকেই গল্পগুচ্ছের অনেকগুলো ধারণা পেয়েছিলেন কবি। 

বিখ্যাত বাবার জীবনের দুই ভাগে ভাগ করেছেন তাঁর পুত্র; প্রথম ভাগে তরুণ রবি যে সৃষ্টিশীলতা খুঁজে চলেছেন এবং দ্বিতীয় ভাগে প্রাপ্তবয়স্ক রবি, কিন্তু সব সময় তাঁর প্রথম ও প্রকৃত ভালোবাসা ছিল এই সবুজ ডাঙার প্রতি, ঘন বাঁশঝোপ ছাওয়া শান্তিময় গ্রাম, জাদুময় নদীর মায়াময় চর, বুনোহাঁসের ডাকে যা থাকে সরগরম, এগুলো তিনি দেখতেন তাঁর নৌকা পদ্মা থেকে। শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসরের ৩ কুঠিবাড়ি থেকে কর্মচারীদের বয়ে আনা সমস্ত হিসাবই কবি খুব দ্রুত শেষ করে সব সময় লেখালেখিতে ফিরে যেতেন। সন্ধ্যার পরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ছেলে রথীকে নিয়ে বসতেন নৌকার ডেকে, মেতে উঠতেন আলাপচারিতায়। আর কবিসম্রাট সব সময়ই বইয়ের লাইব্রেরি সাথে নিয়ে ঘুরতেন; বিশেষ করে ভাষা, নৃতত্ত্ব, নানা বিজ্ঞানের বই, ইংরেজি ও সংস্কৃত ক্ল্যাসিক উপন্যাস ইত্যাদি, কিন্তু কোনো সময়ই বাংলা বা ইংরেজিতে হালকা ধাঁচের কিছু পড়তেন না। 

স্মৃতির মণিকোঠা হাতড়ে নানা ধরনের রংবেরঙের স্মৃতি আমাদের দিয়েছেন রথীন্দ্রনাথ, যেখানে আছে বাবার কাছে সাঁতার শেখার গল্প, আবার বাবার সাথে হিমালয় যাবার স্মৃতি, শান্তিনিকেতনের প্রথম দিকের গল্প, যে প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে তার মায়ের প্রায় সমস্ত গয়না বিক্রি করতে হয়েছিল। 

লেখার ফাঁকে ফাঁকে নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আলগোছে ছবি এঁকে গেছেন রথীন্দ্রনাথ, প্রকৃতিকে তুলনা করেছেন এক হিংসুটে প্রেমিকার সাথে, যার কাছে কেবল একাকী একটি পরিষ্কার মন নিয়ে গেলেই দর্শন পাওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাখির ডাক কীভাবে তাঁকে উজ্জীবিত করে, তার মনকাড়া বর্ণনা। কেমন কাতরভাবে ময়নার খোঁজে শাল বনে বা পতঙ্গের ডাকে তন্ময় হয়ে হারিয়ে যাবার জন্য নিজেকেই আহ্বান করেছেন রথি, তা পাঠককে আসলেই ব্যাকুল করে তোলে। 

বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সারা জাতির জেগে ওঠা বিশেষ করে তাতে বিশ্বকবির সক্রিয় অংশগ্রহণ, দেশাত্মবোধক গান লেখা, স্বদেশি আন্দোলনের জন্য অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদির বয়ানসহ ভারতবর্ষের স্বাধীনতাসংগ্রাম নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা, বিশ্বভারতীর ভূমিকা ইত্যাদি লিখেছেন তিনি নির্মোহ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে। 

১৯০৬ সালে রথী কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের উদ্দেশে টেলিগ্রাম করে শিকাগো স্টেশনে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য জানিয়েও সেখানে পৌঁছে তিনি এবং তাঁর সঙ্গী কাউকেই পেলেন না! পরে আবিষ্কার হয় যে টেলিগ্রাফ অপারেটরকে রথী যা জানিয়েছিলেন যে তারা দুজন ছাত্র India থেকে আসছেন, সেটাকে বুদ্ধিমতী অপারেটর সুন্দর করে Indiana করে দিয়েছিল! যেহেতু Indiana শিকাগোর পাশেই তাই কেউ তাদের স্বাগতম জানাবার জন্য স্টেশনে যাবার প্রয়োজন অনুভব করেনি। 

১৯৩০ সালের ১৮ জুলাই আইনস্টাইনের দেখা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জার্মানীতে। ছবি: সংগৃহীত

১৯০৯ সালে মার্কিন দেশ থেকে ফেরার পরেই রথী তাঁর বাবার সাথে শিলাইদহে যান, যে ভ্রমণ নিয়ে উচ্ছ্বসিত রথী বলেছেন, সেখানে বাবা ছাড়া আর কেউই ছিল না, বিশাল নৌকায় ভেসে বিশেষ করে প্রতিটি সন্ধ্যায়ই আমরা জগতের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠতাম। বাবার পরামর্শেই ১৯১০ সালে রথী প্রতিমাকে বিয়ে করেন, এটিই ছিল ঠাকুরবাড়ির কোনো সদস্যের প্রথম বিধবাবিবাহ। 

কয়েক বছর পরে পাকাপাকিভাবে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন রথী, কিন্তু কিছুদিন এক ব্যবসায় জড়িয়ে নিজের এক বিশেষ শখের সাথে বেশ জড়িয়ে ছিলেন—গতি! নতুন নতুন মডেলের গাড়ির নিয়ে দূরদূরান্তের গন্তব্যে চলে যেতেন মূলত দ্রুতগতিতে চালাবার নেশায়। 
স্ত্রী মারা যাবার পর রবীন্দ্রনাথ বেশ ভেঙে পড়েছিলেন, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে তাঁর কোনো নজরই ছিল না বলা চলে। সেই সাথে বিশ্বভারতীর চিন্তা তাঁকে শারীরিক, মানসিক ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবেও দুর্বল করে ফেলেছিল। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য বেশি খারাপ করলে তাকে পূর্ণ বিশ্রামের জন্য শিলাইদহে পাঠানো হয়। তার পরের ঘটনা দিয়েই তো লেখাটি শুরু হয়েছে, তাঁর পুনরাবৃত্তি না করে আমরা চলে যাই রবীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্য উদ্ধার করে কলকাতা ফিরে আসার পর তাদের বিলেত যাত্রার বর্ণনায়। 

১৯১২-এর ২৭ মে সবাই মিলে বোম্বে থেকে জাহাজে চাপেন। আম রবি ঠাকুরের বিশেষ প্রিয় বিধায় আলফানসো জাতের এক ঝুড়ি আম কেবিনে নিয়েছিলেন রথী। লন্ডনে পৌঁছে তারা প্রথমবারের মতো পাতালরেলে চাপেন চ্যারিং ক্রস স্টেশন থেকে, বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার তাদের করেছিল মুগ্ধ, বিস্মিত। কিন্তু এই ফাঁকে গীতাঞ্জলী এবং তাঁর সেই ইংরেজি সংস্করণ The Gardener -এর মূল পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেন রথী, যা পরদিন সবার নজরে আসে! অবশেষে লাগেজ অফিসে সেই পাণ্ডুলিপির ব্যাগ পাওয়া যায়, তা না পাওয়া গেলে ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যেতে তা নিয়ে বেশ একটু রগড় করে নিয়েছেন রসিক রথী। 

সেবার লন্ডনে রবি দর্শনে আসেন ইয়েটস, এইচ জি ওয়েলস, মেনসফিল্ড, পরবর্তী সময়ে লরেন্স অব অ্যারাবিয়াখ্যাত টি ই লরেন্স, এজরা পাউন্ড, মে সিনক্লেয়ার প্রমুখ। যেবার বার্টান্ড রাসেলের সাথে রবি ঠাকুরের প্রথম দেখা হয়, কেবল তাঁর সাথে দেখা করার জন্যই কেমব্রিজ থেকে এসেছেন এটা বলে রাসেল দুম করে প্রশ্ন কর বসেন, `Tagore, what is beauty?' প্রশ্নের আকস্মিকতায় রবীন্দ্রনাথ খানিকক্ষণ নীরব থেকে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন এবং পরবর্তী সময়ে এই নিয়ে মূল্যবান প্রবন্ধও রচনা করেন, যা তাঁর বইয়ে স্থান পায়। এক ভোজসভায় জজ বার্নাড শ এবং রবি ঠাকুরকে পাশাপাশি আসনে বসিয়ে সবাই আশা করেছিল দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং রসঘন আলাপের ফুলঝুরি; কিন্তু সেবার সমস্ত কথা রবিকেই চালাতে হয়েছিল, বার্নাড শ ছিলেন সম্পূর্ণ নিশ্চুপ কিন্তু পরের বার কুইনস হলে এক সংগীত সভায় পেছন থেকে রবি ঠাকুরকে বেশ জোর দিয়ে পাকড়াও করে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল, 'চিনতে পারছেন, আমি বার্নাড শ?' 

এর পরের অধ্যায়ে রবি ঠাকুরের ভ্রমণ পিপাসার ওপরে বিশেষ আলোকপাত করেছেন রথী, শিশুকাল থেকে রবি একটানা বাড়িতে থাকতে পছন্দ করতেন না। বাবা ও স্ত্রী নিয়ে ১৯১২, ১৯২০, ১৯২৪, ১৯২৬, ১৯৩০ সালে একসাথে দূরদেশ ভ্রমণে যান। ১৯৩২ সালে ইরান ও ইরাক ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথ প্রতিমাকে সাথে নিয়ে যান। যদিও ১৯১২ সালের বিলেত ভ্রমণের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন রথী; কারণ, এর পরপরই গীতাঞ্জলীর জন্য সাহিত্যে নোবেল পান বিশ্বকবি এবং এরপরে তারা ইউরোপে আবার আসেন ১৯২০ সালে। সেই দুটি বছর তারা ইউরোপের প্রায় সকল দেশেই পদার্পণ করেন, সেই সাথে শীতের সময়ে মার্কিন দেশেও। 

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রতিমা দেবী। ছবি: সংগৃহীত

১৯২০ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথের বইয়ের জার্মান সংস্করণ তখন লাখ লাখ কপি বিক্রি হচ্ছে জার্মানিতে, রয়্যালটি বাবদ মিলিয়ন মিলিয়ন ডয়েস মার্ক জমেছে ব্যাংকে। তাঁকে জানানো হলো যুদ্ধের পর মার্কের দাম খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে (তখন বেশ কিছুদিন দিনে দুবার বেতন দেওয়া হতো, যাতে মার্কের দাম আবার কমার আগে মানুষ কিছু বাজার করতে পারে), এখন কী কর্তব্য।

রবীন্দ্রনাথ ইউরোপ ভ্রমণের একপর্যায়ে যখন জার্মানিতে পোঁছালেন, তত দিনে সেই মিলিয়ন মিলিয়ন ডয়েস মার্কের দর কমে হয়ে গেছে দশ হাজার রুপি!

বন্ধুরা উপদেশ দিল, এই টাকায় ব্যাভারিয়ান বন্ড কিনে নাও, তাতে কিছুটা সাশ্রয় হবে। যখন বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত হলো, তখন ব্যাংক জানাল, রবি ঠাকুরের টাকা কমে এখন হয়েছে মাত্র কয়েক আনা এবং তারা অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন!

এই প্রসঙ্গে কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, বাবা একবার কোটিপতি হয়েই গেছিলেন, কিন্তু ভাগ্যিস সেই বিপর্যয় তাঁকে বেশি দিন সহ্য করতে হয়নি!

ইতিমধ্যে নানা ভাষায় অনুবাদের কারণে রবির কিরণ আদরণীয় হয়ে উঠেছে সারা মহাদেশেই। দক্ষিণ ফ্রান্সের বেলাভূমিতে অবস্থানের সময় এক জেলেকে জাল শুকাতে দিয়ে বই পড়তে দেখায় কৌতূহলী হয়ে সে কী পড়ছে জিজ্ঞাসা করায় সে উৎফুল্ল স্বরে বলেছিল, 'ভেব না আমি কোনো রোমান্টিক আবর্জনা পড়ছি, এটা রবি ঠাকুরের লেখা, নাম ডাকঘর!' 

উপমহাদেশীয় সেনাবাহিনীর এক অফিসার রথীকে জানিয়েছিল, ইউরোপে অনেকখানে যেখানে তাঁর সৈন্যদল নিয়ে ট্রেন থেমেছিল, তরুণীরা এসে ফলের ঝুড়ি ও ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে চিৎকার করে বলতেন, 'ঠাকুরের দেশের মানুষদের জন্য'। বইটিতে এক পাতাজুড়ে রাখা হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত তরুণ কবি উইলফ্রেড ওয়েনের মা সুসান ওয়েনের একটি মর্মস্পর্শী চিঠি, যেখানে যুদ্ধযাত্রারত তরুণ কবিকে রবি ঠাকুরের কবিতা কতটা প্রভাবিত করেছে, তার নিটোল বর্ণনা ঠাঁই পেয়েছে। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে রবি ঠাকুর নিয়ম মোতাবেক সশরীরে সুইডেন আজাব্র আমন্ত্রণ রক্ষা করতে না পারায় যুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালে যখন ফের ইউরোপ যাত্রা শুরু করেন, তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সে যাত্রায় প্রথম দেশটিই হবে সুইডেন। এবং উত্তর সাগর ধরে জাহাজে করে নরওয়ের বিখ্যাত বের্গেন শহরে যাবার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। নানা কারণে পরবর্তী সময়ে নরওয়ে যাবার পরিকল্পনা বাতিল করে কয়েক ঘণ্টার নোটিশে প্যারিস যাত্রা করেন তারা এবং কয়েক দিন পরেই বেশ কিছু খবরের কাগজের কাটিং পান রথী, যেখানে কবিগুরুর নরওয়ের বের্গেন শহরের ভ্রমণের সচিত্র বিশাল রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল! ভুয়া সংবাদ ছাপা যে নতুন কিছু নয়, তা সেই সময়ও স্মরণ করেছেন রথী। 

প্যারিসে থাকার সময়ও বিখ্যাত চিত্তাকর্ষক লোকদের সাথে তাদের সাক্ষাৎ চলতেই থাকে। বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে প্রফেসর Le Brun এবং প্রফেসর ফসেটের সাথে, যাদের উভয়েরই তাদের তরুণী স্ত্রীর সাথে পরিচয় ঘটেছিল রবি ঠাকুরের কবি অনুবাদ করতে গিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত পরিণয় লাভও করে! ফলে রবি হয়ে উঠেছিলেন তাদের সম্পর্কের সেতু। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথ বিশেষ উৎসাহী ছিলেন আদ্রে জিদ এবং রোম্যা রল্যার সাথে সাক্ষাতের জন্য। সেই সাথে তারা উপভোগ করেন সেজান, মানে, রদ্যা, রেনোয়া, ভ্যান গখ প্রমুখ শিল্পীর কাজ, যা ছিল সেই সময়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু। এদের মাঝে ভিনসেন্ট ভ্যান গখের কাজের বিশেষ ভক্ত হয়ে ওঠেন রথী।

১৯২৪ সালে ঠাকুর পরিবারের সাথে দেখা হয় আর্জেন্টিনার কবি ভিত্তোরিয়া ওক্যাম্পোর, যিনি ছিলেন লাতিন আমেরিকার অন্যতম আলোচ্য কবি এবং সেই সাথে রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ ভক্ত। রবির যেকোনো ইচ্ছেপূরণে ভিত্তোরিয়া ছিলেন অতি ব্যগ্র। পেরু সরকারের আমন্ত্রণে জাহাজে করে পেরু যাত্রার সময়ই ভিত্তোরিয়া ওক্যাম্পোর চাপাচাপিতেই রবীন্দ্রনাথ আর্জেন্টিনায় তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করতে বাধ্য হন, যদিও ভিত্তোরিয়ার মূল যুক্তি ছিল এই স্বাস্থ্য নিয়ে আন্দেজ পাড়ি দিয়ে পেরুতে যাওয়া কবিগুরুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে (পরে যা সঠিক প্রমাণিত হয়), কিন্তু এই ঘটনার কারণে পেরু এবং আর্জেন্টিনা সরকার মাঝে বড় আকারের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। আর্জেন্টিনা থেকে ফেরার পথে ভিত্তোরিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী একটি বিশেষ চেয়ার রবীন্দ্রনাথ সাথে করে নিয়ে আসেন, যা জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যবহার করেছিলেন এবং সেই চেয়ার নেওয়া সম্ভব করার জন্য জাহাজের কেবিনের দরজা অপসারণ করে বিশেষ কায়দায় সেটিকে কেবিনে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর জন্য প্যারিসে অবস্থানের সময়ে ভিত্তোরিয়া ওক্যাম্পোর সাহায্যেই তা সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। 

সুইডেন ভ্রমণের সময় সুইডেনের রাজা ছাড়াও নোবেলজয়ী লেখক ন্যুট হামসুন, পর্যটক লেখক স্বেন হেদিন প্রমুখের সাথে তাদের আলোচনা হয়। রবীন্দ্রনাথ নিজেও হেদিনের ভ্রমণকাহিনির বিশেষ ভক্ত ছিলেন। সুইডিশ সরকার রবি ঠাকুরকে মিলিটারি সমুদ্র বিমানে করে বার্লিন নিয়ে যেতে চাইলে হেদিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা ভেস্তে যায় এবং তারা ট্রেনে করে জার্মান গমন করেন; কারণ, হেদিন দেশপ্রেমিক হলেও সুইডিশ বিমানের ওপর ভরসা করতেন না!

এর মাঝে চেক দেশে এক মজার ঘটনা ঘটে, কবিকে পরিবহন করা গাড়িটি হঠাৎ যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে থেমে যায় এবং সেখানেই এক বাড়ির মালিক এসে গাড়ি সারাই করার সময়টুকু কবিকে তাঁর বাড়িতে অবস্থানে জন্য আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় তা ছিল ফটোসাংবাদিকদের তৈরি একটি ফাঁদ, তারা যথেচ্ছ ছবি তোলার পরে কবিকে রেহাই দেয়। যদিও রথী বলেছেন, সেই দিনের কয়েকটি ছিল রবীন্দ্রনাথের সেরা আলোকচিত্র। পশ্চিমের অনেক শহরেই লোকেরা ফিসফিস করে বলত, মানুষটা একেবারে আমাদের প্রফেটের মতো দেখতে। 

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত

১৯২৬ সালে মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইতালি সফরে যান রবি ঠাকুর, যা সারা বিশ্বে ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। স্পেশাল ট্রেনে করে তাদের নেপলস বন্দর থেকে রোমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে একের পর এক সাক্ষাৎকার চলতে থাকে। একপর্যায়ে রথী এবং প্রশান্ত মহালনবীশের মনে সন্দেহ জাগে যে গুরুদেব যা বলছেন, স্থানীয় খবরের কাগজে তা বিকৃতভাবে ছাপা হচ্ছে, ফলে ইতালির অন্যতম পণ্ডিত দার্শনিক Benedetto Croce-এর সাথে সংগোপনে কয়েক ঘণ্টা একাকী আলোচনা করেন গুরুদেব এবং ফ্যাসিস্ট মুসোলিনি সরকারের উদ্দেশ্য কিছুটা বুঝতেও সক্ষম হন। এমন সব রোমাঞ্চকর ভ্রমণের পর রথী আবার ফিরে আসেন এই বাংলায়, আত্রাই নদীর তীরে পতিসরে। এবং পরের অধ্যায়গুলোতে বিশেষভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেন তাঁর অতি বিখ্যাত বাবার মানসলোককে–

সাবলীলভাবেই তিনি স্বীকার করেছেন যে 'It is not easy to understand a man of genius', এবং রবীন্দ্রনাথের সূক্ষ্ম মনন বোঝা যে সহজ ছিল না, তা দেখিয়েছেন কিছু উদাহরণ দিয়ে। সেই সাথে এ-ও বুঝেছেন তা ভক্তকুল পরিবেষ্টিত অবস্থায় থাকলেও রবি ঠাকুর সব সময়ই বন্ধুর জন্য তৃষ্ণার্ত ছিলেন, যার সাথে তাঁর মন মেলে, যার কাছে মনের কথা বলা যায়, কিন্তু সেই সন্ধান তিনি আজীবন করেই গেছেন শুধু। 

একবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোট ছেলে রবিকে ডেকে তাঁর কবিতা শুনতে চান। সেদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রবির স্বকণ্ঠে আবৃত্তি শুনে তাঁর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে এবং মহর্ষি জানান, তিনি রাজা হলে রবিকে যথোপযুক্ত পুরস্কার দিতেন, কিন্তু তিনি যা, সেই হিসেবেই অন্তত এই কবিতাগুলো বই হিসেবে প্রকাশ করার দায়িত্ব নিতে চান। কবিতাগুলো নৈবেদ্য নামে প্রকাশিত হয় এবং এর বেশ কিছু গীতাঞ্জলীর ইংরেজি অনুবাদে ঠাঁই পায়। 

রথীর মতে, রবীন্দ্রনাথ কোনো সময়ই তাঁর সন্তানদের সাথে রুক্ষ ব্যবহার করতেন না। বিশেষ করে মারধরের কোনো বালাইই ছিল না। সারা জীবনে মাত্র ৩ বার তাঁর ওপর রাগ করেছিলেন রবি ঠাকুর–একবার শিশুকালে স্নান করা নিয়ে মায়ের সাথে নিত্য ঝামেলা করলে একবার রথীকে তিনি একটি আলমারির ওপরে বসিয়ে রাখেন, এতেই তাঁর শিক্ষা ঘটে! দ্বিতীয়বার শিলাইদহে দুর্গাপূজার সময় নৌকা নিয়ে পাবনা গিয়ে ফেরার পথে পথ হারিয়ে বিপদে পড়লে, পরে রাত ২টার পরে তারা ফিরতে সক্ষম হলে হারিকেনের আলোয় দেখেন নদীর তীরে অপেক্ষমাণ বাবার রাগী মুখ, যদিও তিনি রথীর সাথে একটি শব্দও বিনিময় করেননি। আরেকবার শান্তিনিকেতনের তরুণ শিক্ষকদের নিয়ে একটি পিকনিকের পর অনেক দেরি করে ভোরবেলা ফিরলে কেউই সেদিনের নির্ধারিত ক্লাস নিতে সক্ষম না হওয়ায় গুরুদেবকে অবস্থা ব্যাখ্যা করার জন্য রথী গেলে তিনি শুধু প্রশ্ন করেছিলেন, তোমাদের ভালো লেগেছে তো? সেই এক প্রশ্নেই শান্তিনিকেতনের শৃঙ্খলাভঙ্গ হওয়ায় যে তিনি কত বিরক্ত, তা ফুটে উঠেছিল।

শান্তিনিকেতন চালানোর জন্য স্ত্রীর গয়না ছাড়াও নিজের স্বর্ণের হাতঘড়ি চেইনসহ বিক্রি করতে বাধ্য হন রবি ঠাকুর। অনেক পরে ১৯১০ সালে এই ঘড়ির ক্রেতা মহিলা রথীর বিয়েতে উপহার দেন, যা রথীন্দ্রনাথ সারা জীবন সযত্নে রক্ষা করেছেন। 

মাত্র ৪১ বছর বয়সে পাঁচ সন্তানের জনক রবীন্দ্রনাথ বিপত্নীক হন, যার মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান ছিল মাত্র ৮ বছর বয়স্ক। কিন্তু কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণ কবির দিন শুরু হতো ভোর চারটায়, রথী অবাক হয়ে জানিয়েছেন কী করে রবীন্দ্রনাথ প্রায় একই সাথে কবিতা, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প লিখতে পারতেন। সকাল ছিল তার সবচেয়ে উৎফুল্ল সময়, যখন তিনি প্রায়ই অতিথিদের সাথে হাস্যরসে মেতে উঠতেন। যদিও তার পড়ার সময় ছিল রাত। বেশ রাত করে পড়তেন প্রতিদিনই। দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট ছিল তাঁর জন্য। এবং প্রায় কোনো কিছুই রবির চিন্তাজালকে ছিন্ন করতে সক্ষম হতো না, দেখা গেল কোনো অসমাপ্ত কবিতা বা গল্প ফেলে এক ঘণ্টা কোনো কাজ করে এসে ফের সেখান থেকেই শুরু করছেন। তাঁর বিশ্রামের একমাত্র লক্ষণ ছিল, যখন তিনি গান রচনা করে তাতে সুরারোপ করতেন। শেষ বয়সে চিত্রকর্ম আঁকাও একটা বিশ্রামের মতোই ছিল। 

বাবা রবির যে জিনিসটা পুত্র রথীকে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করেছে, তা হচ্ছে জীবনে এক মুহূর্তের জন্যও তিনি বড় হওয়া থামাননি। সব সময়ই নিত্যনতুন ধারণা প্রয়োগ করেছেন লেখাতে, এমনকি বেশ বৃদ্ধ বয়সেও। রবীন্দ্রনাথের এক কবিতায় আছে কবিকে তাঁর জীবনীগ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেই কথা স্মরণে রেখেই যেন রথী বইটির শেষ লাইনে বলেছেন, 'কবিতাগুলোই হচ্ছে তাঁর জীবনের গল্প এবং আমাকে এই বলেই শেষ করতে হচ্ছে যে তাঁর রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা ছিল তাঁরই যাপিত জীবন।'

Related Topics

টপ নিউজ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর / আত্মজীবনী / On the Edges of Time

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ট্রাম্প প্রশাসনে থাকাকালীন মাদকে বুঁদ ছিলেন ইলন মাস্ক, প্রতিদিন লাগত ২০ বড়ি কিটামিন
  • ২০৪০ সালের আগেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফোনের সব ছবি
  • উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকায় নির্মিত কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ
  • ট্রাম্প প্রশাসনকে ৫ লাখ অভিবাসীর বৈধ মর্যাদা বাতিলের অনুমতি দিল মার্কিন আদালত
  • ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা ট্রাম্পের
  • আয়া সোফিয়া: সাম্রাজ্যের পতনের পরও যেভাবে টিকে আছে ১৬০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা, কী এর রহস্য

Related News

  • কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবির ম্যুরালে কালি, ভাঙচুর
  • প্রাণ ফিরে পেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩২ বছরের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার কাছারি বাড়ি
  • হিটলারকে হত্যা পরিকল্পনার জন্য যখন রবীন্দ্রনাথের ‘নাতিকে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল
  • জল্লাদের আত্মজীবনী: পুঞ্জীভূত ভুল আর আক্ষেপে ভরপুর যে জীবন
  • রবীন্দ্রনাথ হয়ে পর্দায় আসছেন অনুপম খের

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প প্রশাসনে থাকাকালীন মাদকে বুঁদ ছিলেন ইলন মাস্ক, প্রতিদিন লাগত ২০ বড়ি কিটামিন

2
আন্তর্জাতিক

২০৪০ সালের আগেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফোনের সব ছবি

3
বাংলাদেশ

উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকায় নির্মিত কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ

4
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প প্রশাসনকে ৫ লাখ অভিবাসীর বৈধ মর্যাদা বাতিলের অনুমতি দিল মার্কিন আদালত

5
আন্তর্জাতিক

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা ট্রাম্পের

6
আন্তর্জাতিক

আয়া সোফিয়া: সাম্রাজ্যের পতনের পরও যেভাবে টিকে আছে ১৬০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা, কী এর রহস্য

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net