Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
June 27, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, JUNE 27, 2025
ভাষাশিক্ষা ও বানানে নৈরাজ্য

মতামত

মোরশেদ শফিউল হাসান
23 October, 2020, 01:00 pm
Last modified: 23 October, 2020, 01:06 pm

Related News

  • জাতীয় পরিবেশ পদক পেল ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট
  • সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য মনে করেন ৮২ শতাংশ নাগরিক: বিবিএস জরিপ
  • প্রাথমিকে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে, বৃত্তিও চালু হবে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
  • নাগরি লিপির উইকিপিডিয়া: হারিয়ে যাওয়া লিপির পুনর্জাগরণ?
  • ইয়াং গ্লোবাল লিডার্সের তালিকায় বাংলাদেশের শমী হাসান 

ভাষাশিক্ষা ও বানানে নৈরাজ্য

কোভিডের মতো একটা মহা দুর্যোগ যেভাবে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে জনসমক্ষে উলঙ্গ করে তুলে ধরেছে, তেমনিভাবে ভবিষ্যতে কোনো বড় বিপর্যয় হয়তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতাকেও বিশালভাবে প্রকটিত করে তুলবে।
মোরশেদ শফিউল হাসান
23 October, 2020, 01:00 pm
Last modified: 23 October, 2020, 01:06 pm
মোরশেদ শফিউল হাসান। প্রতিকৃতি: রুবাইয়াৎ সানিয়া

'সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনে'র সাংবিধানিক অঙ্গীকার থেকে আমরা মনে হয় একরকম সরেই এসেছি। অন্তত চারপাশের উদাহরণ থেকে তাই মনে হয়। আগে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে কিংবা সে উপলক্ষে আয়োজিত সভা-অনুষ্ঠানে হলেও, এ বিষয়ে যেসব মৌখিক কথাবার্তা শোনা যেত, তাও ইদানীং আর শোনা যায় না। বরং অনেকদিন ধরেই তথাকথিত বিশ্বায়ন, তথ্য প্রযুক্তির বিস্তার ইত্যাদির যুক্তি বা আসলে অজুহাতকে আমরা আমাদের পরিবর্তিত অবস্থানের পক্ষে বেশ সফলভাবেই প্রয়োগ করে আসছি। বলা যায় ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটা অঘোষিত জাতীয় ঐকমত্যেই পৌঁছে গেছি আমরা। 

সরকারি নথিপত্রের বাইরে বাংলার ব্যবহার আজকাল প্রায় নেই বললেই চলে। বলা যায় সর্বত্রই এখন বাংলার পিছুহটা অবস্থা। সরকারি কাজকর্মেও বাংলার ব্যবহার এখন যেভাবে ও যতটা আছে, ভবিষ্যতেও তেমন বা ততটা থাকবে, এমন আশা পোষণ করার মতো মানসিক জোর বাস্তব অবস্থাদৃষ্টে পাওয়া যায় না।

গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বাংলা শিক্ষার ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বা অরাজকতা এক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে আরো জটিল ও নাজুক করে তুলেছে। অরাজক পরিস্থিতিতে কেবল যে শৃঙ্খলার অভাব ঘটে তাই নয়, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রত্যেকেই তখন নিজেই রাজা হয়ে ওঠে। অধিকারী-অনধিকারী বলে কোনো ব্যাপার আর থাকে না। এমনকি অধিকারীজনও তখন সংকীর্ণ স্বার্থে বা স্রেফ অহমিকার বশে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে তিনি যখন বুঝতে পারেন যে তাকে এর জন্য কোথাও কোনোরকম জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে না। 

সত্যি কথা বলতে, ভাষাশিক্ষা ও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টির কাজটা তারাই করছে, যাদের এ ব্যাপারে মূল দায়িত্ব পালন করার কথা। আমাদের পাঠ্যপুস্তকগুলো গোড়াতে এবং পরবর্তী পর্যায়ে সংবাদপত্রসহ প্রচারমাধ্যমগুলো দেশের মানুষের ভাষাশিক্ষার এই ভিতটাকে নড়বড়ে করে দেওয়ার কাজটা করে চলেছে। বানানের ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে পরিদৃশ্যমান। আর পুরো জাতিকেই তা আজ এক হতবুদ্ধিকর অবস্থার মধ্যে এনে ফেলেছে। যা আগামীদিনে আমাদের নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের বাংলা ভাষার প্রতি বিমুখতার কারণ এবং অভিভাবকদের তরফে তাঁদের সন্তানদের বাংলা না শেখানোর পক্ষে একটা বড় অজুহাত হিসেবে দেখা দিতে পারে।

এখনই কি আমরা কমবেশি তেমন কথাবার্তা শুনি না?

প্রথমে যদি পাঠ্যপুস্তকের কথায় আসি, এ বিষয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই মনে হয় ভালো। মনে রাখতে হবে, এই পাঠ্যপুস্তক বিষয়টি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থারই অংশ। আর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মানের ক্রমাবনতি তো বহুবছর ধরেই আমাদের জাতীয় উদ্বেগের বিষয়। এদেশের সরকারি খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি খাত হলো শিক্ষা। কোভিডের মতো একটা মহা দুর্যোগ যেভাবে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে জনসমক্ষে উলঙ্গ করে তুলে ধরেছে, তেমনিভাবে ভবিষ্যতে কোনো বড় বিপর্যয় হয়তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতাকেও বিশালভাবে প্রকটিত করে তুলবে। কিন্তু ছোটবড় অনেক ঘটনায় আমরা প্রতিনিয়তই তো আমাদের শিক্ষার এই হাল-অবস্থা সম্পর্কে জানতে, বুঝতে পারছি। আমরা যারা ভুক্তভোগী- শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক কিংবা সাধারণ সংবাদপত্র পাঠক, বৃহত্তর অর্থে সচেতন দেশবাসী, মোটকথা সবাই। 

শিক্ষার মানোন্নয়নে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি বিষয় তার একটি হলো শিক্ষক, অপরটি পাঠ্যপুস্তক। আর এ দুটি ক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়, উপরন্তু ক্রমাবনতিশীল। এদেশে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটি যাঁরা করে থাকেন তাঁরাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি, একথা নিকট অতীতেও হয়তো সত্য ছিল না। কিন্তু বর্তমানের মতো মেধাহীনতার এতটা প্রতাপ আর কখনো হয়তো এ ক্ষেত্রটিকে আক্রান্ত করেনি। আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রের আর দশটি অঙ্গনের মতো এ ক্ষেত্রটিও অনেকদিন ধরে একরকম সিন্ডিকেট চক্রে বাঁধা পড়েছে। ন্যূনতম দায়িত্ববোধ, দূরদৃষ্টি ও সংবেদনশীলতা ছাড়াই দিনের পর দিন তাঁরা থোড় বড়ি খাড়া কায়দায় এই জাতীয় দায়িত্বটি পালন করে চলেছেন। আর তাঁদের অদক্ষতা, নানান খামখেয়ালি, অগ্রপশ্চাত বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত এবং পরিবর্তনের জন্যই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার অসহায় শিকার- অব্যাহত পরীক্ষা-নিরীক্ষার গিনিপিগ হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। বিভ্রান্তিতে পড়ছেন অভিভাবকরাও। ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবেই ঘটছে। সরকারি পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত কোনো একটি শ্রেণির বিগত কয়েক বছরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনায় যে কেউ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। 

শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম ও তার ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তকে এই যে বারবার পরিবর্তন, অনবরত পরীক্ষা-নিরীক্ষা- এর পেছনে প্রয়োজনবোধ বা সময়ের চাহিদা ততটা নয় যতটা হয়তো কাজ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বাড়তি আয়ের আগ্রহ ও অভ্যাস। দেশের ভেতরে সভা-সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠান, বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সমীক্ষা সফর ইত্যাদি নানা উপায়ে তাঁদের এই চাহিদার নিবৃত্তি হয়। বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহল এবং এই শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ও পাঠ্যপুস্তক প্রণেতাদের অনেকেরই ছেলেমেয়ে বা নাতিনাতনিরা তাঁদের প্রণীত এসব পাঠ্যপুস্তক পড়ে না, মানে তাদের পড়তে হয় না, আসলে বাংলা মাধ্যমেই পড়াশোনা করে না তারা। ফলে বলা যায় নির্বিকার চিত্তে দিনের পর দিন তাঁরা দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের মেধাবধের এই কাজটি করে যেতে পারছেন। তাঁদের বিবেক বা দায়িত্ববোধ কিংবা সংবেদনশীলতা এতে পীড়িত হয় না।

এক সময় খবরের কাগজকে লোকশিক্ষার একটা প্রধান মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হতো। হয়তো ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিকরণের প্রভাবেই বর্তমানে সংবাদপত্রের জন্য সেটাকে আর সেভাবে দায়িত্ব বলে মনে করা হয় না। কিন্তু দায়িত্ব না নেওয়া এবং দায়িত্বহীন আচরণ- এ দুয়ের মধ্যে নিশ্চয় খানিকটা পার্থক্য আছে। বিশেষ করে ভাষা ও বানানের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা মাৎস্যন্যায় প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে আমাদের সংবাদপত্রগুলো যে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে তা বলাই বাহুল্য।

কেউ এটা হয়তো করছে স্রেফ অজ্ঞানতা থেকে, আবার কেউ হয়তো নতুন বা অভিনব কিছু করার আনন্দে। কিন্তু অস্বীকার করবার সুযোগ নেই যে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যথেচ্ছাচারিতা আমাদের ভাষার ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বৃদ্ধির সহায়ক হচ্ছে। অধিকারী-অনধিকারী বোধ ছাড়া কিছু প্রচার মাধ্যমের নিজস্ব বানান বা ভাষা রীতি উদ্ভাবন ও প্রচলনও এক্ষেত্রে সংকটকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে। একজন লেখকের যেমন নিজস্ব রচনারীতি ও ভাষাশৈলী থাকে, তেমনি কোনো সংবাদপত্রও সংবাদ বা প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে নিজস্ব ভাষারীতি অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু বানানের ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাকরণ ও অভিধানের নিয়ম লঙ্ঘন করে যথেচ্ছাচারের অধিকার তাদের আছে কি?

আমাদের বাংলা একডেমির অভিধানসহ প্রচলিত সকল বাংলা অভিধানে যেখানে এখনও কিছু সর্বনাম পদে সম্মানার্থে চন্দ্রবিন্দু যুক্ত করার (যেমন 'তাঁর'/'তাঁদের', 'তাঁকে'/তাঁদেরকে') নিয়ম বহাল আছে, পাঠ্যবইয়েও তা অনুসরণ করা হয়, সেখানে কোনো কোনো পত্রিকা কোন অধিকারে বা যুক্তিতে  চন্দ্রবিন্দু বর্জনের নিয়ম চালু করেছেন, আমাদের ভাষাবিজ্ঞানী ও পণ্ডিতদের সে প্রশ্ন তোলা উচিত। কিন্তু নিজেদের লেখাতেও তাঁরা এই অনাচার অপ্রতিবাদে মেনে নিচ্ছেন। তারই পরিণতিতে পত্রপত্রিকা কিংবা টিভি পর্দায় সাধারণ বা বহুলদৃষ্ট ভাষাগত অশুদ্ধি বা বিশৃঙ্খলার প্রতিফলন আজ জ্ঞানমূলক ও সৃজনধর্মী বইপত্রেও অহরহ ঘটছে। অভিধান নির্ধারিত এবং পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহৃত বানানের সঙ্গে তৈরি হচ্ছে অবাঞ্ছিত বৈসাদৃশ্য বা ভিন্নতা। আর তাতে পাঠক ক্রমাগত বিভ্রান্ত হচ্ছেন। 

দু-একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাদে আমাদের প্রকাশকদের নিজস্ব কোনো প্রুফ-রিডার নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রুফ-রিডারদের দিয়ে ফর্মা হিসেবে মজুরি ভিত্তিতে তাঁরা বইয়ের প্রুফ সংশোধনের কাজটা করিয়ে থাকেন। আর পত্রিকার প্রুফ রিডাররা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর কিছু বাড়তি রোজগারের জন্য বইপাড়ার প্রুফ রিডিংয়ের কাজ করেন। প্রকাশকরাও তাঁদের দিক থেকে এটাকে লাভজনক বা সাশ্রয়ী বলে মনে করেন। বস্তুতপক্ষে দু-একশো শব্দের পুঁজি এবং পত্রিকার নিজস্ব ভাষা ও বানানরীতি (যেখানে তা আছে) সম্পর্কে ধারণা নিয়েই দৈনিক ও সাপ্তাহিকের প্রুফ রিডিংয়ের কাজটা চালিয়ে নেয়া যায়। কারণ সেখানে দিনের পর দিন ঘুরেফিরে প্রায় একইরকম কতগুলো শব্দ ও বাক্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সৃজনশীল ও মননধর্মী প্রকাশনার (আমি পুনরাবৃত্তি করছি, 'সৃজনশীল ও মননধর্মী প্রকাশনার', পাঠ্যপুস্তক বা নোট-গাইড বই নয়) ব্যাপারটা আলাদা। কয়েক হাজার শব্দ, শব্দ ও বাক্যের নানারকম ব্যবহার, স্থান বা ব্যবহার ভেদে একই শব্দের নানান ব্যঞ্জনা, লেখকের নিজস্ব ভাষাশৈলী বা স্টাইল, বৈচিত্র ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা এক্ষেত্রে জরুরি। আর তার জন্য যিনি প্রুফ দেখবেন তাঁর পাঠপ্রবণতা, সাহিত্যবোধ, অভিধান (একাধিক) ব্যবহারের আগ্রহ ও পারঙ্গমতা, সাধারণ জ্ঞান (জেনারেল নলেজ অর্থে) এবং সেই সঙ্গে যথেষ্টরকম কাণ্ডজ্ঞানেরও কোনো বিকল্প নেই।

এটা ঠিক যে বর্তমানে বইপাড়ায় প্রুফ রিডিংয়ের জন্য যে-হারে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, তাতে কোনো উচ্চশিক্ষিত (ডিগ্রির অর্থে নয়, বিদ্যা ও সচেতনতার অর্থে) লোক পারতপক্ষে এটাকে পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী হবেন না। বর্তমান বাজারে কারো পক্ষে তা করে জীবন ধারণ বা সংসার প্রতিপালন মোটেও সম্ভব নয়।

প্রকাশকরা যে এই সত্যটা জানেন না তা নয়। তাঁদের তরফেও এই কম পারিশ্রমিকের পক্ষে কিছু অকাট্য যুক্তি আছে। যদিও কাগজের দাম, ছাপা, বাঁধাই ইত্যাদি অন্য সব ব্যাপারে তাঁরা সেই যুক্তি প্রয়োগ করতে পারেন না। পত্রিকার পার্টটাইম প্রুফ রিডারদের না পেলে তাঁরা কী করতেন? প্রকাশনা গুটিয়ে ফেলতেন?

এমনিতে প্রুফ দেখা খুবই ক্লান্তিকর ও একঘেয়ে একটি কাজ। পরিশ্রমসাধ্য তো বটেই। সবচেয়ে বড় কথা, দীর্ঘক্ষণ একটানা এই কাজ করা যায় না। করলে সেক্ষেত্রে মনোযোগ ব্যাহত হয়, কাজের প্রতি সুবিচার করা যায় না, কমবেশি ত্রুটি ঘটে। দিনের একটা বড় অংশ পত্রিকায় প্রুফ দেখার দায়িত্ব পালন করার পর বাড়তি রোজগারের জন্য আবার বাসায় ফিরে একই কাজ করা! ক্লান্ত শরীরে কতটা মনোযোগ দিতে পারেন, সহজেই অনুমেয়। অনেকে নিজের নামে প্রুফ নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্য বা বাইরের কাউকে দিয়েও দেখিয়ে থাকেন বলে জানা যায়।

এমনিতেও প্রাথমিক বা আংশিক সম্পাদনার দায়িত্ব প্রুফ রিডারের কাজের মধ্যে পড়ে। আমাদের দেশে যেখানে বেশিরভাগ লেখক বা প্রকাশক অদ্যাবধি পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা বা কপি এডিটিংয়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন নন কিংবা এ ব্যাপারে অনাগ্রহী, সেখানে প্রুফ রিডারদের দায়িত্ব বলাই বাহুল্য খুব বেশি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমানে পত্রপত্রিকায় কর্মরত আমাদের বেশিরভাগ রিডারের এই দায়িত্ব পালনের মতো যোগ্যতা বা সক্ষমতা নেই। এ-ব্যাপারে দু-তিন যুগ আগের অবস্থার সঙ্গে আজকের বাস্তবতার তুলনা করা যাবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে ভাষা শিক্ষার দৈন্যদশা ও ক্রমাবনতি এর জন্য প্রথমত ও প্রধানত দায়ী, স্বীকার করতেই হবে। শিক্ষাজীবনের গোড়াতেই ভাষা শিক্ষার ভিতটাকে তা নড়বড়ে করে দিচ্ছে।

আগের দিনে অনেক বইয়েই এক বা একাধিক পৃষ্ঠার 'শুদ্ধিপত্র' দেখা যেত। বই ছাপার পর ভুল ধরা পড়লে লেখক/প্রকাশকরা এমন একটি শুদ্ধিপত্র দেওয়াকে তাঁদের কর্তব্য বলে মনে করতেন। এখন কি বইয়ে ভুল থাকে না? বরং অনেক বেশি পরিমাণেই থাকে। বানান ভুল, তথ্যের ভুল, শব্দ বা বাক্য গঠনের ভুল। কিন্তু শুদ্ধিপত্র দেওয়ার, এমনকি নির্দিষ্ট বা সম্ভাব্য ভুলের উল্লেখ করে ভূমিকায় তার জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রয়োজন কেউ আর বোধ করেন না। পাঠকের কাছে ভুল ধরিয়ে দেবার আবেদনও কেউ রাখেন না। সে কি এজন্য যে অনেক ক্ষেত্রে লোম বাছতে কম্বল উজাড়ের দশা হবে?

বই ছাপা হবার পর না লেখক না প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কেউ বইটি পড়ে দেখেন। সচেতন ও দায়িত্বশীল পাঠক এবং সমালোচকের অভাব তো একটা বড় কারণ বটেই, যা লেখক ও প্রকাশককে দায়িত্বহীন বা গাছাড়া হতে সাহায্য করে।

আমাদের দেশে যথার্থ অর্থে সমালোচনা সাহিত্য আজও গড়ে ওঠেনি। যাও বা ছিটেফোঁটা এককালে ছিল, তাও আর অবশিষ্ট নেই। পত্রপত্রিকায় বইয়ের আলোচনা মানেই এখন স্রেফ বন্ধুকৃত্য বা পারস্পরিক পিঠ চুলকানি। সেই সঙ্গে সচেতন ও দায়িত্বশীল পাঠকগোষ্ঠীর অনুপস্থিতিতে বইয়ের কি তথ্য কি ভাষা বা বানান কোনোরকম ভুল বা অসঙ্গতি নিয়েই প্রকাশক বা লেখককে কখনো জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় না।

গত কয়েক বছরে আমি বেশ কয়েকজন প্রকাশকের কাছে এ-বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তাঁদের প্রত্যেকেই বলেছেন, একমাত্র দামের বিষয়টি ('বইয়ের দাম খুব বেশি') ছাড়া আর কোনো বিষয়েই কোনো পাঠক চিঠি লিখে বা মেইলে, সাক্ষাতে কিংবা ফোনে তাঁদের সমালোচনা বা আপত্তির কথা বলেছেন, কোনো ভুলত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, এরকম অভিজ্ঞতা তাঁদের একেবারেই নেই। ভাবা যায়?

এরপরও যে আমাদের দেশে এখনও কিছু বইপত্র অনেকটা নির্ভুলভাবে বেরোয় তা সম্ভব হয় কিছু লেখকের অতিরিক্ত সচেতনতা, মনোযোগ এবং প্রুফ দেখার তুলনামূলক দক্ষতার গুণে। লেখকদের অনেকেই প্রুফ দেখতে জানেন না কিংবা এ ব্যাপারে সময় দিতে পারেন না। যাঁরাও দেখেন তাঁরাও সবাই এ বিষয়ে দক্ষ নন। সত্যি কথা বলতে কী, অনেক লেখকের বইয়ের শুদ্ধতা বা নির্ভুল ছাপা নিয়ে তেমন মাথাব্যথাও নেই। (বইমেলা উপলক্ষে বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য সামনে রেখে) বই বের হলেই হলো। সেক্ষেত্রে প্রকাশকরা, অন্তত যারা নিজ গাঁটের পয়সা খরচ করে বই বের করেন, তাঁদেরকে প্রকাশনা শিল্পের এই সংকটের দিকটিতে আজ মনোযোগ দিতে হবে। অন্য সব পেশা বা শিল্পের মতো নিজস্ব দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে।

ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখনও সচেতন ও উদ্যোগী না হলে সামনে সমূহ বিপদ। শুধু প্রকাশনা শিল্পের জন্যই নয়, দেশের বিদ্যা ও মনন চর্চার জন্যও। সে বিপর্যয় এড়াতে লেখক, প্রকাশক ও প্রকৃত পাঠক সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেমন নিজ নিজ অবস্থান থেকে, তেমনি যৌথভাবেও।

  • লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সম্পাদক
    morshed1953hasan@gmail.com

Related Topics

টপ নিউজ

শিক্ষা / ভাষা / বানান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ভারতীয় উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা পাক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু
  • শর্ত নিয়ে সমঝোতায় আসতে পারছে না ঢাকা-বেইজিং, বিলম্বিত হচ্ছে চীনের ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ
  • ‘আমরা ওদের থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায় করব': প্রতিরক্ষা ব্যয় ৫ শতাংশ না করায় স্পেনকে ট্রাম্পের হুমকি
  • পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা মিলল চিতাবাঘের
  • আয়াতুল্লাহ খামেনি কোথায়? সর্বোচ্চ নেতার অনুপস্থিতি নিয়ে ইরানে উদ্বেগ বাড়ছে
  • ঐকমত্য কমিশনের এনসিসি সংস্কার, নতুন কমিটিতে নেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি: আলী রীয়াজ

Related News

  • জাতীয় পরিবেশ পদক পেল ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট
  • সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য মনে করেন ৮২ শতাংশ নাগরিক: বিবিএস জরিপ
  • প্রাথমিকে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে, বৃত্তিও চালু হবে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
  • নাগরি লিপির উইকিপিডিয়া: হারিয়ে যাওয়া লিপির পুনর্জাগরণ?
  • ইয়াং গ্লোবাল লিডার্সের তালিকায় বাংলাদেশের শমী হাসান 

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ভারতীয় উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা পাক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু

2
অর্থনীতি

শর্ত নিয়ে সমঝোতায় আসতে পারছে না ঢাকা-বেইজিং, বিলম্বিত হচ্ছে চীনের ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ

3
আন্তর্জাতিক

‘আমরা ওদের থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায় করব': প্রতিরক্ষা ব্যয় ৫ শতাংশ না করায় স্পেনকে ট্রাম্পের হুমকি

4
বাংলাদেশ

পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা মিলল চিতাবাঘের

5
আন্তর্জাতিক

আয়াতুল্লাহ খামেনি কোথায়? সর্বোচ্চ নেতার অনুপস্থিতি নিয়ে ইরানে উদ্বেগ বাড়ছে

6
বাংলাদেশ

ঐকমত্য কমিশনের এনসিসি সংস্কার, নতুন কমিটিতে নেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি: আলী রীয়াজ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net