ভারতীয় উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা পাক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু

পাকিস্তানের পাখতুনখোয়ার ওয়াজিরিস্তানে গত মঙ্গলবার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামের সশস্ত্রগোষ্ঠির অতর্কিত হামলায় দেশটির এক মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং আরও ডজনখানেক নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছেন। এ হামলার ঘটনা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর জন্য এক বড় ধাক্কা।
নিহত মেজর মোইজ আব্বাস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের (এসএসজি) ৬ নম্বর কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন। তিনি দাবি করেন, ২০১৯ সালে ভারতের বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে তিনি বন্দি করেছিলেন। এ ঘটনায় তাকে সম্মানসূচক মেজর পদে পদান্নোতি দেওয়া হয়।
বুধবার তার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও শোক প্রকাশ করেন এবং 'ফিতনা-আল-খারিজ' (টিটিপি'র প্রতি পাকিস্তানের ব্যবহৃত একটি শব্দ) এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাকে প্রশংসা করেন।
২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বলাকোট বিমান হামলার পরদিন পাকিস্তানের সঙ্গে এক আকাশযুদ্ধে সেসময়ের ভারতের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত করেন। তবে তার নিজের বিমানও আঘাতপ্রাপ্ত হলে তিনি প্যারাস্যুটে নামতে বাধ্য হন এবং পাকিস্তানে অবতরণ করেন। তাকে তিন দিন ধরে বন্দি রেখে ১ মার্চ মুক্তি দেয় পাকিস্তান। পরে তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ যুদ্ধকালীন বীরত্বপদক 'বীর চক্র' প্রদান করা হয় এবং তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান।
৩৭ বছর বয়সী আব্বাস ছিলেন পাকিস্তানের চক্রালের একজন এসএসজি (স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ) কমান্ডো। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাকে অভিনন্দন বর্তমানকে কীভাবে আটক করা হয়েছিল এবং ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে তাকে কীভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেই বিবরণ দিতে দেখা যায়।
আব্বাসের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, আব্বাস সম্মুখসারিতে থেকে তার বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, 'তিনি সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন এবং দেশের আরেক সাহসী সন্তান ল্যান্স নায়েক জিবরান উল্লাহর সঙ্গে জীবন উৎসর্গ করেছেন তীব্র গোলাগুলির সময়।'
আইএসপিআর আরও দাবি করে, এই সংঘর্ষে তারা ১১ জন টিটিপি জঙ্গিকে হত্যা করেছে এবং তাদের 'ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী' বলে অভিহিত করে।
সূত্রগুলো জানায়, টিটিপি দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের কুররাম ও সারারোগা এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর দুটি পৃথক অতর্কিত হামলা চালায়। কুররামে আট সেনা নিহত ও ১০ জন আহত হন। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে অন্তত ছয় সেনা নিহত হয়। হামলার পর টিটিপি সদস্যরা সেনাবাহিনীর যানবাহন ধ্বংস করে এবং অস্ত্র লুট করে পালিয়ে যায়।
টিটিপি তাদের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা শীঘ্রই দুই হামলার ভিডিও প্রকাশ করবে। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আইএসপিআর বলেছে, 'অভিযানের সময় আমাদের বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে কার্যকরভাবে লড়াই চালায় এবং ১১ জন ভারত-সমর্থিত টিটিপিকে হত্যা করে, পাশাপাশি সাত জন আহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে।'