ট্রাম্প এখন কী চাইছেন!

উৎকণ্ঠার প্রহর পেরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে বিজয়ের পথে আরো এগিয়ে গেল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এক অদ্ভুত ব্যবস্থা, সমগ্র বিশ্বের কোন নির্বাচনে এর বিধান নেই অর্থাৎ একজন প্রার্থী দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নাও হতে পারেন।
যেমনটি ঘটেছিল গত ২০১৬ নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের কপালে এবং এই নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক বহুকালের। ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা থাকবে কী থাকবে না তা নিয়ে মতপার্থক্য মতপার্থক্য চলছে বহুকাল যাবৎ। মজার বিষয় হলো এবারে ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগে হিলারি ক্লিনটন একজন সদস্য ছিলেন। তিনি তার দায়িত্ব পালন করেই অর্থাৎ ইলেক্টোরাল কলেজে ভোটদান সম্পন্ন করেই দাবি তুলেছেন এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে।
কারণ খুবই প্রশ্ন বোধগম্য হিলারি ক্লিনটন বিগত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ইলেক্টোরাল ভোটের কারসাজিতে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তাকে ভোট দেওয়া সত্ত্বেও হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন নাই।
১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন সংবিধানের ১২তম সংশোধনীর মাধ্যমে ইলেক্টোরাল ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়। তারপর থেকেই নানান সময়ে এ বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনের আরো অনেকগুলো দিক আছে। এখন পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজ নির্বাচনের পরেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরাজয় স্বীকার করছেন না। যদিও আজ ঘটনা প্রবাহে অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগ অথবা বরখাস্ত। ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার সদস্য সংখ্যা জোড় অর্থাৎ ৫৩৮টি বিধায় এই ভোটাভুটি কখনো সমান-সমান হয়ে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কি হবে তাও এক মজার ব্যাপার।
এমন পরিস্থিতি যদিও আজ অবধি হয়নি, তবুও হলে পরে আর এক নতুন মাত্রা যোগ হবে নির্বাচন ফলাফল প্রকাশ পেতে। আর মাত্র ২৫ দিন বাকি থাকা সত্ত্বেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী কারণে পরাজয় স্বীকার করছেন না তা এখন পরিষ্কার নয়। যদিও ইতোমধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল থেকে কিছু কংগ্রেস সদস্য দল ত্যাগ করেছেন এবং আজ কিছুক্ষণ পরেই জর্জিয়ার দুটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নিয়ম অনুসারে।
প্রদত্ত ভোটের ন্যূনতম দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পার্থক্য হলে ভোট পুনঃগণনা হয়। জর্জিয়ার এই দুইটি সেটের নির্বাচন সেই কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন সিনেট কাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে তা নির্ধারণ হওয়ার জন্য। এই দুটি আসন যদি কোনভাবে ডেমোক্রেটরা দল জয়লাভ করতে পারে তাহলে সিনেটের আসনসংখ্যা সমানভাবে বিভক্ত হবে। যদিও মার্কিন সিনেটের দুজন স্বতন্ত্র সদস্য আছেন। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন বহুল আলোচিত বার্নি স্যান্ডার্স।
বার্নি সিনেটে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে।
বর্তমান সিনেটের আসন ১০০টি। এরমধ্যে রিপাবলিকান দলের আর ৫০টি আর ডেমোক্রেটিক পার্টির ৪৬টি। তবে তাদের সঙ্গে আছে দুই স্বতন্ত্র সিনেটর। সেকারণে জর্জিয়ার এই দুটি সিট হাতে গেলে সিনেট এবং কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্রেটিক পার্টির হাতে চলে যাবে। সিনেটে যদি তাই হয়, তবে ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস কাস্টিং ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। আজকের এই সিনেট নির্বাচন কেন্দ্র করেই সম্ভবত ট্রাম্প এবং তার নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ। জোর করে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন। দ্বিতীয় যে বিষয়টি সামনে আসছে তা হচ্ছে চার বছর পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দল রিপাবলিকান পার্টি তে হয়তো নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইবেন।
তাই ট্রাম্প চাচ্ছেন দলের সদস্যরা বিশ্বাস করুক যে তাকে ভোট জালিয়াতি করে পরাজিত করা হয়েছে। এ দুইটি বিধান ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের অব্যাহতভাবে নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করার আর কোন কারণ নাই।
সুপ্রিমকোর্টে দুইটি মামলাসহ রাজ্যের আদালতে করা প্রায় সবকটি মামলায় পরাজিত হওয়ার পরও ট্রাম্পের নির্বাচনী ফলাফল মানতে না চাওয়ার আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। সর্বশেষ টেক্সাস অ্যাটর্নি জেনারেল যে যুক্তি দেখিয়ে কোর্ট সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তা ছিল; চারটি রাজ্য অর্থাৎ পেনসেলভানিয়া, জর্জিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিন এই চারটি রাজ্য ভোট গণনায় অবৈধ পথ অনুসরণ করা হয়েছে। ৯ সদস্যের সুপ্রিমকোর্ট বিচারকদের মধ্যে ছয়জন রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত সদস্য থাকা সত্ত্বেও আদালত সরাসরি সেই মামলা নাকচ করে দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেলের এই মামলা করার কোন অধিকার নাই। তার সঙ্গে আরও প্রায় ১৬টি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল যোগদান করেছিল, সঙ্গে ছিল প্রায় ১০৬ জন কংগ্রেস সদস্য। তারপরও মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে।
এই সমস্ত ঘটনার পরে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, আগামী নির্বাচনে নিজের প্রার্থীপদ টিকিয়ে রাখার জন্যই ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব কিছু করছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুকালের অর্জিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নানান দুর্বলতা সত্ত্বেও একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে একথাও মানতে হবে পৃথিবীর সকল সভ্য সমাজকে!
- লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক