যতদিন তোমরা আছো, ততদিন আমি আছি: জন্মদিনে জেমস

নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। উপমহাদেশে 'জেমস' নামেই সুপরিচিত তিনি। জেমস নামটি শুনলেই আমাদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে ক্ষ্যাপাটে এক রকস্টারের অবয়ব, যার গান মুগ্ধ করে দেশের কোটি মানুষকে, কেড়ে নেয় হাজারও তরুণ-তরুণীর ঘুম!
আজ (শনিবার) বাংলাদেশের রক মিউজিক ইতিহাসের সেই জীবন্ত কিংবদন্তি জেমসের জন্মদিন। ৫৬ পেরিয়ে আজ ৫৭ বছরে পা রাখলেন। কারও কাছে তিনি অদ্বিতীয়, আবার কারও কাছে 'গুরু'।
জেমসের জন্মদিন নিয়ে সবসময়ই বাড়তি আগ্রহ থাকে ভক্তদের। অন্যান্য বছরগুলোতে কেক কেটে জন্মদিন পালন করতে দেখা গেছে তাকে। কিন্তু এবার একান্তেই দিনটি পার করছেন। তবে জন্মদিনে এক লাইনে হলেও ভক্তদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন নগর বাউল। তিনি বলেছেন, 'যতদিন তোমরা আছো, ততদিন আমি আছি।'

১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নঁওগা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলা রক গানের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তবে তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীকালে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গান জেমসের পছন্দের হলেও তার পরিবার তা পছন্দ করতো না। তাই গানের নেশায়, কিশোর বয়সেই বাবার ওপর অভিমান করে ঘর ছাড়েন। এরপর চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং নামক একটি বোর্ডিংয়ে তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড দল 'ফিলিংস'। জেমস নিজেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকাল ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' প্রকাশ পায়। কিন্তু সে সময় শ্রোতাদের গান শোনার অভিরুচি খানিকটা ভিন্ন মেজাজের হওয়ায় সেটি জনপ্রিয়তা পায়নি। পরে ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার পর পরিচিতি পেতে শুরু করেন জেমস।
এর চার বছর পর ১৯৯৩ সালে 'জেল থেকে বলছি' অ্যালবাম বের করেন জেমস। ওই এক অ্যালবামেই আকাশচুম্বী সাফল্য পান তিনি।

১৯৯৬ সালে 'নগর বাউল' এবং ১৯৯৮ সালে 'লেইস ফিতা লেইস' মুক্তি পায়। ১৯৯৯ সালে 'কালেকশন অব ফিলিংস' অ্যালবামগুলো ফিলিংস ব্যান্ড থেকে বের হয়। পরবর্তীকালে ব্যান্ডের নাম বদলে রাখেন 'নগর বাউল'।
বলাই বাহুল্য, জেমসের দীর্ঘ ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। তার অন্যান্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে, নগর বাউল থেকে 'দুষ্টু ছেলের দল', 'বিজলি'। একক অ্যালবাম 'পালাবি কোথায়', 'দুঃখিনী দুঃখ করোনা', 'ঠিক আছে বন্ধু', 'আমি তোমাদেরই লোক', 'জনতা এক্সপ্রেস', 'তুফান', 'কাল যমুনা'।
দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করেছেন জেমস। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও বেশ জনপ্রিয় তিনি। বলিউডে তার গাওয়া 'ভিগি ভিগি' (গ্যাংস্টার), 'বেবাসি' (ওয়ার্নিং), 'আলবিদা' ও 'রিশতে' (লাইফ ইন অ্যা মেট্রো) গানগুলো এখনো বেশ জনপ্রিয়।

দেশীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের ক্ষেত্রেও সফলতা পেয়েছেন জেমস। তার বেশকিছু গান চলচ্চিত্রে সুপারহিট হয়ে আছে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
দীর্ঘদিন ধরেই জেমসের একক কিংবা তার ব্যান্ডের কোনো নতুন অ্যালবাম প্রকাশ পাচ্ছে না। তবু নগর বাউল বাংলা রক গানকে যা দিয়েছেন, তা আজও নতুন প্রজন্মকে শিহরিত করে; আর পুরনো প্রজন্মকে দেয় নস্টালজিয়া। জেমসের গানের তালে আজও উল্লাসে চিৎকার করে জনতা, সুর মেলায় তার কণ্ঠে।