আসলেই কি জীবন্ত বাদুড়ের মাথা কামড়ে দিয়েছিলেন ওজি অসবোর্ন?

রক জগতের উন্মত্ত ইতিহাসে অনেকেই অদ্ভুত আচরণ করেছেন, তবে সীমা অতিক্রমে যিনি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন, তিনি হলেন জন মাইকেল ওসবার্ন—ওজি ওসবার্ন। 'প্রিন্স অব ডার্কনেস' নামে খ্যাত এই হেভি মেটাল তারকা ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।
ওজির এই ডাকনাম কিন্তু কাকতালীয় নয়। ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের হয়ে পারফর্ম করার সময় তার কালো পোশাক, গা ছমছমে উপস্থিতি ও অলৌকিকতা ঘেরা গানের কথা তাকে দিয়েছিল এক রহস্যময় সত্তা। কিন্তু ১৯৮২ সালের ২০ জানুয়ারি যা ঘটেছিল, তা অতিরঞ্জিত ওজি-ভাবনারও এক প্রান্ত ছাড়িয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটে ডে মইনস শহরের ভেটেরান্স মেমোরিয়াল অডিটোরিয়ামে। সেদিন রাতে মঞ্চে একটি ছোট, কালো বস্তু ছুড়ে মারা হয়। ওজি ভেবেছিলেন ওটা হ্যালোইনের খেলনা বাদুড়। তিনি সেটি মুখে তুলে কামড়ে ফেলেন।
নিজের আত্মজীবনী 'আই এম ওজি' বইয়ে তিনি লিখেছেন, 'তখনই কিছু একটা অস্বাভাবিক মনে হলো, খুবই অস্বাভাবিক। মুখে একটা গরম, আঠালো তরল অনুভব করলাম… তারপর হঠাৎ মুখে থাকা মাথাটা কেঁপে উঠল।'
তিনি বলেছিলেন, 'কারো ছোড়া একটি বাদুড় ছিল ওটা। আমি ভেবেছিলাম এটা রাবারের। মুখে তুলেই কামড় দিলাম।' এবং তারপর: 'ও না! এটা তো আসল বাদুড়!'
তবে ঘটনার স্মৃতি নিয়ে তার বিবরণ বিভিন্ন সময়ে পাল্টেছে।
২০০৬ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাদুড়টির গলায় দড়ি ছিল, তাই তিনি সেটিকে মৃত মনে করেছিলেন। স্ত্রী শ্যারনের 'না' বলা দেখেই তিনি বুঝেছিলেন যে ওটা একটা মৃত আসল বাদুড়।
পরে ডে মইনস রেজিস্টারের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্ক নিল নামের এক ১৭ বছর বয়সী কিশোর দাবি করে যে সে-ই বাদুড়টি কনসার্টে এনেছিল। তার ছোট ভাই দুই সপ্তাহ আগে সেটি বাড়িতে এনেছিল, কিন্তু বাদুড়টি বাঁচেনি। কনসার্টের সময় এটি ছিল বেশ কয়েকদিনের মৃত।

অতএব, রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের 'রকের সবচেয়ে বন্য কিংবদন্তি'র তালিকায় ২ নম্বরে থাকা এই ঘটনা হয়তো সত্যি, তবে খানিকটা অতিরঞ্জিতও। সবাই একমত যে বাদুড়টি ওজির মুখে গিয়েছিল। তবে তখন সেটি জীবিত ছিল না বলেই মনে হয়—যদিও ওজি কখনো কখনো ভিন্ন কথাও বলেছেন।
তবে, ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। ঠিক এই ঘটনার নয় মাস আগেই, লস অ্যাঞ্জেলেসে এক কবুতর কামড়ে দিয়েছিলেন ওজি!
সিবিএস রেকর্ড কোম্পানির এক বৈঠকে ঘটনাটি ঘটে। মূলত শান্তির প্রতীক হিসেবে তিনটি জীবিত কবুতর নিয়ে এক প্রতীকী আয়োজন ছিল। পরিকল্পনা ছিল—ওজি এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার পর কবুতরগুলো আকাশে উড়িয়ে দেবেন, যা হবে এক শান্তির বার্তা।
কিন্তু যা ঘটেছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
ওজি ওসবার্ন সেদিন সকাল থেকেই ব্র্যান্ডি পান করছিলেন। পরে রক জীবনীকার মিক ওয়ালকে তিনি বলেন, সভায় উপস্থিত এক পিআর [জনসংযোগ কর্মকর্তা] নারী তাকে প্রচণ্ড বিরক্ত করছিলেন।
ওয়ালের বই ব্ল্যাক সাবাথ: সিমটমস অব দ্য ইউনিভার্স-এ ওজির বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি 'একটি কবুতর বের করে তার মাথা কামড়ে ফেলেন, ওই নারীকে চুপ করানোর জন্য।'
এরপর তিনি আরেকটি কবুতরকে একই পরিণতির শিকার করেন—মাথা কামড়ে নিয়ে সেটি টেবিলেই থুতু ফেলে দেন।

ওজি বলেন, 'তারপরই তারা আমাকে বের করে দেয়। বলেছিল, আমি যেন আর কখনো সিবিএসের সঙ্গে কাজ না করি।'
এই ঘটনা রকের ইতিহাসে একটি প্রতীকী টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে—যেখানে 'শান্তির প্রতীক'ও রেহাই পায়নি ওজির রক উন্মাদনার সামনে।
কবুতর কাণ্ড নিয়েও ওজি ওসবার্ন একাধিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যেমনটা তিনি করেছিলেন বাদুড় কাণ্ড নিয়েও। ঘটনার কয়েক মাস পর 'সাউন্ডস' ম্যাগাজিনের গ্যারি বুশেলের কাছে তিনি জানান আরেক সংস্করণ।
ওজি বলেন, 'আসলে পাখিটা আগেই মারা গিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল সেখানেই সেটাকে মুক্ত করে দেওয়া। কিন্তু যেহেতু মারা গেছে, ফেলে না দিয়ে আমি ওটার মাথা কামড়ে ফেলি।'
আর এরপর? 'ওদের মুখগুলো দেখার মতো ছিল। সবার মুখ সাদা হয়ে গিয়েছিল, কেউ একটা কথাও বলেনি।'
অবশ্য ওজি তখন এমন এক রকস্টার—যার নেশা ও উন্মত্ত আচরণ এতটাই মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল যে, ব্ল্যাক সাবাথ পর্যন্ত তাকে ব্যান্ড থেকে বাদ দেয়।
কিন্তু সেসব বিতর্কিত কাজ—হোক তা বাদুড় মুখে তোলা বা কবুতরের মাথা কামড়ানো—তার প্রতি বিস্ময়, বিতর্ক এবং কুখ্যাতি সবই বাড়িয়েছে অনেক গুণে। সেগুলো ওজিকে নিয়ে গিয়েছিল রক অ্যান্ড রোলের এক অন্য উচ্চতায়।
সব সময় হয়তো তিনি নিজে সেই ঘটনাগুলোর নির্ভুল স্মৃতিচারণ করেননি, অনেক সময় হয়তো কিছুটা অতিরঞ্জনও করেছেন—তবু তা কাজ করেছে তার নিজ স্বত্তা বা ব্র্যান্ড তৈরিতে।
এই কারণেই ওজি ওসবার্ন রয়ে গেলেন 'রকের রিংমাস্টার' হিসেবে—একটি উপাধি, যা কেবল তাকেই মানায়, এবং যা তিনি বহন করেছেন নিজের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন