সুরমার পানি কমলেও বেড়েছে কুশিয়ারার পানি, স্বেচ্ছাসেবীদের ত্রাণই ভরসা বন্যার্তদের

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেশে ঘটে যাওয়া বন্যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় এ র্পযন্ত ২৭টি বন্যা-কবলতি জেলার ৩৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারার পানি বাড়তে থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবতি হচ্ছে। প্রতিকূল এই পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে এই অঞ্চলের মানুষ।
সোমবার পর্যন্ত সিলেট নগরীর ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। এছাড়া, সিলেটের অন্যান্য জেলায় অবস্থিত ৪৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আরো ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বন্যার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় সরকারি ত্রাণই পৌঁছেনি। বেসরকারি ও ব্যাক্তি উদ্যোগে বিতরণ করা ত্রাণই ভরসা বানভাসিদের।
বন্যায় ৩৬ মৃত্যু
মেয়ের বাড়িতে বাড়িতে পানি উঠেছে। মেয়েকে দেখতে শুক্রবার তার বাড়িতে গিয়েছিলেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের কলাগ্রামের নাজমুন্নেসা। সাথে ছিলেন তার ছেলে আব্দুর রহমান। মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে পানিতে ছেলেসহ তলিয়ে যান নাজমুন্নেসা।
মঙ্গলবার সকালে ঐ এলাকায় ভেসে উঠে তাদের লাশ। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
কেবল এ দুজনই নয়, বন্যায় সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে স্থানীয়দের হিসেবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, "মৃতদের বেশিরভাগই পানিতে তলিয়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।"
বুধবার সকালে জৈন্তাপুর মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে এই দুইজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পানিবন্দি ছিলেন অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য জানা যাচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, "দু একটি মৃত্যুর খবর আমি পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাইনি।"
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক বলেন, "বন্যায় এ পর্যন্ত আমার এলাকায় তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও দুজন পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। এছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়া একজন এখনও নিখোঁজ আছেন।"
এই তিনজনের বাইরে সদর উপজেলায় আরও তিনজনের মৃত্যুও তথ্য জানিয়ছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ। তিনি বলেন, পানিতে তলিয়ে উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা। তাদের বাড়ি ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে।
তবে এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি বলে জানিয়েছেন ইউএনও নুসরাত।
বন্যায় সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় প্রায় পুরোটাই তলিয়ে যায়। এষনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে কোম্পানীগঞ্জ। বেশিরভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও ফেরেনি।
তবে কোম্পানীগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি জানিয়ে ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য পাইনি। অনেকে মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।"
এদিকে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হেলিকপ্টার থেকে বিমান বাহিনীর দেয়া ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত একজনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বিপ্লব মিয়া নামের ওই ব্যক্তি সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান কবির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার তাহিরপুরে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া ত্রাণসামগ্রী বিপ্লবের পিঠের উপর পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেেক্স ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে সিলেটের এক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পানি বাড়ছে কুশিয়ারায়
সিলেটে সুরমা নদীর পানি কমেছে। অপর দিকে বেড়েই চলছে কুশিয়ারার পানি। ফলে আগেও প্লাবিত হওয়া এলাকায় পানি কমলেও কুশিয়ারার পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
বাঁধ ভেঙে ও উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।
তবে সিলেট নগরের পানি কমা অব্যাহত আছে। পানি কমছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট ও বিশ্বনাথ উপজেলায়।
সুরমা ছাড়াও সিলেটের ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর পানি কমছে। ফলে এসব নদী তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, মেঘালয়ের ঢলে সুরমা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বাড়ে এবং আসাম থেকে ঢল নামলে কুশিয়ারার পানি বাড়ে। এখন ঢল নামছে আসাম থেকে। তাই কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে এবং ওই নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
পাউবো সুত্রে জানা যায়, আগে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল ধীরগতিতে। কিন্তু গত রোববার থেকে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়তে শুরু করে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সবচেয়ে অবনতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে- সোমবার পর্যন্ত জকিগঞ্জ উপজেলায় নদীর ৩৯টি বাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি প্রবেশ করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সুলতানপুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর, সদর ইউনিয়নের রারাই, বীরশ্রীর সুপ্রাকান্দি, কাজলসারের বড়বন্দ এলাকায়। ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও তীরবর্তী এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বানের পানিতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরসহ ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে ও উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, সুরমা তীরবর্তী সিলেট নগরী, সদর, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিলেট নগরীর উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে এখনও জেলার বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
মানুষের পাশে মানুষ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর ডিগ্রী কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন রাশিদা বেগম। ছয়দিন ধরে আছেন এখানে। তবে এরমধ্যে মাত্র একদিন কিছু ত্রাণসামগ্রী পেয়েছিলেন জানিয়ে রাশেদা বলেন, একদিনের সামান্য খাবারে ছয়দিন চলে কিভাবে। তাই এই কয়দিন খেয়ে না খেয়ে ছিলাম।
নিজেদের উদ্যোগে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন সিলেটের কয়েবজন তরুণ। সালুটিকর ডিগ্রী কলেজে আশ্রিতদের খাবার সংকটের খবর পৌঁছে তাদের কাছে। মঙ্গলবার দুপুরে তারা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যান সেখানে।
ত্রাণ বিতরণকারী দলের সদস্য বিমান তালুকদার বলেন, "আমরা গত তিনদিন ধরে নিজেরা চাঁদা তুলে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করছি। প্রতিদিন তিনশ মানুষকে রান্না করা খাবার ও আরও দুইশ' মানুষকে শুকনা খাবার প্রদান করেছি।"
বিমান বলেন, ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখছি, মানুষ প্রায় অভুক্ত অবস্থায় আছে। বিশেষত দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ যাচ্ছে না।
সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। প্রশাসন থেকে র্পযাপ্ত ত্রাণ রয়েছে জানানো হলেও ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন তারা ত্রাণ পাননি। এ অবস্থায় দুর্গত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। সিলেটের বাইরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষজন প্রতিদিন ত্রাণ নিয়ে সিলেট আসছেন। বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানও ত্রাণ বিতরণ করছে। ব্যক্তি আর বেসরকারি উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণই এখন পর্যন্ত ভরসা দুর্গতদের।
বন্যার শুরু থেকে পানিবন্দিদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন অনলাইন এক্টিভিস্ট বিনয় ভদ্র। এখন বন্ধদের নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি। বিনয় বলেন, "আজকে আমরা কোম্পানীগঞ্জের খালিগাওয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এখানে আগে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেনি।"
তিনি বলেন, "এমন অনেককে আমরা পেয়েছি যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল নন, কিন্তু পানিবন্দি থাকায় তাদের ঘরেও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারাও বাধ্য হয়ে ত্রাণ নিচ্ছেন।"
সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের পাখিমোড়া গ্রামের জমসেদ আলী। সাতদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি তিনি। ত্রাণ নিয়ে আসেননি কোনো জনপ্রতিনিধিও। তবে কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে সহায়তা দিয়েছে বলে জানান জমসেদ।
নগরের বরইকান্দি এলাকার একটি কলোনীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলামও ছয়দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত দেখতেও আসেনি আমাদের।
তবে নগরে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, "আমরা সরকার থেকে ৩০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি। এগুলো বিতরণ করছি। এছাড়া চিড়া, গুড়, রুটি ও পানি বিতরণ করছি। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, "বন্যায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাদের জন্য আরও বেশি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য ৬০ মেট্রিক টন চালের চাহিদা আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করেছি।"
ত্রাণের কোন সংকট নেই জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, "নৌকা সঙ্কটের কারণে প্রথমে ত্রাণ বিতরণে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এখন সে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি।"
তিনি বলেন, "বিভিন্ন মানুষজনও এই দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যা আমাদেও কাজকে আরও সহজ করেছে।"
- এই প্রতিবেদন তৈরিতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।