ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কাকরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এদিকে, তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। এজন্য গত ১৪ মে থেকে রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও বাস্তবায়ন।
এছাড়াও তারা ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও তুলেছেন।
রাত ১০টা

কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান অব্যাহত আছে।
রাত ৯টা ০৯ মিনিট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি লেখেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিগুলোর ন্যয্যতা বিচার করবেন শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়। আরো যুক্ত থাকবেন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জোরালো ভূমিকা রাখা ও সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দেয়া জবি শিক্ষার্থীদের দাবির একটি ফলপ্রসূ সমাধানে আসতে আমি ভিসি স্যার ও অন্যান্যদের সাথে বসেছিলাম।
আরও বলেন, গত পরশু রাত্রে যখন এসব দাবি নিয়ে জবি থেকে আমাকে জানানো হয়, তখন তাদেরকে আমি গতকাল রাত ৯ টায় আমার বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু, গতকাল সকালে তারা আন্দোলনে নামেন এবং যমুনার কাছাকাছি পৌঁছে যান। কাল দুপুর থেকেই ভিসি স্যারের সাথে আমি নিয়মিত যোগাযোগ করেছিলাম। শেষপর্যন্ত রাতে এক ঘন্টা ধরে তিনটা টকিং পয়েন্ট নির্ধারণ করে আমি ভিসি স্যার ও শিক্ষকদের সাথে কাকরাইল মোড়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, সেখানে মিডিয়ার লোকজন শিক্ষার্থীদের থেকে ৫০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, আমি ভিসি স্যারকে বললাম, আমি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে কথা বলব। সেখানে যাওয়ার পর একটা গ্রুপ শ্লোগান দেয়। আমি বিব্রত না হয়ে, নিজের দায়িত্ব পালনে কথা বলা শুরু করি। পূর্বনির্ধারিত টকিং পয়েন্ট অনুযায়ী পুলিশের বাড়াবাড়ি অথবা স্ব-উদ্যোগে 'উসকানিমূলক' কিছু করলে ক্ষমাপ্রার্থনা ও বিভাগীয় তদন্তের কথা বলতে গিয়েছিলাম। তখনই বোতল নিক্ষেপ করেন একজন শিক্ষার্থী। ঐ শিক্ষার্থী কেন এবং কার মদদে এ অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করলেন, তা আশা করি প্রশাসন দ্রুতই খতিয়ে দেখবে।
এই উপদেষ্টা বলেন, তারপর আমি হতাশা নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন স্যারদের সাথে আমার হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা ব্যক্ত করি। স্যাররাও এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহব্যাপী সোশাল মিডিয়ায় একটি দলের নিয়মিত আক্রমণ ও হত্যার হুমকির কারণে ন্যায্যভাবেই অনুমান করেছিলাম এটা হুমকিদাতা দলের কাজ হতে পারে। আমার হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা কাউকে আঘাত করলে আমি আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আমার বক্তব্য ছিল, এ আক্রমণের ফলে ন্যায্য দাবির আন্দোলন বিতর্কিত হল। আমি চেয়েছিলাম, জবির আবাসন সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান হয়।
পরবর্তীতে ৫০ মিটার দূরত্বে আমি আরেকটা সাংবাদিক সম্মেলন করি। আমার অফিসিয়াল বক্তব্য, আন্দোলনের সাথে একাত্মতা, দাবিপূরণের রোডম্যাপ ও পুলিশি হামলার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস সেখানে আপনারা দেখতে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, জবির শিক্ষার্থী ও শ্রদ্বেয় শিক্ষকদের উপর পুলিশি হামলার নিন্দা আমি আবারও জানাচ্ছি। জবি'র শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবি ন্যায্য।আশা করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান মিলে দ্রুতই একটি যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ সমাধানে আসবেন।
মাহফুজ আলম বলেন, জবি থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দুইজন শিক্ষার্থী ভাই শহিদ হয়েছেন এবং অনেক ভাই-বোন আহত হয়েছেন। জবি'র ভাইবোনদের বলব, আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই আমি গিয়েছিলাম। জুলাই আমাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি করেছে। আশা করি, এ বন্ধন কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডের জন্য ছিন্ন হবে না। আপনাদের যেকোন প্রয়োজনে, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আপনারা আমাকে সাথে পাবেন।
পুনশ্চ: গতকাল রাতে এসেই আমি ডিএমপি কমিশনারকে বলে দিয়েছিলাম, যাতে জোরপূর্বক জবি শিক্ষার্থীদের সরানো না হয়। তাদের উপর যেন কোনরকম আক্রমণ না চালানো হয়। সবার সুমতি হোক। ভুল হলে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা এগুতে চাই।
রাত ৮টা ২০ মিনিট
রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থানরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট

গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি অবিলম্বে মেনে নিন। জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পরও শিক্ষার্থীদের এখনও বাসস্থানের দাবিতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে—এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।'
জুনায়েদ সরকারকে দ্রুত দাবি পূরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে বিজয়ের বার্তা নিয়ে ঘরে ফেরা।'
সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিট

কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এসময় শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এছাড়াও তারা রাস্তার দুই পাশে সাড়ি বেধে বসে আছেন, কেউবা রাস্তার মাঝখানে বসে গল্প করছেন।
সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মগবাজার থেকে কাকরাইল রোড ক্লিয়ার কোনো যানজট নেই। স্বাভাবিক। কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড।


সন্ধ্যা ৭টা ২ মিনিট
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসিত কাকরাইলে আন্দোলনস্থলে যান। এসময় তিনি সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এসেছেন বলে জানান। এসময় আরও কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।
সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিট
রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ফারুকের কাছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এদিকে, রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিট
কাকরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এর প্রবেশ গেট এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সামনের এলাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন দাবি আদায়ের কর্মসূচির নামে হঠাৎ করে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের পুনরায় অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিকেল ৪টা
১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ (১৫ মে) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর এই ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন।

ঘোষণার সময় তিনি বলেন, 'আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছি। কিন্তু গতকাল শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে পুলিশ যেভাবে হামলা করেছে, তা সম্পূর্ণ অরাজকতা ও অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি।
জাতীয় দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসময় এই শিক্ষক বলেন, 'দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন চলবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় ভালো হবে না। চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।'
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়', 'বাজেট কাটছাঁট চলবে না', 'হামলার বিচার চাই প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।

জবি শিক্ষার্থীরা এর আগে গত মঙ্গলবার (১৩ মে) তাদের তিন দফা দাবি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ইউজিসির প্রতিক্রিয়ায় তারা সন্তুষ্ট নন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার (১৪ মে) লংমার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গতকাল (১৪ মে) গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। লং মার্চটি গুলিস্তান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানিও ছোড়া হয়।
জবি শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই সংঘর্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

এরপর সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা কাকরাইল এলাকা অবরোধ করেন। গতকাল রাতভর জবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে রাস্তায় অবস্থান করেন এবং সকালে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন।
আজ (১৫ মে) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় কাকরাইল এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিল।

এদিকে, অবরোধের কারণে কাকরাইল এলাকা এবং এর আশপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখায় কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেড়েছে, কারণ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'কথা বলো যমুনা, খালি হাতে যাবো না'; 'যেই হাত ছাত্র মারে, সেই হাত ভেঙে দাও' — স্লোগান দিতে শোনা যায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়েও আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন অনু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- জানান, 'সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়ে বাস ও মাইক্রোবাস মিলে মোট ২৪টি যানবাহন কাকরাইল মোড়ে এসে পৌঁছায়।'

চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে অনেক সাবেক শিক্ষার্থীও যুক্ত হচ্ছেন এই কর্মসূচিতে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে তারা ঢাকায় এসে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।
এর আগে সকালেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তারা মূলত তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করলেও এখন তা চার দফায় পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, 'এখন আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে—যারা অতীতের সরকারের মতো আচরণ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে, সেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দিতে হবে।'
রইস উদ্দিন আরও বলেন, 'আমরা বুধবার (১৪ মে) থেকে এখানে অবস্থান করছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'
রইস উদ্দিন বলেন, 'তাদের দাবির সঙ্গে তথ্যমন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও গত রাতে তথ্য উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে, তিনি একটি উসকানিমূলক মন্তব্য করেন, যার জেরে এক শিক্ষার্থী তার দিকে বোতল ছুঁড়ে মারেন।'

এই ঘটনার পরপরই রইস উদ্দিন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, '২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে উপেক্ষা করা হচ্ছে, কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।'
এদিকে, কাকরাইল এলাকায় পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন 'যমুনা'র দিকে মিছিল যাতে না এগোতে পারে, সেজন্য এলাকাজুড়ে কঠোর ব্যারিকেড বসানো হয়েছে।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ রাস্তায় শুয়ে, কেউ বসে, আবার কেউ ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গল্প করছেন। তাদের পাশেই শতাধিক পুলিশ সদস্য ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করছিলেন।

পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে চেয়ারে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলেন পাঁচ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, 'আমরা গতকাল থেকে এখানে অবস্থান করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।'
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার ওপর বোতল নিক্ষেপের ঘটনার প্রসঙ্গে রাইসুল বলেন, 'আমরা এটাকে বড় কিছু মনে করি না, কারণ তিনি আমাদের প্রতিনিধি হিসেবেই সরকারের কাছে গিয়েছিলেন। পুলিশ যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তার তুলনায় এই ঘটনা কিছুই না।'
উল্লেখ্য, গত রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ সামনে বিফ্রিং করতে আসেন। বিফ্রিংয়ে অসন্তুষ্ট হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বক্তৃতার একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বোতল ছুঁড়ে মারেন একজন। উপদেষ্টা বিফ্রিং বন্ধ করে চলে যান।