কমপ্লায়েন্স, নতুন বাজার, বহুমুখীকরণ—৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির চাবিকাঠি বের করল ইপিবি

সম্ভাব্য আইটেম দিয়ে রপ্তানি ঝুড়ির সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে নতুন বাজার খোঁজাসহ পণ্য উৎপাদনে পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স—এ সবই ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে বলে মনে করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
এছাড়া, কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মানাধীন তৃতীয় টার্মিনালে কোল্ড চেইনসহ ওয়্যারহাউজ স্থাপন করা, এবং সেবা খাতের রপ্তানি বাড়াতে নীতি সহায়তা দেওয়া ও চামড়া শিল্পের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে কমন এফ্লুয়েন্ট প্ল্যান্ট কার্যকর করার সুপারিশও করেছে ইপিবি।
রপ্তানি খাতের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত 'রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি'র আসন্ন বৈঠকে এজেন্ডা হিসেবে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে সুপারিশ করেছে ইপিবি।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ৫৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ইপিবি। এটি গত অর্থবছরের মোট রপ্তানির তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণের জন্য পণ্যের মানোন্নয়ন, বাজারজাতকরণের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
চীন, রাশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছে ইপিবি।
এসব প্রধান বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের পরিচিতি ও বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি।
বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
পরিবেশবান্ধব রপ্তানি খাতের প্রয়োজনীয়তা
সংস্থাটি বলেছে, পরিবেশবান্ধব রপ্তানি খাত গড়ে তুলতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প স্থাপন নিরুৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনকারী রপ্তানিকারককে প্রণোদনা বা নীতিগত সহায়তা দিতে হবে।
রপ্তানি পণ্য তৈরিতে পরিবেশগত বিষয়াবলি প্রতিপালনে রপ্তানিকারকদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে ইপিবি।
সংস্থাটি বলেছে, 'পরিবেশগত বিভিন্ন ধরনের কমপ্লায়েন্স ইস্যু আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। ভবিষ্যৎ বাণিজ্য শুধুমাত্র শুল্ক সুবিধা পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে জলবায়ু পরিবর্তনকে সামনে রেখে আবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলো প্রতিপালন করে পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্য সুবিধা প্রবর্তনের দিকে উন্নত দেশগুলো নিজেদের অবস্থান নিচ্ছে।'
এসব বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশকে দরকষাকষি কার্যক্রম গ্রহণ করতে সুপারিশ করেছে ইপিবি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর (বিকএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '২০২৪ সালের মধ্যে যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।'
'এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অবশ্যই নতুন বাজার সৃষ্টি, পণ্যের বৈচিত্র্য আনা ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স অর্জন করতে হবে। কিন্তু ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনসহ সরকার ব্যবসাবান্ধব নীতি অবলম্বন না করলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে,' জানান তিনি।
সক্ষমতা বাড়িয়ে প্রধান গন্তব্যসমূহে কৃষিপণ্য রপ্তানি করা
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে উচ্চ হারে প্রণোদনা থাকলেও এ সুবিধা গ্রহণ খুব একটা চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের বার্ষিক কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১.০২ বিলিয়ন ডলার হলেও তা মূলত এথনিক মার্কেটের মধ্যেই সীমিত।
পরযাপ্ত কার্গো সার্ভিস ও যথাযথ স্থানে হিমাগার না থাকাকে কৃষিপণ্য রপ্তানির মূল সমস্যা বলে মনে করে ইপিবি।
বিমান বন্দরে কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় অনেক কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বাইরে খোলা জায়গায় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয় এবং রপ্তানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন।
কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে মাঠ পর্যায়ে প্যাকিং সুবিধা ও কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করার সুপারিশ করে ইপিবি বলেছে, বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির জন্য কোল্ড চেইন নিশ্চিত করতে ওয়্যারহাউজ স্থাপনের প্রভিশন রাখা প্রয়োজন।
এছাড়া কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বাড়াতে প্রসেসিং জোন তৈরিসহ পরীক্ষা সুবিধা বাড়ানো এবং পরীক্ষার সময় ও ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে ইপিবি।
বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন মনে করেন, 'বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির অন্যতম বড় বাধা প্রতিযোগী মূল্যে রপ্তানিপণ্য পাঠাতে না পারা। এর অন্যতম কারণ বেশি এয়ার ফ্রেইট নিয়ে পণ্য পাঠাতে হয়।'
টিবিএসকে তিনি বলেন, বাংলাদেশি প্রতি কেজি সবজি বিমানে পাঠানোর ব্যয় ২৫০ টাকা। কিন্তু ভারতে এই খরচ অনেক কম।
বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য পাঠানোর জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কোনো আলাদা এয়ার কার্গো না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের বিমান সংস্থাগুলো সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫টি কার্গো ফ্রেইট পরিচালনা করলেও বিমানের একটিও নেই।
তিনি মনে করেন, পণ্য প্রতিযোগিতামূলক দামে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করলে এ খাতের রপ্তানি বাড়বে।
এখনও পিছিয়ে সেবা খাত
রপ্তানি আয় বাড়াতে সেবাখাতের উন্নয়নে জোর দেওয়ার সুপারিশ করে ইপিবি বলেছে, বিশ্বে সেবা বাণিজ্যের পরিমাণ ৯.৬০ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও এখাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সেবা খাতের গতিধারায় প্রবেশের জন্য এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ইপিবি।
সেবা খাতের রপ্তানি বাড়াতে ইপিবি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে একটি কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এ খাতের রপ্তানির বিষয়াবলি খুবই জটিল। তাই নবীন উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি একেএম ফাহিম মাশরুর মনে করেন, সেবা, বিশেষত সফটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা মানসম্পন্ন মানবসম্পদের স্বল্পতা।
টিবিএসকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্নাতকদের কোম্পানিগুলো প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করার পর দক্ষ হলে তারা চাকরি ছেড়ে দেন কিংবা বিদেশে চলে যান। এজন্য কোম্পানিগুলো নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণ দিতে উৎসাহিত হয় না।
এক্ষেত্রে ৬ মাস বা এক বছরের প্রশিক্ষণ সময়কালে বেতন ব্যয় সরকার বহন করলে এ খাতে মানবসম্পদ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া বাংলাদেশি সফটওয়্যার নিয়ে বিদেশে মার্কেটিং করে চাহিদা তৈরির উপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
চামড়া রপ্তানির প্রধান বাধা সিইটিপি কার্যকর না হওয়া
সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কমন এফ্লুয়েন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) কার্যকর না হওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানিপণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে বলে মনে করছে ইপিবি।
ইপিবি বলেছে, বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করছে, তারা বন্ডের আওতায় বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছে। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশীয় চামড়ার চাহিদা না থাকায় সাভারে স্থাপিত সিইটিপি প্ল্যান্ট কার্যকর করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো চেষ্টা নেই। ফলে সামগ্রিকভাবে খাতটি অগ্রসর হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের মনে করেন, সিইটিপির পাশাপাশি ট্যানারিগুলোকেও কমপ্লায়েন্ট করতে হবে। কিন্তু তা করার জন্য যে আর্থিক সক্ষমতা দরকার, তা ট্যানারি মালিকদের নেই।
সেজন্য সরকারের উদ্যোগে সফট লোন দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পুরো প্রক্রিয়া পরিবেশবান্ধব করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে। তাহলে এ খাতের রপ্তানি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন আবু তাহের।
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়
বিভিন্ন দেশ হতে পাওয়া পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এ সুবিধা পেতে শ্রম আইন, পরিবেশগত ইস্যু, সুশাসনসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণের পাশাপাশি ডব্লিউটিও ইস্যুতে নীতিগত বিষয়াবলি প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হবে।
তাই রপ্তানিপণ্য উৎপাদনে কঠোর রুলস অব অরিজিনের শর্ত প্রতিপালন এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছে ইপিবি।
সরকারের নীতিমালা প্রণয়নে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা অর্জনের বিষয়াবলি প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন এবং অপ্রচলিত খাতের রপ্তানি উন্নয়নে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে ইপিবি।
চিহ্নিত অপ্রচলিত রপ্তানি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে রপ্তানি খাত সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০% রপ্তানি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসের সঙ্গে দ্বিমত রপ্তানিকারকদের
২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইপিবি। তাতে নতুন অর্থবছর দেশের রপ্তানি আয় প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
তবে রপ্তানিকারকরা এই প্রাক্কলনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দাভাব নেমে এসেছে। ফলে আগামীতে ক্রয়াদেশ কমার পাশাপাশি রপ্তানিপণ্যের দামও কমবে।
আগামী অর্থবছরে পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশের বেশি হবে না বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, 'আমরা মনে করছি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে ৭ থেকে ৮ শতাংশের বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোনো কারনে বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলে এই হারেও প্রবৃদ্ধি হবে না।'
অন্যদিকে বিকএমইএ মনে করছে নিটওয়্যার পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ শতাংশের নিচে।
বিকএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এত বড় প্রবৃদ্ধির পর পরের বছর প্রবৃদ্ধি কমে আসে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে কাঁচামালের দাম বেশি ছিল, মহামারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পেন্ট-আপ ডিমান্ডের কারণে চাহিদাও বাড়তি ছিলো। এ কারণে প্রবৃদ্ধি বেশি দেখা যাচ্ছে।
শামীম এহসান আরও বলেন, 'আগামী অর্থবছরে কাঁচামালের দাম তেমন বাড়ার সম্ভাবনা নেই, এবং এত চাহিদাও থাকবে না। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে আমাদের মূল রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে চাহিদা কমতে পারে।'
অবশ্য তৈরি পোশাকের পরই রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে থাকা হোম টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা আগামী অর্থবছরও বড় প্রবৃদ্ধির আশা করছেন।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) সভাপতি শাহাদত হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আমরা মনে করছে চলতি অর্থবছরের মত প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরও থাকতে পারে। কেননা বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। গত ১১ মাসে হোমটেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৪১ শতাংশ।'
২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে সরকার পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো ৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের ১১ মাসেই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
গত বছরও ইপিবির সঙ্গে সভায় বিজিএমইর পক্ষ থেকে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৭ শতাংশ, আর বিকেএমইএ করেছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। যদিও গত ১১ মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩৫ শতাংশ।