ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় মা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নওগাঁর ছেলে রবিউল ইসলাম রবিন (২৭) নিখোঁজ হন। তিনি সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে ফায়ারফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আগুন নেভানোর কাজে তিনিও সেখানে অংশ নিয়েছিলেন। তার বাড়ি নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া মহল্লার পূর্বপাড়ায়। রোববার (৫ জুন) সকালে টেলিভিশনে খবর দেখে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পায় তার পরিবার।
এরপর থেকে পরিবারটিতে বইছে শোকের মাতম। রবিউল ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা ও উপার্জনক্ষম। ছেলেকে হারিয়ে মা বারবার বিলাপ করছেন। ছেলের ফেরত আসার অপেক্ষায় মা। স্বজনেরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ছেলের নিখোঁজের সংবাদে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছেন না মা। এদিকে ছেলের খোঁজ নিতে বাবা খাদেমুল ইসলাম গতকালই ছোট ছেলে রনিকে নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে গেছেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা ফাইমা বেগমের সাথে ছেলে রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েক সেকেন্ড কথা হয়েছিল। বলেছিলেন, পরে আবার কথা হবে। কিন্তু মা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় আর কথা বলা হয়নি।
রবিউল ইসলামরা তিন ভাই-বোন। রবিউল সবার বড়। বাবা কৃষক, মা গৃহিণী। চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ শেষে দেড় বছর আগে কর্মস্থল সীতাকুণ্ডের ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন। গত ঈদ-উল-ফিতরের দুইদিন আগে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসেন। ছুটি শেষে ঈদের পরদিন আবারও কর্মস্থলে ফিরে যান।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার (৪ জুন) রাত ১১টা ২৫ মিনিটে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে আগুন নেভানোর কাজে রবিউল অংশ নেয় বলে জানতে পারে পরিবার। বিস্ফোরণে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে রবিউলের কোনো তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
মা ফাইমা বেগম বলেন, 'শনিবার রাতে এশার নামাজ পর ছেলের সঙ্গে সামান্য কথা হয়। ছেলে ব্যস্ত থাকায় পরে ফোন দিতে বলে। কিন্তু আমি আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আর বাসায় আসতে না পারায় ছেলেকে ফোন দিতে পারিনি। সকাল ৫টার দিকে ছেলেকে ফোন দিলে অফিসে যে ডিউটিতে ছিল সে রিসিভ করে। তিনি তখন বলেন, রবিউল ডিউটিতে গেছে তার জন্য দোয়া করেন। সকাল ৮টার দিকে বাসায় এসে টেলিভিশন চালু করে দেখি আগুনের সংবাদ।'
কথা শেষ করতে পারেন না ফাইমা; কাঁদতে থাকেন।
ছেলের ফিরে আসার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন তিনি।
'ঈদের তিন দিন আগে ছেলে বাড়ি আসে। ঈদের পরদিন আবার চলে যায়। তবে সামনের ঈদে (ঈদ-উল-আযহা) ছুটি হবে না বলে জানায় ছেলে।'
রবিউল ইসলামের ছোট চাচা নাজিম উদ্দিন বলেন, 'বড় ভাইয়ের তিন ছেলে-মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে (রবিউল) মানুষ করেছে। বড় ভাতিজাকে নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিছুদিন পর নতুন করে আলাদা বাড়ি করার কথা ছিল। এরপর ভাতিজার বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখারও কথা ছিল।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে ভাতিজাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন তো মনে হচ্ছে সে না ফেরার দেশে চলে গেছে। পরিবারটি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়বে। আমরা চাই ভাতিজা ফিরে আসুক। পরিবারটিতে আনন্দ বিরাজ করুক। আর যদি কোন ধরনের অঘটন ঘটেই থাকে, সরকারের কাছে দাবি পরিবারটিকে যেন যথাযথভাবে সহযোগিতা করা হয়।'
প্রতিবেশি চাচা আব্দুল মান্নান বলেন, 'ভাতিজা (রবিউল ইসলাম) খুবই ভাল ছিল। সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতো। ঈদে বাড়ি আসছিল। প্রতিবেশি সবার সঙ্গে কথা বলেছিল। ছুটি শেষে যাওয়ার সময় সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে গেছে। এখন ভাতিজার কথা মনে করে সবার মন খাবার হয়ে গেছে। সবাই দুশ্চিন্তায় মধ্যে আছে।'