ইসি গঠনের জন্য নাম পাঠায়নি ১৫ রাজনৈতিক দল

নির্বাচন কমিশনারদের মনোনয়নের শেষ দিন, অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ২৪টি দল কমিশন গঠনের জন্য নাম প্রস্তাব করেছে। এতে সার্চ কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ইসি গঠনের বিষয়ে আজ ও আগামীকাল মিটিংয়ে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট নাগরিকরাও সার্চ কমিটির নাম প্রস্তাবনার সফলতা নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র থেকে জানা গেছে, ২৪টি রাজনৈতিক দলসহ ৩০টি সংগঠন ৫০০-এরও বেশি লোকের নাম প্রস্তাব করেছে। তবে, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল কোনো প্রস্তাব দেয়নি।
অনুসন্ধান কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম বিকেল পাঁচটার পর সাংবাদিকদের বলেন, ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তারা প্রস্তাব পেয়েছেন। এ ছাড়া ছয়টি পেশাজীবী সংগঠন থেকে প্রস্তাব এসেছে। এই পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে বিএমএ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনও আছে।
এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক বড়সংখ্যায় প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম। এগুলো এসেছে মূলত ই–মেইলে।
তবে মোট কতজনের প্রস্তাব এসেছে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে শফিউল আজিম বলেন, নামগুলোর তালিকা করে এখন অনুসন্ধান কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে ইসি গঠনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ করেছিল অনুসন্ধান কমিটি। এরপর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিকানায় গত বুধবার চিঠি দিয়ে নাম দেওয়ার অনুরোধ করে কমিটি। চিঠিতে প্রতিটি দলকে শুক্রবার বিকেলের মধ্যে অনধিক ১০ জনের নাম (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি) পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির কাছে ১০ জনের নামের সুপারিশ জমা দিয়েছে শুক্রবার দুপুরে। আওয়ামী লীগ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে নামের তালিকা জমা দেন।
সেলিম মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সার্চ কমিটির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা দিয়েছি।"
তিনি বলেন,"আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বুধবারের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সে অনুযায়ী আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সার্চ কমিটির সভাপতি বরাবর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ফরোয়ার্ডিং লেটারসহ বদ্ধখামে ১০ জন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তসহ তালিকা জমা দিয়েছি।"
বিকল্পধারা বাংলাদেশ ব্যতীত আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ করেনি।
বিকল্পধারার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেন ভূঁইয়াসহ পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিকল্পধারার মনোনীত অন্যরা হলেন: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ তোফায়েল আহমেদ, সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের সাবেক সভাপতি মুনিরা খান এবং অর্থনীতিবিদ ডঃ আহসান এইচ মনসুর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, "নির্বাচন কমিশনের সার্চ কমিটি গঠনে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই, কারণ এই উদ্যোগ অর্থহীন।"
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তার দল বিশ্বাস করে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটিতে নাম জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি অনুপযুক্ত ছিল, তাই তারা কোনো নাম প্রস্তাব করেনি।
তিনি আরও বলেন, "আমরা আশা করি সার্চ কমিটি নিজে থেকেই সঠিক ব্যক্তিদের খুঁজে বের করবে।"
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রোববারের মিটিংয়ে আমন্ত্রিতদের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন টিবিএসকে বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা করতে সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।
"তবে, আমার কাছে এইবার বলার মতো কোনো শব্দ নেই। আমরা গত ১০ বছরে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি কিন্তু কিছুই বদলায়নি," যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে তিনি আলোচনা করবেন তবে বিশেষ কোনো নাম প্রস্তাব করবেন না।
"যেমন আমরা অতীতে দেখেছি, নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত হওয়ার পরিবর্তে নতুন কমিশন নিজে থেকে কাজ করবে না," তিনি বলেন।
"সরকার এমনভাবে কথা বলছে যেন নির্বাচন কমিশনই সব কাজ করছে। কিন্তু, এটা সত্য নয়। কী হবে, আমরা সবাই পর্যবেক্ষণ করব," যোগ করেন তিনি।
আরেক আমন্ত্রিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও আইন মেনে প্রস্তাবিত নামগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
"আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তার সরকার ৫০ বছর পর হলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন করেছে," বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালও আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং সভায় যোগ দেবেন।
"যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে পারে তাদের পক্ষে আমি আমার মতামত প্রকাশ করব," বলেন তিনি।