প্রার্থী ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াও তার প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, জামানত ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিস্তারিত পদ্ধতি জানিয়ে 'পরিপত্র-২' জারি করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদ এবং সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে যোগ্য প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র (ফরম-১) দাখিল করতে পারবেন। প্রার্থীর পাশাপাশি তার প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীও এই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা ও নিয়ম
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বা তার আগে যেকোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। তবে শেষ দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার পর আর কোনো মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে না।
মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের ক্ষেত্রে 'রিঅ-' এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের ক্ষেত্রে 'সরিঅ-' দিয়ে ক্রমিক নম্বর দিতে হবে। দাখিলকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ এবং মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখসহ নোটিশ (মনোনয়নপত্রের পঞ্চম খণ্ড) প্রদান করা হবে।
জামানত ও জমাদানের কোড
প্রার্থীকে জামানত বাবদ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। জামানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বা যেকোনো ব্যাংক/সরকারি ট্রেজারিতে '১০৯০৩০২১০১৪৪৩-৮১১৩৫০১' কোডে জমা দিতে হবে। কোনো প্রার্থীর অনুকূলে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলেও শুধুমাত্র একটি জামানত দিলেই চলবে। তবে অন্যান্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মূল চালানের সত্যায়িত অনুলিপি সংযুক্ত করতে হবে।
প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর যোগ্যতা
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে। এছাড়া তিনি অন্য কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক বা সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর করে থাকলে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
দলীয় মনোনয়ন ও চূড়ান্ত প্রার্থী
রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই জমা দিতে হবে। যদি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল একটি এলাকায় একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তবে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত লিখিত পত্রের মাধ্যমে ২০ জানুয়ারির বিকেল ৫টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে দলের অন্য প্রার্থীদের প্রার্থিতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত বলে গণ্য হবে।
মনোনয়নপত্র বাছাই ও ত্রুটি সংশোধন
রিটার্নিং অফিসার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন। এ সময় প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী উপস্থিত থাকতে পারবেন। ছোটখাটো কোনো ত্রুটির জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনযোগ্য ভুল হলে তা দাখিলকারীকে দিয়ে সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। তবে হলফনামার কোনো তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না। প্রার্থীর নাম বা তথ্যের সঙ্গে ভোটার তালিকার তথ্যের হুবহু মিল না থাকলেও এসএসসি সনদ বা স্বীকৃত পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ করা যাবে।
আপিল ও ঋণ খেলাপী যাচাই
মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। কমিশন ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এসব আপিল নিষ্পত্তি করবে। এছাড়া ঋণ খেলাপী সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত ছকে (পরিশিষ্ট-খ) প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) পাঠানো হবে।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও অঙ্গীকারনামা
বৈধ মনোনীত প্রার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজে বা লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারবেন। একবার প্রত্যাহার নোটিশ দিলে বা দল চূড়ান্ত মনোনয়ন দিলে তা আর বাতিল করা যাবে না। এছাড়া, 'সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫'-এর বিধি ২৯ অনুযায়ী তফসিল-১ এবং বিধি ৩০ অনুযায়ী তফসিল-২ মোতাবেক অঙ্গীকারনামা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
