জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার খালাসের রায় বহাল আপিল বিভাগে

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ সোমবার (৩ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন।
আপিল বিভাগের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, 'এই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আমাদের বক্তব্য ছিল, এই ট্রাস্ট একটি ব্যক্তিগত ট্রাস্ট, যেটি নিজের অর্থায়নে পরিচালিত করা হচ্ছিল। এই ট্রাস্টের সাথে সরকারের বা রাষ্ট্রের কোনো টাকা জড়িত নেই। তারপরেও আওয়ামী লীগ সরকার দুদককে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এই মামলা করিয়েছেন এবং রায় দিয়েছেন। এই মামলায় ৩৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি, যেটি হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন।'
এই আইনজীবী আরও বলেন, 'আদশের সময়ে আপিল বিভাগ মন্তব্য করেছেন যে, এই মামলায় দুর্নীতির কোনো এভিডেন্স পাওয়া যায় নাই। যেহেতু এই ট্রাস্টটি ট্রাস্ট আইনের অধীনে গঠিত হয়েছিল, আইন অনুযায়ী এরকম ট্রাস্টে কোনো অনিয়ম হলে সেটি ট্রাস্ট আইনের অধীনে বিচারযোগ্য মামলা দায়ের হতে পারত। কিন্তু এই মামলা দায়েরের সময় সংশ্লিষ্টরা সেটি না করে ভিন্ন আইনে মামলা করে। এই মামলা দায়েরের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।'
গত নভেম্বরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
পরে তার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক। এ আবেদনের শুনানির পর আজ খালেদা জিয়ার খালাসের রায় বহাল রাখলেন আপিল বিভাগ।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের দণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। পরে সেই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুদক।
মামলার বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও আরও তিনজন তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং অজ্ঞাত উৎস থেকে ট্রাস্টের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় খালেদাসহ বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
পরে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর, বিচারপতি আখতারুজ্জামান রায়ে বলেন, চার আসামি পারস্পরিক সহযোগিতায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার জন্য অজ্ঞাত সূত্র থেকে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ট্রাস্টের নামে জমি কেনার প্রক্রিয়ায় আরও ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অনিয়ম হয়েছে।
আদালত বলেন, ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোত ৭.৮১ কোটি টাকা জমা হয়; তবে এই টাকাটি কোনো দাতব্য কাজে ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি, ক্রয়কৃত জমি ট্রাস্টের নামে মিউটেশন বা নামজারিও করা হয়নি।
প্রথম ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে খালেদা জিয়া ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের পিএমও শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং ১৩ জানুয়ারি থেকে পরের এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অ্যাকাউন্টটিতে ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা জমা হয়। রায়ে বিচারক বলেন, "প্রসিকিউশন এ ব্যপারে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।"