মজুরি পরিশোধে দেয়া ১০৩ কোটি টাকা ঋণ আদায় নিয়ে বেক্সিমকোসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে সরকার

সরকারের তহবিল থেকে বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের আওতাধীন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বাবদ পরিশোধ করা ১০৩ কোটি টাকা আদায় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই টাকা কীভাবে ফেরত দেবে, সে বিষয়ে কোম্পানিগুলোর কর্মপরিকল্পনা জানতে আজ সোমবার (৩ মার্চ) সভা ডেকেছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা বেক্সিমকো গ্রুপ, ইয়েলো, বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও সভায় ডাকা হয়েছে।
শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা বেক্সিমকোসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে টাকা দিয়েছি। এসব ঋণের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারিত আছে। সেই মেয়াদের মধ্যে টাকা আদায় করতে হবে।
'প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার থেকে পাওয়া সুদমুক্ত ঋণের টাকা ঠিকমতো শ্রমিকদের পরিশোধ করেছে কি না এবং ঋণের অর্থ কীভাবে ফেরত দেবে, সে বিষয়ে আলোচনা করতে গ্রুপগুলোকে সভায় ডাকা হয়েছে।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেক্সিমকোকে সরকারের পক্ষ থেকে ৬০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো এখন বন্ধ আছে। সেগুলো বিক্রি করার প্রয়োজন হলে ঋণদাতা ব্যাংক বিক্রি করবে।
তবে সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ কোম্পানিগুলোকে ফেরত দিতে হবে। তারা তাদের অন্য কোনো সম্পদ বা আয় থেকে দেবে নাকি অন্য কোনোভাবে ফেরত দেবে, সেটি তাদের বিষয় বলেও জানান শ্রম সচিব।
গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয় সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে এসব গ্রুপের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে।
এর মধ্যে বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ কোটি ও টাকা শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ১০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ঋণের মেয়াদ ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট দুই বছর। তবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অর্থ পরিশোধ করতে হবে ছয় মাসের মধ্যে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার সব শ্রমিককে ছাঁটাই করে বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করতে ৯ মার্চ থেকে সরকার যে ৫২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করবে, এই অর্থও বেক্সিমকোকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে।
তবে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করার জন্য সরকারের কাছে কোনো ঋণ সহায়তা চাননি তারা। বরং কারখানা চালু রাখতে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছিল।
এছাড়া গত নভেম্বরে গাজীপুরের বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেট থেকে ১৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। গাজীপুরের ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য ১৩ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেয় সরকার।
গাজীপুরের টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানার শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে ১৬ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দেয় সরকার। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০ কোটি টাকা এবং শ্রম মন্ত্রণালয়েল কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিবিএসকে বলেন, গত বছর হাসিনা সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের কারখানাগুলোর ৪৫ হাজার শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তার পাশাপাশি জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের কারখানাগুলোর বড় অংশই ঋণদাতা জনতা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা। মর্টগেজ-ফ্রি কিছু জমি রয়েছে, যেগুলো বিক্রি না করে সরকারের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। কারণ কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় সেখান থেকে কোনো আয় নেই।
'মর্টগেজ-ফ্রি সম্পত্তি বিক্রি করে সরকারের পাওনা মেটাতে গেলেও সময় লাগবে। বিক্রেতাকে দলিল করে দিতে হবে,' বলেন তিনি।