রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার চাঁদা দাবির ভিডিও, কারণ দর্শানোর নোটিশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর শাখার মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের চাঁদাদাবির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর শাখার মুখ্য সংগঠক আলী মিলনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, "আপনার (নাহিদ হাসান খন্দকার) বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির অভিযোগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন উঠেছে।"
সেখানে আরও বলা হয়, "বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। অতএব, অভিযোগের বিষয়ে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে কারণ ব্যাখ্যা করে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর (মুখ্য সংগঠক আলী মিলন) কাছে পৌঁছাতে হবে। নতুবা বিষয়টি সাংগঠনিক নিয়মে নিষ্পন্ন করা হবে।"
গত শনিবার (১ মার্চ) সকালে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। ভিডিও সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর গ্রীন সিটি ইকো পার্কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেনের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের কথোপকথন শোনা যায়।
এতে নাহিদকে বলতে শোনা যায়, "আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে। আপনি কথা বলেন, যদি আপনার মনে হয় একটু ইয়া করবেন, একটা সংগঠন করতে গেলে কি করতে হয় আপনি তো জানেন। এ হচ্ছে কথা। আমি চাচ্ছি না আপনার কোন সমস্যা হোক। যদি আপনাদের দিক থেকে মনে হয় কোন সমস্যা হচ্ছে, তাহলে আপনি ভাইয়ের (পার্ক কর্তৃপক্ষ) সাথে কথা বলেন। আপনাদের গলায় পাড়া দিয়ে আমি কিছু করতে পারবো না।"
পার্ক ম্যানেজার এক লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় নাহিদ তাদের আরও সময় নেওয়ার কথা বলেন।
তবে চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার।
নিজের ফেসবুক আইডিতে বালু উত্তোলনের ৪৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে সেখানে তিনি লিখেছেন, "একটি পার্কের ভিতরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এটা জানতে পেরে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের একটি প্রতিনিধি দল আহ্বায়ককে অবগত করে সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য ওই বালুমহলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নুলা শাহীন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ভিটি বাবু, স্টেশনের মহানগর ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আসিফের পার্টনার বালুমহলের সম্রাট ভিটি আলম, যুবলীগ নেতা বাশার আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তুহিন পার্কটির অর্থ যোগানদাতা। এরা দীর্ঘদিন যাবত পার্কটি পরিচালনা করে আসছিল। আমরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের পদক্ষেপ নিলে আওয়ামী দোসর এবং তাদের সহযোগীরা মিথ্যা বানোয়াট ভিডিও করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। উল্টো তারাই আমাকে বার বার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।"
নাহিদ হাসান আরও লিখেছেন, "আমি কোনো টাকা দাবি করিনি। টাকা দিতে চাইলেও আমরা সেটা গ্রহণ করিনি। কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না আমি কারো কাছে এক টাকা নিয়েছি। বালুখেকোরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সফলতা নষ্ট এবং বিতর্কিত করার জন্য এই সমস্ত বানোয়াট ভিডিও প্রচার করে আসছে। যা আপনারা আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ এর ফেসবুক পেজে গেলে দেখতে পারবেন। আমি কখনো অনৈতিক কোনো কাজে জড়িত ছিলাম না এবং কখনো থাকব না।"
স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারেও নাহিদ হাসান খন্দকার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। নাহিদ হাসান বলেন, "কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমরা সেখান থেকে এক টাকা নিয়েছি, তাহলে সংগঠন যে শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে নিবো। আমি সেখানে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাহিরে মিটিং আছে বলে চলে আসার চেষ্টা করেছি। আমরা যেন তাদের ব্যবসায় হাত দিতে না পারি সেইজন্য আমার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে এআইয়ের মাধ্যমে ভিডিও করে। যারা এই ভিডিও ছড়িয়েছে তারা আওয়ামী লীগের দোসর। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্টদের সরিয়েছি, এখন সেই ফ্যাসিস্টদের দোসররা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।"
এ ব্যাপারে গ্রীন সিটি ইকো পার্কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন বলেন, "আমার পার্কে পুকুর তৈরিতে খনন কার্যক্রম চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাহিদ হাসান খন্দকার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে বলে আমার কাছে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। যা ভিডিওতে রয়েছে। এছাড়া তার চাঁদা দাবির অনেক কলরেকর্ড আমার কাছে রয়েছে, যা দ্রুততম সময়ে প্রকাশ করা হবে। এমন চাঁদাবাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মত সংগঠনে থাকতে পারে না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মেদ ইমতি বলেন, "যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে সেটি নিয়ে আমাদের টিম তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কেউ তাকেসহ এই প্লাটফর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটির প্রেক্ষিতে আমরা তাকে শোকজের মাধ্যমে জবাব চেয়েছি এবং এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।"
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ নভেম্বর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউল্যাব শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মেদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রহমত আলীকে সদস্য সচিব করে ৬ মাস মেয়াদি রংপুর মহানগরের ১১২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়। এতে রংপুর ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রংপুর মহানগরের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান খন্দকারকে মুখপাত্র করা হয়।