গ্রেপ্তার আ.লীগের ৫,০৭৯ নেতাকর্মী; মামলায় শীর্ষে আনিসুল, সবচেয়ে বেশি রিমান্ডে গেছেন পলক

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন—কেউ আত্মগোপনে চলে যান, কেউ পালান বিদেশে, আবার অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়েন।
অভ্যুত্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও প্রাণহানিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গত এক বছরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ ৫ হাজার ৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ৫০ থানায় মোট ৭০৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর সারা দেশে মামলার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
এসব মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি প্রায় সব সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি ও দলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন টিবিএসকে জানান, বেশিরভাগ মামলার অভিযোগের ধরন প্রায় একই রকম। প্রায় সব মামলায় দণ্ডবিধির আইনের ৩৪, ১০৭ ও ১২০ (ক) ধারা বিদ্যামান রয়েছে।
তিনি বলেন, 'ষড়যন্ত্র, সহয়তা ও প্রচারণার অভিযোগে যে-কেউ আসামি হতে পারেন। এছাড়াও আসামির তালিকায় নাম এলেই তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে। এসব পদক্ষেপ মামলার সংখ্যার চেয়ে বরং অভিযোগের ধরনের ওপর বেশি নির্ভর করে।'
গ্রেপ্তার হাই-প্রোফাইল আসামিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৯টি মামলার আসামি হয়ে শীর্ষে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অন্যদিকে ৬৬টি মামলায় অভিযুক্ত সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলককে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রিমান্ডে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে মোট ৯১ দিন রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার পর নানা গল্প সাজিয়ে ও বক্তব্য দিয়ে আলেচনায় আসেন পলক। অন্যদিকে, কোটা ইস্যুর ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবেন—এমন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির কথা উঠলে প্রায়ই হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নাম আসে। অভ্যুত্থানের সময় হত্যায় উসকানি, দুর্নীতি ও বড় আকারের আর্থিক তছরুপসহ একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে। কোটা সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন।
ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন ছাড়াই তার মেয়ে বুশরা আফরিনকে 'চিফ হিট অফিসার' হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সমালোচিত হন। গত পাঁচ বছরে সিটি কর্পোরেশন ভবনটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গণঅভ্যুত্থান দমনের জন্য গণভবনে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনায় আসেন।
গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করায় আলোচনায় আসেন এমপি হাজি মো. সেলিম ও তার ছেলে সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম। এছাড়া পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের নানা অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতার আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন (রাখি) ও মোরশেদ হোসেন শাহীন। তারা টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। একটি মামলায় জামিন পেতে না পেতেই আরেক মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, 'মামলাগুলো আসামিদের ওপর বৃষ্টির মতো বর্ষণ হচ্ছে। বিষয়টি সুস্পষ্ট। রাজনৈতিক হয়রানি ও প্রতিহিংসারবশত তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে।' আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক ও নিরপেক্ষ থাকার দাবি জানান এই আইনজীবীরা।