দুদকের মামলায় স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার মিঠুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা হিসেবে আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
বিষয়টি আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানিতে বলেন, 'আগের মামলা ছিলো সম্পদের তথ্য গোপনের। আর এই মামলা অবৈধ সম্পদ অর্জনের। অবৈধ সম্পদ আছে বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।'
অন্যদিকে আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে যুক্তি দেন। শুনানিতে তিনি বলেন, 'একটি কুচক্রী গ্রুপ তাকে ধ্বংস করতে মামলা করেছে। ২০১৫ সালেও দুদক তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেছিল। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে নেন। মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু ২০১৭ সাল থেকে আমেরিকা থাকেন। তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ব্যাড ইনটেনশন (খারাপ উদ্দেশ্য) থাকলে তিনি দেশে ফিরতেন না। তার স্ত্রীও আমেরিকা থাকেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত। দেশপ্রেম থাকার কারণে কিন্তু তিনি দেশে ফিরেছেন। অন্যায় করলে তো তিনি দেশে ফিরতেন না। এটি দুরভিসন্ধি মামলা। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থণা করছি।'
রিমান্ড আবেদনে দুদক উল্লেখ করেছে, মিঠু অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রায় ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার, দেশে ও বিদেশে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগও অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এসব বিষয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন বলে আবেদনে জানানো হয়। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে তথ্য উদঘাটনে আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে দুদক উল্লেখ করেছে।
এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিউমার্কেট থানাধীন এলাকা থেকে মিঠুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাকে দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখা যায়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিঠু কৃষিজমি, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জিত প্রায় ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মেলে দুদকের অনুসন্ধানে।