৯ মাস পর রেলযোগে ভারত থেকে পণ্য এলো দিনাজপুরে

প্রায় নয় মাস পর ভারত থেকে রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন এসেছে দিনাজপুরের বিরল করিডরে। প্রায় ৪৬টি পণ্যবাহী ওয়াগন নিয়ে ট্রেনটি বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বিরল রেলওয়ের স্টেশনে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার রাধিকাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ট্রেনটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিরল স্থলবন্দর হয়ে বিরল রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়।
প্রায় ৪৬টি ওয়াগনে চিনামাটির প্লেট তৈরির ডাস্ট পাউডার নিয়ে এসেছে ট্রেনটি। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৬ মে এই করিডর দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন এসেছিল বাংলাদেশে।
রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) মামুনুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ট্রেনটি বর্তমানে জয়পুরহাটে পণ্য খালাস করছে। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে একইপথে দুয়েক দিনের মধ্যে ভারতে ফিরে যাবে।"
রেলওয়ের তথ্যমতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগের মোট পাঁচটি আন্তঃদেশীয় করিডর রয়েছে; সেগুলো হলো—দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর এবং চিলহাটি-হলদিবাড়ি। সবগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অর্ন্তগত।
এসব করিডর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে নির্মাণ সামগ্রী যেমন– পাথর, পাথরের চিপস, মুরগির পোল্ট্রি ফিডের ডিওসি, চিটাগুড় বা মোলাসেস সিমেন্ট তৈরির উপাদান ফ্লাই অ্যাস, চাল ও মোটরযান (ট্রাক্টর) জতীয় পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।
পণ্যবাহী ট্রেনগুলোতে ৪২ থেকে ৪৬টি ওয়াগন চলত। প্রতিটি ওয়াগনে ৩২ মেট্রিক টন করে প্রতিটি ট্রেনে একসঙ্গে ১,২০০ থেকে ১,২৫০ টন পণ্য পরিবহন করা যেত। রেলপথে পণ্য পরিবহনের ফলে দুই দেশের লজিস্টিক্যাল খাতের বড় চ্যালেঞ্জ দূর হয়েছে। পরিবহন ব্যয়ও কমেছে।
যদিও ভারত থেকে বাংলাদেশে রেলপথে কেবল পণ্য আমদানিই হয়, কোনো রপ্তানি হয় না।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৩ আগস্ট দুই দেশের মধ্যকার পণ্যবাহী ট্রেনের চলাচল বন্ধ হয়েছিল। এরপর নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২০ আগস্ট থেকে তা আবার চালু হয়েছে। তবে অন্যান্য করিডর দিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও বিরল-রাধিকাপুর করিডর বন্ধ ছিল।
পণ্য পরিবহন ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারতের ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি এবং খুলনা-কলকাতা আন্তঃদেশীয় রুটে তিন জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো। ১০টি কোচ সম্বলিত প্রতিটি ট্রেনে ৩৫০ থেকে ৪৫০ জন যাত্রী বহন করা যেত। গত বছর বাংলাদেশ গণঅভ্যুত্থানের সূচনার সময় ১৮ জুলাই বন্ধ হওয়া যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো এখনো চালু হয়নি।
মূলত ভারতে চিকিৎসা গ্রহীতা, পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা নিয়মিত যাতায়াত করতেন এসব ট্রেনে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুসহ দেশের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলার সময় বাংলাদেশ-ভারত করিডরে দৈনিক ৫-৬টি করে মাসে ১৫০ থেকে ২০০ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করত। ২০২০ সালের পর থেকে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গণঅভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ে দৈনিক একটি বা দুটি করে পণ্যবাহী ট্রেন চলত। এরপর তা একেবারে তলানীতে নেমে আসে। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী মাসে ২০-২৫টি ট্রেন চলাচল করছে।
রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) মামুনুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "৫ আগস্টের পর পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল কমে এসেছিল। এখন আবার তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। দুই দেশের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের চাহিদা ভিত্তিতে এসব ট্রেন চলে।"
"তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।