অর্থ পাচারের দায়ে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-কন্যাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১১.৩৪ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী এবং দুই কন্যার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ কমিশনের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আক্তার হোসেন জানান, বেনজীর আহমেদ ছাড়া মামলার অন্য আসামীরা হলেন– বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা, তার দুই মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর।
মামলার এজাহারে বলা হয়, 'বেনজীর আহমেদ তার অপরাধলব্ধ ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।'
দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, 'নগদে উত্তোলিত অপরাধলব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করার বা স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।'
মামলার এজহারে আরও বলা হয়, 'দুদকের অনুসন্ধান দলের ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, কর্পোরেট শাখা, ঢাকার গ্রাহক বেনজীর আহমেদ দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরপরই তার একাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল চেকের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা, তার স্ত্রী জীশান মীর্জার অ্যাকাউন্ট থেকে একই দিন ১ কোটি ও তার পরদিন ১ কোটি টাকা, তাদের বড় কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭.৫০ লাখ টাকা ২৯ এপ্রিল নগদ উত্তোলন করা হয়েছে। বর্ণিত টাকা তাদের নামীয় দীর্ঘদিনের এফডিআর হিসাব মেয়াদোত্তীর্ণের পূর্বেই একযোগে নগদায়ন করে উত্তোলন করেছেন। উক্ত এফডিআরের অর্থের গ্রহণযোগ্য কোন উৎস পাওয়া যায়নি। যা বেনজীর আহমেদ কর্তৃক র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিপিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে জানানো হয়।'
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, তাদের ২ কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর অর্থাৎ ৩ জনের যৌথ মালিকানাধীন 'সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ' সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ৩০ এপ্রিল সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ৩.০৭ কোটি টাকা এবং সাভানা ফার্ম প্রোডাক্ট নামের অ্যাকাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়।
দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধানে দেখা যায় যে জীশান মীর্জার প্রিমিয়ার ব্যাংকের উত্তরা শাখার সঞ্চয়ী হিসাব থেকে গত বছরের ৩০ এপ্রিল তারিখে ৬০ লাখ টাকা, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে গত বছরের ২৯ এপ্রিল তারিখে ২০ লাখ টাকা ও ৩০ এপ্রিল ১৬ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়েছে।
এজহারে বলা হয়, 'সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, কর্পোরেট শাখা, ঢাকার ৩টি; সোনালী ব্যাংক পিএলসি, লোকাল অফিস, ঢাকার ২টি, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিঃ, উত্তরা শাখা, ঢাকার ২ টিসহ ৩টি ব্যাংকের মোট ৭ টি হিসাব হতে সর্বমোট ১১.৩৪ কোটি টাকা নগদে দ্রুততম সময়ে (৪ কর্মদিবসে) উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা গোপন করেছেন মর্মে দেখা যায়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ বর্ণিত অর্থ উত্তোলনের পরই বিদেশে চলে যান। ফলে, উক্ত সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে আসামিগণ নগদে উত্তোলিত অপরাধ লব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মাবৃত্ত করার নিমিত্ত স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।'