অবৈধ বিদেশিদের চিহ্নিত করতে বাড়ি মালিকদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে পুলিশ

বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশিদের শনাক্ত করতে ঢাকা মহানগরের বাড়ি মালিকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বৈধ ও অবৈধ— উভয় ধরনের বিদেশি নাগরিকের তালিকা তৈরি করা হবে।
অবৈধ বিদেশি বাসিন্দাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব সিটি করপোরেশন, মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও জেলা প্রশাসকদেরও নির্দেশনা দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সাম্প্রতিক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, দেশের সব সীমান্ত চেকপোস্টে বিশেষ নজরদারি নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশ দেওয়া হবে।
এছাড়া, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
অবৈধ বিদেশি নাগরিক
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পরে প্রায় ১২ হাজার অবৈধ বিদেশি নাগরিক এক্সিট পাস নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে। তবে, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ডাটাবেইজের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৪০ জন। সারাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করতে এসবি চলমান অভিযান আরও জোরদার করেছে।
প্রায় ৪ হাজার ৫০০ বিদেশি নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট এবং সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের আবেদন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
যেহেতু তাদের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তাই তাদের বৈধ বলে বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
নিরাপত্তা অনুমোদনে বিলম্ব
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এক প্রতিনিধি জানান, বিদেশি আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় নথি দাখিলে বিলম্বের কারণে নিরাপত্তা অনুমোদনের তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। যাদের আবেদন এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, তাদের একটি তালিকা তৈরির প্রস্তাব দেন তিনি।
অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অনেক বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কর্মরত এবং তাদের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয় যুক্তিসঙ্গতভাবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া বিদেশিদের তথ্য জানাতে বিশেষ শাখা (এসবি) পুলিশকে অনুরোধ করেছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি সব সংস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
নজরদারির জন্য টাস্কফোর্স গঠন
অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোতে ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের সমস্যা মোকাবিলায় মন্ত্রণালয় ২ ফেব্রুয়ারি ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফের নেতৃত্বে এই টাস্কফোর্স বৈধ কাগজপত্রবিহীন বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
কাজী গোলাম তৌসিফের পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য উদ্ধৃত করে জানান, এরই মধ্যে ১২ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক এক্সিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা উল্লেখ করেননি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। এ কারণেই কঠোর নজরদারি ও নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করতে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'টাস্কফোর্স প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদানের ক্ষমতা রাখবে।'