আওয়ামী লীগের ৩ নেতার বাড়িতে ২য় দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর লক্ষ্মীপুর শান্ত

৫ আগস্টের পর দ্বিতীয় দফায় লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে আওয়ামী লীগের তিন নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই ভাঙচুরের পর শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের প্রধান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে। ক্ষমতা ছেড়ে তিনি ভারত পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীও বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার বাড়িগুলো হলো লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাসের বহুতল ভবন।
ওই দিন বিকেলে তিন থেকে চারশ' মানুষের একটি মিছিল প্রথমে চকবাজার এলাকায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান টিপুর পিংকি প্লাজায় ভাঙচুর চালায়। সন্ধ্যায় এক্সকাভেটর দিয়ে সেখানে আরও ভাঙচুর করা হয়, যা মধ্যরাত পর্যন্ত চলে।
একই সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য নয়নের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা রাকিবের বহুতল ভবনের নিচতলায় ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ লোকজন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিংকি প্লাজার সামনের অংশ ধসে পড়েছে। ভেতরে কোনো মালামাল নেই। এ সময় ভাঙারি ব্যবসায়ীরা লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম খুলে নিচ্ছিলেন।
শহরের উত্তর তেহমুনী এলাকায় সাবেক এমপি নয়নের বাসার সামনের অংশ ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। ভেতরের মালামাল লুট হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। ভবনটির নিচতলায় আগুনের চিহ্ন দেখা গেছে। ছাত্রলীগ নেতা রাকিবের ভবনের নিচতলাও সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোর থেকে সাধারণ মানুষ ভাঙচুর হওয়া বাড়িগুলোর আশপাশে ভিড় করতে দেখা গেছে। ভাঙচুরের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় শহরের কিছু এলাকায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না।
এ ঘটনায় নতুন করে কোনো ভাঙচুরের আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, শহরে আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতার বিরুদ্ধে জনরোষ নেই, তাই ভাঙচুরের সম্ভাবনাও নেই।
এ সময় রকি হোসেন নামক উপস্থিত এক দর্শক বলেন, 'আপাতত লক্ষ্মীপুর শহর শান্ত।'

এমরান হোসেন জনি নামক আরেকজন বলেন, 'গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপু তার বাসার ছাদ থেকে মিছিলের ওপর গুলি চালান। তাই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে। তবে অন্যদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই।'
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা পর্যন্ত শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন দেখা যায়নি।
বুধবার রাত ৯টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'বুলডোজার মিছিল' ঘোষণার পর একদল বিক্ষোভকারী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর ও তার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর চালায়। ওই সময় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ভাষণ দিচ্ছিলেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা।