পেট্রোবাংলার গ্যাস প্রকল্প বন্ধের নোটিশ অবৈধ: সামিট গ্রুপ

দেশের তৃতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ জানিয়েছে সামিট গ্রুপ। এটি বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তায় আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।
আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সামিট গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া অবৈধ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সামিট ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বাংলাদেশের সামিট এলএনজি টার্মিনাল ২ কোম্পানি লিমিটেড (এসএলএনজি ২)-এর নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানি।
পেট্রোবাংলা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত ১৪ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এসএলএনজি ২ এর সঙ্গে পূর্বে স্বাক্ষরিত টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট (টিইউএ)-এর আওতায় নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।
সামিট বলছে, তৃতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্পের জন্য গত বছরের ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলা এসএলএনজি ২ এর সঙ্গে টিইউএ ও আইএ স্বাক্ষর করে। এ চুক্তিগুলো ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা কমিটির আইনি যাচাইয়ের পর অনুমোদন দেওয়া হয়।
তৃতীয় এফএসআরইউ প্রকল্পটি ছিল বাংলাদেশে সামিট গ্রুপের দ্বিতীয় এফএসআরইউ প্রকল্প। প্রস্তাবিত টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসত।
তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর পেট্রোবাংলা জানায় যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এ প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে।
এরপর সামিট স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর শরণাপন্ন হয় এবং এটি নিশ্চিত হয় যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্টের নির্ধারিত শর্তাবলীর পরিপন্থী।
আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে সামিট গ্রুপ পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ সরকারকে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য আবারও অনুরোধ জানায়।
সামিটকে পাঠানো পেট্রোবাংলার ১৪ জানুয়ারির ওই চিঠিতে বলা হয়, শর্ত ভঙ্গ করার জন্য চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বিশেষত, সামিট এলএনজি টার্মিনাল ২ কোম্পানি লিমিটেড নির্ধারিত সময়ে [৯০ দিন] পারফর্মেন্স বন্ড জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মূল কোম্পানি সামিট করপোরেশন বন্ড জমা দিলেও পেট্রোবাংলা এটিকে যথাযথ বলে মনে করেনি।
এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন ১৫ জানুয়ারি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড চুক্তি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানায়। তারা দাবি করে, চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত 'অবৈধ কারণে' [ইনভ্যালিড গ্রাউন্ড] নেওয়া হয়েছে এবং তারা সময়মতো বন্ড জমা দিয়েছে।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট ৩০ দিনের একটি সময়সীমা দিয়েছে। ফলে এর মধ্যে কোনো শর্তের ব্যত্যয় হলে পেট্রোবাংলার আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে।
পেট্রোবাংলা নির্ধারিত এ সময়সীমার মধ্যে কোনো আপত্তি জানায়নি। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড আইনজীবীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে, পেট্রোবাংলা যেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাতিল করেছে তা চুক্তির পূর্বনির্ধারিত শর্তাবলীর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
সামিট আরও বলছে, টিইউএ অনুযায়ী কোনো শর্ত পূরণ না হলে যেকোনো পক্ষ নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে সে বিষয়ে লিখিত নোটিশ দিতে পারত। কিন্তু পেট্রোবাংলা তা করেনি। তাই চুক্তি বাতিলেরও অধিকার তার আর নেই।
সামিট জানিয়েছে, গত বছরের ২৮ জুনের মধ্যে পারফরম্যান্স বন্ড জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। ওইদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় পরবর্তী কর্মদিবস অর্থাৎ ৩০ জুন বন্ডটি জমা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, যদি কোনো কাজ নির্দিষ্ট দিনে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং দিনটিতে যদি সংশ্লিষ্ট অফিস বন্ধ থাকে, তাহলে পরবর্তী কর্মদিবসে ওই কাজটি করা হলে, তা যথাসময়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, 'বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে যে তৃতীয় এফএসআরইউ প্রকল্পসহ বর্তমানে জরুরিভাবে বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি অবকাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দেরি হওয়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চুক্তি অনুযায়ী ও জ্বালানি অবকাঠামোর উন্নয়নের স্বার্থে আমরা বলছি যে টিইউএ বাতিল অবৈধ এবং সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা আবারও চুক্তির পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।'