প্রিমিয়ার লিগে দলবদলের একদিন পরই নাম প্রত্যাহার সাকিবের

জাতীয় দলে কবে ফিরবেন বা আদৌ ফিরতে পারবেন কিনা, সেই নিশ্চয়তা নেই। এর মাঝে আছে বোলিং নিষেধাজ্ঞা। দেশে ফেরার পথও আপাতত সহজ নয় সাকিব আল হাসানের জন্য। এর মাঝেই এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দলবদল করেন তিনি। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে দলে ভেড়ায় লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। দেশে ফিরে তার খেলার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন দলটির স্বত্ত্বাধিকারী লুৎফুর রহমান বাদল। কিন্তু এক দিনের ব্যবধানেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। প্রিমিয়ার লিগ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সাকিব।
দলবদল প্রক্রিয়ায় নিজের নাম স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন সাকিব। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম টিটো। তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, সাকিব আল হাসানকে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জে খেলানোর জন্য দলবদল প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলাম। কাল তাকে আমরা দলে নিই। কিন্তু আজ সাকিবের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি আমাদের অনুরোধ করেছেন, তার দলবদলটা স্থগিত রাখার জন্য।'
ইতোমধ্যে সাকিবের জায়গায় আফিফ হোসেন ধ্রুবকে দলে ভিড়িয়েছে রূপগঞ্জ। তারিকুল ইসলাম বলেন, 'সাকিবের অনুরোধের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান বজায় রেখে তার আবেদনটা আমাদের ক্লাব থেকে সিসিডিএমকে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেছেন, যখনই দেশে আসতে পারেন... আপনারা জানেন, তিনি বর্তমানে দেশে আসতে পারছেন না। তিনি দেশে যখন আসবেন, আমরা চেষ্টা করব, গতবার তিনি যে দলে ছিলেন, সেই দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি যদি আমাদের দলে তখন খেলতে চান, তাকে আমরা লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জে দলভুক্ত করব। সাকিবের জায়গায় আমরা ইতোমধ্যে আফিফকে দলে নিয়েছি। 'যোগ করেন তিনি।
ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে রূপগঞ্জ কৃর্তৃপক্ষ। তাদের চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ২০২৪-২০২৫ ইং মৌসুমে দলবদলে আমরা সাকিব আল হাসানকে লেজেন্ডস্ অব রূপগঞ্জ ক্লাবের একজন খেলোয়াড় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করি। স্বশরীরে দলবদলে উপস্থিত না হওয়ায় পারিপার্শ্বিক সব বিষয় আমলে এনে লেজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ ইং মৌসুমে দলবদলে যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে, তা সাকিব আল হাসানের সাথে পরামর্শ করে স্থগিত করা হলো । সার্বিক বিষয়ের জন্য লেজেন্ডস্ অফ রূপগঞ্জ সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।'
বিদেশের মাটি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি ঘরের মাঠে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু ঘরের মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া হয়নি তার। বিপিএলের সর্বশেষ আসরে চিটাগং কিংস তাকে দলে ভেড়ালেও খেলা হয়নি সাকিবের। গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যে দেশেই ফেরা হয়নি দেশসেরা এই অলরাউন্ডারের। পতিত সরকার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। দেশে ফেরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জটিলতা তো আছেই, এর সাথে আছে ক্রিকেটীয় বাধাও। বোলিংয়ে নিষিদ্ধ আছেন তিনি।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করায় চরম সমালোচিত হন সাকিব। আন্দোলন শেষে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়, এর মধ্যে আছে একটি হত্যা মামলাও। নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলতে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হয় তাকে। কারণ, তার আসার খবরে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে কয়েকদিন চলে আন্দোলন।
দেশে ফিরতে পারছেন না, এমন ক্রিকেটারকে দলে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শনিবার রূপগঞ্জের মালিক লুৎফুর রহমান বলেন, 'আমার সঙ্গে যেটা কথা হলো যে, আমার মনে হয় তৃতীয় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, ইংল্যান্ডে আসছে রোজার মধ্যে। একজন কোচও নিয়েছে ইংল্যান্ডে। কোচ সম্মতি দিলে সে আবার পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষায় পাস করলে আমার ধারণা বাংলাদেশে সে খেলতে পারবে। অবশ্যই আমরা শতভাগ আশাবাদী (সাকিবকে দলে পাওয়ার ব্যাপারে)। সেই জন্যই দলে নেওয়া, নইলে আমরা নিবো কেন যদি না-ই খেলতে পারে।'
রাজনীতিবিদ সাকিবকে নয়, খেলোয়াড় সাকিবকে দলে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, 'আপনারা জানেন যে, দলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সাকিব আল হাসান। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ছিল। ঘরের ছেলে ঘরে আসছে, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় খবর। আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই যে, আমরা রাজনীতিবিদ সাকিবকে নিই নাই, আমরা খেলোয়াড় সাকিবকে নিয়েছি। সাকিব দেশের সম্পদ, আমরা চাই না সাকিব অচিরেই ঝরে যাক।'
দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন সাকিব। গত বছরের জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরে দুদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি, খেলেন মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি)। পরে কানাডাতে বাংলা টাইগার্স মিসিসাগার অধিনায়ক হিসেবে খেলেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি। এরপর আগস্টে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলেন সাকিব। এই সিরিজের পর ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলে ভারতে যোগ দেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে।
টেস্ট সিরিজ খেলে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরেন তিনি। মিরপুরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চাইলেও নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে ফেরা হয়নি সাকিবের। এর পর থেকে বাইরের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে সময় কাটছে তার। বাংলা টাইগার্সের হয়ে আবু ধাবি টি-টেন খেলা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার গত ডিসেম্বরে গল মার্ভেলসের হয়ে শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট লঙ্কা টি-টেন সুপার লিগে খেলেন।