জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিহতের ঘটনায় এক রিকশাচালক আটক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় ছাত্রী নিহতের ঘটনায় এক রিকশাচালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
গতকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকা থেকে আরজু মিয়া নামে এক রিকশাচালককে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দিবাগত রাত ২ টায় তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুর্ঘটনার সময় পথচারী নাঈম এবং রিকশায় যাত্রী হিসেবে থাকা আবু হায়াত ও নাহিদ রিকশাচালককে শনাক্ত করেন। তাদের মধ্যে নাঈম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন লাইব্রেরি ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর। অপর দুইজন আবু হায়াত ও নাহিদ সমাজবিজ্ঞান এক্সটেনশন ভবনের নির্মাণ শ্রমিক।
অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর নাঈম বলেন, "আমি তখন শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনার সাথে সাথে চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে মেডিকেলে নিয়ে আসি। আমি রিকশাওয়ালাকে অনেকটা শনাক্ত করতে পেরেছি।"
সমাজবিজ্ঞান ভবনের নির্মাণ শ্রমিক নাহিদ ও হায়াত বলেন, "আমরা ওইসময় টারজান থেকে এই রিকশায় উঠি। আমরা নিশ্চিত রিকশা এটাই। সে রিকশার সিট চেঞ্জ (পরিবর্তন) করেছে।"
তারা আরও বলেন, "এটার সামনের দিকে লাইট ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো এখনো আছে। গাড়ির নিচের দিকে নতুন রঙ করা হয়েছে। হাত দিয়ে দেখলাম, রিকশায় নতুন রঙ করেছে।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, "আমরা যখন বিভিন্ন সূত্র ধরে তাকে খুঁজে পাই, তখন তার বাম হাতে খুব ব্যথা ছিল। তার গলার পাশেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। সে বলেছে, এটা ১৫ দিন আগের ব্যথা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কোন ডাক্তার দেখিয়েছেন কি না?"
প্রক্টর আরও বলেন, "পরে মেডিক্যালের ডাক্তারকে দেখানোর পর নিশ্চিত হয়েছি, সে খুব সম্প্রতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সেদিনের দুর্ঘটনা থেকেই সে আঘাত পেয়েছ বলে আমাদের ধারণা।"
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিকশাচালক আরজু বলেন, "আমি আসলে রিকশা চালাই না। ১৫ দিন আগে থেকেই আমার হাতে ব্যথা ছিল। রিকশার ব্যাটারি একটু খারাপ ছিল দেখে কম দামে বেঁচে দেই। আমি ওইদিন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলাম না।"
অভিযুক্ত রিকশাচালকের বক্তব্যের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দুপুরের আগেই সে রিকশাটি সাভারের ছায়াবিথী এলাকার 'মাসুদ অটো পার্টস' এর মালিক মাসুদের কাছে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। সন্দেহ থেকে বাঁচতে বিক্রির দলিলে দুর্ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ১৮ নভেম্বরের তারিখ উল্লেখ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক অলক কুমার বলেন, "তাকে সন্দেহের মূল কারণ– তার মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা গেছে, সে ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগরে ছিল। বাকি আগে-পরের সময় সে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল। আবার ঘটনার পর সে রিকশা বিক্রির চেষ্টা করেছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছি।"
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি ব্যাটারিচালিত দ্রুতগামী রিকশার ধাক্কায় মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি গুরুতর আহত হন।
আহত অবস্থায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।