ধানমন্ডিতে বাড়ছে ডাকাতি-ছিনতাই; আতঙ্কে বাসিন্দারা

গত ১৯ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাজ সেরে কর্মস্থলে ফেরার পথে ধানমন্ডির ৮/এ রোড এলাকায় ভয়াবহ এক ডাকাতির শিকার হন রাসেল আলী।
বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্যুরো ডি চেঞ্জের ব্যবস্থাপক রাসেলকে হঠাৎ চারজন হেলমেটধারী যুবক লাথি মেরে ফেলে দেয়। আক্রমণকারীদের একজন একজন হাতে থাকা বিদেশি রিভলভার দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে আকাশের দিকে। একজন রাসলকে জাপটে ধরে। বাকি দুজন রাসেলের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ধস্তা ধস্তি করতে থাকে।
আশেপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেউ এগিয়ে আসছিলেন না গুলির ভয়ে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আরেকটি গুলি করে দুর্বৃত্তরা, সেটি রাসেলের কানের পাশ দিয়ে যায়। এরপর তার হাতের ব্যাগটি কেড়ে নিয়ে চার দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়।
ধানমন্ডিতে সম্প্রতি এরকম আরও বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে, যদিও সম্প্রতি চুরির ঘটনা কিছুটা কমেছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনা স্মরণ করে রাসেল বলেন, 'সেদিন একজন আমাকে আগে থেকেই অনুসরণ করছিলো। ব্যাগের সঙ্গে সেদিন আমার মানিব্যাগ নিয়ে যায় ওই সন্ত্রাসীরা। শুধু ফোনটা সঙ্গে আছে। এখন রাস্তায় বের হলে মনে হয় এই ফোনটাও কেউ টান দিয়ে নিয়ে যাবে। সড়কে চলাফেরা করতে খুব আতঙ্ক ও ভয় কাজ করে মনে।'
রাসেলের কাছে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া ওই ব্যাগে ছিল প্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকা।
ঘটনার পরদিন ধানমন্ডি মডেল থানায় মামলা করেন বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানটির মালিক কাইয়ুম রেজা। তবে পুলিশের কার্যক্রম তার মনে কোন আশা জাগাতে পারেনি।
আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে কাইয়ুম রেজা বলেন, 'ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। সেখানে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের অনেককেই চিহ্নিত করা সম্ভব। তারপরও পুলিশ আশানুরূপ অগ্রগতি করতে পারছে না। আমরা ডিবি, র্যাবের দপ্তরে দপ্তরে দৌড়াচ্ছি। জানি না কীভাবে কী হবে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়হান সিদ্দিকী শামীম বলেন, 'আমরা সিসিটিভি ফুটেজ ধরে কাজ করছি। বেশ কিছু মোটিভ নিয়ে সামনে এগোচ্ছি। আশা করি ইতিবাচক কোনো ফলাফল আসবে।'
ধানমন্ডিতে শুধু এই ঘটনাই নয়, কাছাকাছি সময়ে কাছাকাছি এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ৮/১ নম্বর সড়কে কাকলি স্কুলের সামনে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন রাইয়ান ভূঁইয়া নামের এক শিক্ষার্থী। ওই দিনই ধানমন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রাইয়ানের মা তাজনুর জাহান। কিন্তু সেটি থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি।
একইভাবে মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন তাসরীন শামীমা। উভয় ভুক্তভোগীই জানিয়েছেন আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার কথা।
তবে অপরাধের মাত্রা বাড়ার পরও থানাগুলো ডাকাতির মামলা নিতে অনিচ্ছুক বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সঠিক পরিসংখ্যান সংগ্রহে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ডিএমপি (ঢাকা মহানগর) এলাকায় ১৫০টি স্থায়ী ও মোবাইল চেকপোস্ট কার্যকর রয়েছে। ৩০০টি মোটরসাইকেল টিম ও ২৫০টি টহল টিম কার্যকর রয়েছে।
তিনি বলেন, 'দেশব্যাপী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা, গ্রেপ্তারসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—যা চলমান রয়েছে।'
নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করতে কর্তৃপক্ষ কাজ করলেও অনেক বাসিন্দা ক্রমবর্ধমান অপরাধ উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পুলিশি পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন।