লক্ষ্মীপুরে দূর্গম অঞ্চলে ত্রাণ ও সুপেয় পানি সংকট

লক্ষ্মীপুরে প্রতি ঘন্টায় জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি।
অন্যদিকে শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি থেমেছে সোমবার (২৬ আগষ্ট) দুপুরে। এতে বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে ছয় ইঞ্চি পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান।
ত্রাণ বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবক এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যে জেলার ৪২টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌরসভায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
ভবানীগঞ্জ, তেয়ারিগঞ্জ, কুশাখালী এবং লাহারকান্দি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে এসব ইউনিয়নে কোন শুকনো জায়গা নেই। গ্রামের বেশিরভাগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বশিকপুর এলাকার গৃহবধূ শাকিলা আক্তার বলেন, আমি ১৯৯৮ সালের এবং ২০০৪ সালের বন্যা দেখেছি। কিন্তু এবারের বন্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয়ে থাকা শাহজাহান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি সহযোগিতা পাইনি। তবে কয়েকটি সংগঠন শুকনো খাবার দিয়ে গেছে।
সদর উপজেলার এমলিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় নেয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজিম বলেন, এখানে সুপেয় কোন পানি নেই। শিশুখাদ্যের ব্যবস্থা নেই।
স্বেচ্ছাসেবক ও কলেজছাত্র মো. রিমন রাজু জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ দিচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক সংগঠন। সেচ্ছাসেবী সংগঠন 'স্বপ্ন নিয়ে' এর প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, আমরা বন্যার্ত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার, চাল-ডালসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করছি। তবে দূর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকার মানুষ এখনো ত্রাণ পায়নি।

স্বেচ্ছাসেবক আলমগীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন সংগঠন দূরদূরান্ত থেকে এসে মূলত সড়কের পাশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। পানির জন্য এবং ছোট বড় কোন নৌকা কিংবা ভেলা না থাকায়– কেউ ভেতরের দিকে আর ঢোকেন না। অথচ প্রধান সড়কগুলো থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের মানুষের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে খাবার নেই, পানি নেই, অনেকের ঔষধ দরকার, মশার কয়েল দরকার, মোমবাতি দরকার।
পশু চিকিৎসক আলাউদ্দিন জানান, পানির সাথে সাথে সাপের উপদ্রব বেড়েছে।
অন্যদিকে প্রশাসনের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যতিক্রম দেখা গেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূচিত্র রঞ্জন দাসকে। কখনো কখনো বুক সমান পানিতে নেমে, আবার কখনো কখনো নিজেই নৌকা চালিয়ে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন দূর্গতদের বাড়ি। গত কয়েক দিন যাবত এ রকম কার্যক্রমে তাকে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৮টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার জন্য ১৫৫ টন চাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া এসব এলাকার বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো বন্যার্ত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, পানিবন্দী হয়ে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও নোয়াখালী থেকে আসা পানির চাপে লক্ষ্মীপুরের ৪৫টি ইউনিয়নে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।