জামায়াত নেতার মৃত্যু: লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

প্রতিপক্ষের হামলায় লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও কর্মসূচি পালন করেছে জেলা জামায়াত ও জেলা বিএনপি।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা জামায়াত। লিখিত বক্তব্যে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুর নবী বলেন, গত ৫ জুন বেলা সাড়ে ১১টায় পূর্ব বিরোধের জেরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মো. রিয়াজ, রনি, কামাল, সোহাগ, জহির, রকি, বাবুল, সোহাগ বেছা, বাবুল, সাহেদ, সুমন, স্বপন আহমেদসহ আরো অজ্ঞাত ১৫-২০জন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতা ও স্থানীয় ইমাম কাউছার আহমেদ মিলনকে (৬০) আহত করে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত নেতা কাউছারের অবস্থা খারাপ দেখে স্বজনরা তাকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করান। পরে খুনিরা হাসপাতালের আশপাশে এসে হুমকি দেয়। এতে ভীত হয়ে কাউছার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু পরে কাউছারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ৮ জুন রাতে নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাতে বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামীরা সবাই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আদিলপুর ও রাজিবপুর এলাকার বাসিন্দা।
জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুরনবী আরো জানান, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুন লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানী দাবি করেন যে, জামায়াত তাদের কথা রাখেনি। কিন্ত কী কথা রাখেনি তা তিনি পরিষ্কার করেননি। প্রকৃতপক্ষে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যে কথা হয়েছে তা হলো নিহত কাউছার আহমেদের পরিবারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে খুনী ও অভিযুক্তদের বিএনপির দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

কিন্ত ঘটনার দীর্ঘ সময় পরেও বিএনপি নেতারা নিহতের পরিবার এবং জামায়াত নেতাদের সাথে আলোচনা করেননি এবং খুনীদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি বলে অভিযোগ করেন ফারুক হোসাইন নুরনবী। তিনি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএনপিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর(উত্তর) জামায়াতের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এআর হাফিজ উল্লাহসহ অনেকে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান জামায়াত নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এতে লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান লিটন, সদর (পূর্ব) উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান হারুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন রনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি সংবাদ সম্মেলন ডেকে একটি সামাজিক সমস্যাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে।
সোমবার (৯ জুন) সকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধূরী এ্যানী বলেন, ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, জামায়াত বিষয়টিকে নোংরা রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছে। একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে জামায়াত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে, যা নিন্দনীয়। পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের হামলার জামায়াত নেতা কাউছার আহম্মদ মিলনের (৬০) মৃত্যুর ঘটনা রাজনৈতিকভাবে টেনে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, 'আমরা জামায়াতকে অনুরোধ জানিয়েছি ঘটনাটি যেন রাজনৈতিকভাবে না নেওয়া হয়। নিহত কাউছারের ভাই আরজু ছিলো যুবলীগের কর্মী। আরজু মাদক ও তার ছেলে চুরির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। সামাজিক এ অবক্ষয়ের এলাকাভিত্তিক মারামারির ঘটনা ঘটে।'
তিনি আরও বলেন, 'জামায়াতের নেতারা আমাদেরকে কথা দিয়েছেন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। অথবা ১-২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করবেন। কিন্তু তারা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তারা কথা দিয়ে কথা রাখেননি।'
উল্লেখ্য, নিহত কাউছার আহমেদ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার রাজিবপুর এলাকার মৃত মমিন উল্লাহর ছেলে ও স্থানীয় জামায়াতের একটি ইউনিটের সভাপতি এবং একটি মসজিদের ইমামের দায়িত্বে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৫জুন) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাংঙ্গা খাঁ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিবপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনি নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় জামায়াত দাবি করে, বিএনপি সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় একটি ঘটনা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়।