উত্তরায় ২জন নিহত, আহত অন্তত ৬২
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি আদায়ে ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে উত্তরার জসিম উদ্দীন রোড, রাজলক্ষ্মী মার্কেট এলাকা ও আজমপুরে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হতে থাকে। পরে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল জসিম উদ্দীন রোডে পৌঁছালে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় এক আন্দোলনকারী ও এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হন।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম। তার ভাই ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব হাবিব হাসান মৃত্যূর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আন্দোলনকারীর নাম ফাহিম (১৭) বলে জানিয়েছে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের কর্মকর্তারা। তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে আনা হয়।
সকাল থেকে উত্তরার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে শুরু করেন। ১১টার দিকে তারা একত্রিত হয়ে রাস্তা বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় একদল আন্দোলনকারী জসিমউদ্দিন রোডে অবস্থান করছিল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে আওয়ামী লীগের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে আসেন। এ সময় দুপক্ষ মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে যায়। সেখানে আওয়ামী লীগের দুজন গুরুতর আহত হন এবং এক কর্মীর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এতে রাজলক্ষ্মী ও আজমপুর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ দুই জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
দুপুর ১টার দিকে আওয়ামী লীগের একটি বিশাল দল রাজলক্ষ্মী ও আজমপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। আন্দোলনকারীদের ভাষ্যমতে, তখন ছাত্রলীগ কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে এসে তাদের উপর গুলি চালায়। আন্দোলনকারীরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন বেশ কয়েকজন আহত হয়।
প্রায় ঘণ্টাখানেক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার সময় সংঘর্ষ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ২টার আগে আন্দোলনকারীরা আবার রাজলক্ষ্মী ও আজমপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের লোকজন জসিমউদ্দিন রোড ও বিভিন্ন অলি-গলিতে অবস্থান নেয়।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, গুলিতে পাঁচজন নিহত ও বহু হয়েছে। তবে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে একজন আন্দোলনকারীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃত আন্দোলনকারীর নাম মাহিম। তার বয়স ১৭ বছর। উত্তরার দিয়াবাড়ির বাসিন্দা। তার মাথায় গুলি লেগেছিল।
এদিন উত্তরায় সংঘর্ষে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১২ জন , ক্রিসেন্ট হসপিটালে ১৩ জন ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ৩৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তরার আধুনিক হসপিটালে ১০জন গুলিবিদ্ধ ছিল। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আটজন গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
