হঠাৎ বৃষ্টিতে স্থবির নগরজীবন

বাসায় ইফতার তৈরির জন্য মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) একটু আগেভাগেই অফিস থেকে বের হয়েছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী রহিমা আক্তার। কিন্তু ৩টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছাতেই হঠাৎই শুরু হয় বৃষ্টি।
কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে ঘণ্টাখানেক সেখানেই অপেক্ষা করেন তিনি। বৃষ্টি থামার পর যখন তিনি রিকশা নিয়ে শাহবাগ যাবেন, তখন দেখেন রাস্তায় পানি জমে গেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।
এরপর রহিমা অনেক কষ্টে মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশনে পৌঁছান। সেখানেও আরেক বিপত্তি। মেট্রোরেল আধা ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত ইফতারের আগে মিরপুর-১২ এলাকায় বাসায় ফিরতে পারলেন না তিনি। শেষে বাসায় যেতে তিনি বাসে ওঠেন, পৌঁছান রাত ৮টায়।
রহিমা ফোনে হতাশা প্রকাশ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত কয়েকদিন তীব্র গরমের পরে স্বস্তির বৃষ্টি নামলেও তা আমার জন্য ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বিকালে বাসায় এসে ইফতারি প্রস্তুত করে পরিবার নিয়ে একসঙ্গে ইফতারের পরিকল্পনা ছিল, সেখানে রাস্তাতেই সময় কেটে গেছে।'
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'এমন শহর নিয়ে আমরা স্মার্ট হতে চাই যেই শহর এক ঘণ্টার বৃষ্টিও ধারণ করতে পারে না। সাথে সাথে মেট্রারেলও বন্ধ ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। আমরা কি এসব সমস্যার সমাধান কখনোই দেখব না?'
শুধু রহিমাই নন, বৃষ্টির কারণে তার মতো আরও অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে রাজধানীর নিউমার্কেট, পল্টন, শান্তিনগর, বেইলি রোড, মালিবাগ, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় প্রধান সড়কগুলোসহ অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি জমে ভেসে ওঠে ড্রেনের ময়লা। সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটও।
এদিকে বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন দোকান ও বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল না বললেই চলে। তবে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা অনেককেই ভেজা কাপড়ে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস নগর ভবনে এক সভায় বলেন, 'দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যাগুলোর একটি জলাবদ্ধতা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, খাল-নালা-নর্দমা থেকে বর্জ্য অপসারণসহ ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। অনেক জায়গায় এখনও কাজ চলছে। নতুন করে অনেক জায়গায় কাজ হবে। এই সামষ্টিক কার্যক্রমে আপনাদের নিরলস কর্ম প্রয়াস আমাদের সহযোগিতা করে থাকে।'
আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। তবে এই সময়ে এমন বৃষ্টি অস্বাভাবিক নয়।
এদিকে মঙ্গলবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায়, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং চট্টগ্রামের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহস বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।