হাঁকডাক দিয়ে নির্বাচনে আসা বিএনএম অফিসে টু-লেট ঝুলছে!

দেশের রাজনৈতিক চিত্র বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নির্বাচনের পরপরই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। রাজধানীর গুলশানে ভাড়া নেওয়া আলিশান অফিস নির্বাচনের পরই খলি করে দিয়েছে দলটি।
গত বছরের ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় বিএনএম। শুরুতে দলটির প্রধান কার্যালয় ছিল মহাখালীর একটি চারতলা ভবনের চতুর্থ তলায় ছোট দুটি কক্ষে। একটি কক্ষে অফিস, আরেকটি ছিল সভাকক্ষ। তবে ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে গুলশান-২-এ ২২৮৫ বর্গফুটের আলিশান কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করে দলটি।
গুলশানের সেই কার্যালয় থেকেই বিএনএমের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থী বাছাই করা হয়। তখন কার্যালয়ে কিছু নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল।
কিন্তু নির্বাচনের দিন থেকেই বিএনএমের কার্যালয়ে ছিল সুনসান নীরবতা। নেতাকর্মীরা না আসায় দিনের অনেকটা সময় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল।
বৃহস্পতিবার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়টি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। ভবনটির বাইরের দিকে ঝুলছে 'টু-লেট' বোর্ড। সেখানে ফ্ল্যাটের মালিক ও ম্যানেজারের ফোন নম্বর দিয়ে লেখা আছে, ২২৮৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি অফিস বা ব্যাংক হিসেবে ভাড়া দেওয়া হবে।
ভাড়া নিতে ইচ্ছুক, এমন পরিচয়ে এই প্রতিবেদক ফ্ল্যাট মালিক মারফত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফ্ল্যাটটির ভাড়া ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অগ্রিম দাবি করেন ৩০ লাখ টাকা।
ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মারফ আলী আগের ভাড়াটিয়া প্রসঙ্গে বলেন, জায়গাটি বিএনএমকে ৩ মাসের জন্য ফ্রিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তাদের থেকে কোনো অগ্রিমও নেওয়া হয়নি।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দলটির অফিস ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা পরবর্তীতে না নামলে ২৫ ফেব্রুয়ারি বাধ্য করা হয় তাদেরকে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে।'
জায়গাটি যখন বিএনএমকে দেওয়া হয়, তখন বেশ কয়েকজনের অনুরোধ এবং সম্পর্কের খাতিরেই দেওয়া হয়েছিল বলে জানান ফ্ল্যাটমালিক।
পরে টিবিএসের একজন প্রতিবেদকের পৃথক ফোনকলে সাড়া দিয়ে মারফত আলী বলেন, অফিসের জায়গা ভাড়া নেওয়ার সাথে জড়িত ছিলেন তার ছেলে, তিনিত ভাড়াসংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানতেন না।
এদিকে বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহজাহান টিবিএসকে বলেন, তিন মাসের চুক্তি শেষ হওয়ার পর তার দল স্বেচ্ছায়ই গুলশানের অফিস ছেড়ে দিয়েছে।
'নির্বাচন আসন্ন থাকায় আমরা তড়িঘড়ি করে গুলশানের অফিসটি নিয়েছিলাম। মালিক রাজনৈতিক দলের অফিস দিতে রাজি না থাকায় আমরা অফিসটি ছেড়ে দিয়েছি। ফ্ল্যাটমালিকের সাথে সমঝোতার মাধ্যমেই আমরা অফিসটি নিয়েছিলাম এবং ছেড়েছি। এখানে কেউ কাউকে বাধ্য করেনি,' বলেন তিনি।
শাহজাহান আরও বলেন, বিএনএম গুলশানেই আরেকটি কার্যালয় ভাড়া নিয়েছে। তবে অফিসটির অবস্থান জানাতে রাজনি হননি তিনি। 'ঈদের পরে আমরা সবাইকে নিয়ে নতুন অফিসে কার্যক্রম শুরু করব।'
তিনি অবশ্য দলে কোনো অস্থিরতা থাকার কথা অস্বীকার করেন। 'রমজানের কারণে দলের লোকজন নিজ নিজ এলাকায় আছেন। আমরা বিভিন্ন জেলা, উপজেলার কমিটি নিয়ে কাজ করছি। রমজানের পরে আমরা মূল কার্যক্রমে ফিরছি।'
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হিসেবে বিএনএমকে 'নোঙর' বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্বাচনে ভালো করার লক্ষ্য ছিল দলটির। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, ৫৬টি আসনে প্রার্থী দেয় দলটি।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনএম কোনো আসন জিততে পারেনি এবং একজন প্রার্থী ছাড়া দলটির বাকি সব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।