পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে স্মার্ট ট্রাফিক বক্স তৈরি করবে ঢাকা উত্তর

ফুটপাত ও সড়কে প্রথাগত ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কারণে যানজট বাড়ার কথা স্বীকার করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পাঁচটি এলিভেটেড স্মার্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
এই ট্রাফিক বক্সগুলো পুলিশ কর্মকর্তাদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি পথচারীদের চলাচলে ব্যাঘাত কমিয়ে আনবে।
প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি ২০০-৩০০ বর্গফুট আয়তনের বক্সগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে।
তবে এ সমাধান কতটুকু টেকসই ও নান্দনিক হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ বিষয়টি টেকসই নয়। বরং এমনটা তৈরি হলে ট্রাফিক পুলিশ বক্সগুলো আরও নগরের সৌন্দর্য নষ্ট করবে। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা সদস্যদের ফুটপাতে নামতে-উঠতে হবে। সব জায়গায় এ থিওরি খাটবে না।'
পুলিশ বক্সের সমাধানের বিষয়ে এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, 'প্রথমে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্পোরেশনের (রাজউক) একসাথে বসে চিহ্নিত করা উচিত কোথায় কোথায় পুলিশ বক্স দরকার। এরপরে ওইসব জাগার আশপাশের প্লট চিহ্নিত করে মালিকদের মধ্যে একধরনের সমঝোতার মাধমে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য অফিস নির্মাণ করা সম্ভব।

'এটা হতে পারে, যে প্লটে নির্মাণ হবে সেই প্লটের মালিককে রাজউক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) দ্বিগুন সুবিধা দেবে। এতে প্লট মালিকও উপকৃত হবেন, সাথে সাথে সমস্যাও সমাধান হবে। এজন্য দরকার পরিকল্পনা ও আগ্রহ।'
ইতিমধ্যে, ডিএনসিসি এই স্মার্ট বক্সগুলো নির্মাণের জন্য দরপত্র ঘোষণা করেছে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ ফেব্রুয়ারি। চলতি বছরের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল) নাঈম রায়হান খান প্রকল্পের জন্য ডিএমপির সঙ্গে চলমান আলোচনার বিষয়টি টিবিএসকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'এ ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সুবিধা হচ্ছে, যেখানে স্থাপন করা হবে বক্সগুলো, সেখানে পথচারী ও যান চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে না। একতলারও বেশি উঁচুতে বক্সগুলো স্থাপন করা হবে। যেখানে ওয়াশরুম সুবিধাসহ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এর ইনটেরিয়রে ডিএমপি সুবিধামতো তাদের ডেকারেশন করে নিতে পারবে।'
ফার্মগেটে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এমন একটি এলিভেটেড ট্রাফিক বক্স নির্মাণ করেছে। এই আদলেই ঢাকা উত্তর পাঁচটি স্মার্ট পুলিশ বক্স নির্মাণ করতে চাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলিভেটেড বক্স তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে যে পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করেছে সেগুলো হলো: মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, খামারবাড়ি ইন্টারসেকশন, তেজগাঁওয়ের লাভ রোড এবং জাহাঙ্গীর গেইট।

ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা বলছে, তাদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে এবং যেসব স্থানে বক্সগুলো করা হবে, সেখানে লোকবল ও চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করে তৈরি করা হলে সেগুলো ট্রাফিক পুলিশের জন্য উপকারী হবে। ফার্মগেট বক্সের আকার ও অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ।
যানবাহনের চলাচল, কর্মীদের চাহিদা এবং নারী কর্মকর্তাদের জন্য সুবিধার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে নির্দিষ্ট স্থানে বক্সের আকার, নকশা ও সেবাগুলো তৈরির সুপারিশ করেছে তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগের প্রশংসা করলেও নকশার সিদ্ধান্তে ডিএমপির যুক্ত থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, 'সিটি কর্পোরেশনের এটা একটি ইতিবাচক চিন্তা। তবে আমরা সিটি কর্পোরেশনকে বলেছি, যখন যে স্থানে এ বক্সটি নির্মাণের ডিজাইন তৈরি করা হবে, তখন আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সমন্বয় করতে হবে। কারণ স্থানভেদে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের আয়তন, ডিজাইন, পরিষেবা ভিন্ন হতে পারে। কারণ ট্রাফিক মুভমেন্ট, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা, নারী সদস্যের সুবিধা—এসব বিষয় প্রাধান্য দিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে নির্মাণে গুরুত্ব দিতে হবে।'
উল্লেখ্য, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সম্প্রতি পথচারীদের চলার পথে বাধা সৃষ্টিকারী বেশ কয়েকটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স সরিয়ে নিয়েছে। উভয় সিটির মেয়রই ফুটপাত ও সড়কে অননুমোদিত বক্স নির্মাণের জন্য জিরো-টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন।