বায়ু দূষণ রোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫০ স্থানে বসানো হবে ‘এয়ার পিউরিফায়ার’

বায়ু দূষণ রোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫০টি স্থানে 'এয়ার পিউরিফায়ার' বসানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। প্রতিটি এয়ার পিউরিফায়ার প্রায় ১০০ গাছের সমপরিমাণ বাতাস বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা করতে সক্ষম এবং এগুলো বসাতে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) 'দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা' শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে এ কথা জানান মোহাম্মদ এজাজ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর যৌথ আয়োজনে এ পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়।
এজাজ বলেন, "ঢাকায় বায়ু দূষণের বড় কারণ ২০ বছরের পুরোনো যানবাহন। এছাড়া নির্মাণকাজসহ নানা কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে। দূষণ ঠেকাতে পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে ডিএনসিসি। নির্মাণকাজসহ অন্যান্য কারণে দূষণ কমিয়ে আনা যায় সে ব্যবস্থার দিকে যাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে এয়ার পিউরিফায়ার।"
তিনি বলেন, "এয়ার পিউরিফায়ারগুলো বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে বসানো হবে। প্রায় একশটি গাছ বাতাসকে যেমন বিশুদ্ধ করে, ঠান্ডা করে, একেকটি ডিভাইস বাতাসকে সে পরিমাণ বিশুদ্ধ করবে। এই ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশনের দিকে আমরা যাচ্ছি। দূষণ কমাতে কুইক সল্যুশন দরকার। আবার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নিয়েও আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, "ডিভাইসগুলো একটু দামি, কিন্তু আমরা স্পন্সর পেয়েছি ৫০টি পিউরিফায়ার বসিয়ে দেওয়ার। এতে সিটি করপোরেশনের কোনো টাকা খরচ হবে না। এই মাসেই আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে যাব।"
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, "ঢাকা শহরের বেশ কিছু পরিকল্পিত এলাকা আছে যেখানে বিল্ডিংগুলোর উচ্চতা কাছাকাছি। ফলে সেই বিল্ডিংগুলোর সোলার ক্লিয়ারেন্স অনেক বেশি। সেই এলাকাগুলোতে পরিকল্পিত ভাবে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। পাশাপাশি, ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পাড়কে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব। এতে করে জাস্ট ট্রানজিশন (ন্যায্য রূপান্তর) এবং ন্যায্য নগরের যে চিন্তা-ভাবনা আমরা ধারণ করছি তা অর্জন করা সম্ভব।"
তিনি আরও জানান, রুফটপ সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের হোল্ডিং ট্যাক্স এর ওপর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার কথা ভাবছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

পলিসি ডায়ালগের মূল প্রবন্ধে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, "আমাদের প্রাণের নগরী ঢাকা জীবনের মান সূচকে শেষ দিক থেকে ৪র্থ, বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির শহর, বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে, দূষিত শহরের তালিকায় ৬ষ্ঠ, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার ১ম সারিতে, বিশ্বে যানজটের সূচকে ৫ নম্বরে, পৃথিবীর ৪র্থ ঘনবসতিপূর্ণ শহর, শব্দ দূষণেও শীর্ষে ঢাকা এবং স্বাস্থ্যসেবার সূচকে শেষের দিকে।"
তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স (ইপিআই) এর ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৫তম। এক কথায় ঢাকা শহর আজ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের সম্মুখীন। শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরের পরিবেশের প্রতিটি দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এই দূষণগুলো থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, "ঢাকা শহর একটি অপরিকল্পিত শহর। এ অপরিকল্পিত নগরে এত সহজেই ন্যায্যতা পাওয়া সম্ভব নয়। সর্বপ্রথম শহরকে সঠিক পরিকল্পনারায় এনে এবং সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারব।"
বিআইপি-এর প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, "বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্পখাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। এটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান ড. এম. শহীদুল ইসলাম বলেন, "দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে শতাধিক উপায় রয়েছে। আমাদের চাহিদাটাকে কমিয়ে আনতে হবে। আমরা যদি গণপরিবহন ব্যবহার করি তাহলে দূষণ কমবে পাশাপাশি দূষণকারী যারা আছেন তাদেরকে সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।"
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স- এর (বিআইপি) উপদেষ্টা বোর্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, "ঢাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রুফটপ ম্যানেজমেন্ট হতে পারে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের অন্যতম উৎস। শুধু দূষণ নিয়ে কথা বলে, সরকারের উপর এর নিয়ন্ত্রণের দায়ভার চাপিয়ে দিলে চলবে না। আমরা যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করি তাহলে কোন ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া ছাড়াই আমরা একটি সুষ্ঠু ও দূষণমুক্ত শহর গড়ে তুলতে পারবো।"