কুষ্টিয়ার ৪টি নৌকার জন্য ৪১ মাঝির দৌড়ঝাঁপ
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ৪১ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এখন মনোনয়ন নিশ্চিতে দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের দ্বারে দ্বারে দৌড়ঝাঁপ করছেন তাঁরা। নৌকা প্রতীকের এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন– আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক বা বর্তমান সংসদ সদস্য, আইনজীবী ও সাবেক আমলা।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন কিনে জমা দিয়েছেন ৪১ জন নৌকা-প্রতীক প্রত্যাশী। কুষ্টিয়ার চারটি আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চান তারা। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে ১৭ জন, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে ৬ জন, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে ৬ জন এবং কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসন থেকে ১২ জন মনোনয়ন কিনেছেন। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বহুভাগে বিভক্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর থেকে দলের মধ্যে বিভাজন বাড়তে থাকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে দৌলতপুর আসনে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা বেশ দীর্ঘ। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৭ জন।
তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরী, তার ভাই বুলবুল আহমেদ চৌধুরী, দৌলতপুর উপজেলার ডাংমড়কা গ্রামের প্রয়াত সাংবাদিক নাহারুল ইসলাম মন্টুর বড় ছেলে সাংবাদিক ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব।
অন্যান্যরা হলেন– দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মৃত আফাজ উদ্দিন আহমেদের ছোট পুত্র অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস, আফাজের মেজো পুত্র ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমেদ বিশ্বাস, বড় ছেলে নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাস,দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন, কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এ্যাডঃ দেওয়ান মাসুদ করিম মিঠু, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য ড. মোফাজ্জেল হক, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় গ্রামের মাহমুদুল হাসান রাকিব।
কুষ্টিয়া-১ এর মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন– দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. হাসানুল আসকার হাসু, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী খান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারিক আল মামুন, আবদুল জলিল ও আহসান হাবিব।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আফাজ উদ্দীন আহমেদের তিন ছেলে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে চান। আফাজ দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে তিন ভাই কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সবাই আলাদাভাবে রাজনীতি করেন।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেতে চান ৬ জন। এই আসনে টানা তিনবার মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিতে চান না। তারা আওয়ামী লীগের কাউকে নৌকা প্রতীক দিতে কেন্দ্রে যোগাযোগ করছেন।
আওয়ামী লীগের এ নেতারা হলেন - রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. ইফতেখার মাহমুদ, মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী, ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরিফুজ্জামান নবাব, সৈয়দ কামরুল আরিফিন ও রশিদুল আলম।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে চান ৬ জন। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. এ এফ এম আমিনুল হক রতন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনজুমান লাইলা বানু।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহাতাবুল হক জয় ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য, প্রবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম। শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় মন্ত্রিসভায় আমীর-উল ইসলাম খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। প্রথম জাতীয় সংসদে তিনি এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে চান ১২ জন। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রউফ, সাবেক সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদ হোসেন জাফর, সুনীল কুমার চক্রবর্তী, সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর, শাহিনুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অভি চৌধুরী ও মিজানুর রহমান।
