বগুড়ায় পুলিশ হেফাজতে সন্দেহভাজন আসামির মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বগুড়ায় পুলিশের হেফাজতে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি– এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়া পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে মারা যাওয়া হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) এক আইনজীবীর সহকারী ছিলেন। মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে হাবিবুর রহমানের সহকর্মী ও স্বজনদের দাবি, আটকের পর পুলিশ তার ওপর নির্যাতন চালায় এবং মৃত্যুর পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বগুড়া জজ কোর্টের আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, "আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি হাবিব মারা যাবে। পুলিশ জলজ্যান্ত একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে এসে বিনা অপরাধে নির্যাতন করে মেরে ফেলবে। সে নিয়মিত একজন মোহরার ছিল। আমার কাজ করতো।"
হাবিবুর রহমানের হত্যার ঘটনায় উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়ে বগুড়া জেলা আইনজীবীর সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, "আজকে যাকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি আমাদের সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক। তাকে কোর্ট চত্বর থেকে বিনা ওয়ারেন্টে, বিনা এজাহারে কোনো মামলা না থাকার পরেও তাকে সন্দেহজনকভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়; ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। তার কোনো চিকিৎসা পর্যন্ত করা হয়নি। কারণ তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।"
যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাবিবকে হাসপাতালে নেওয়া হয়; সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, "তাকে (হাবিবুর রহমান) কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কারণ তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের কোনো সময়ই পাওয়া যায়নি। তারপরেও এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।"
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আতিকুর রহমান জানান, "মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে হাবিবকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার বুকে ব্যাথা ছিল। অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এরপর অনেকক্ষণ চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে রাতে ওই রোগী মারা যান।"
এদিকে পুলিশ জানায়, প্রায় দশ বছর আগে শাজাহানপুরের জোড়া তালপুকুর এলাকায় বিপুল নামে এক কিশোরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। সেই হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি হাবিবুর রহমান। ওই হত্যা ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিলেন তার সৎ মা খুকু বেগম। কিন্তু গত ২ আগস্ট খুকু বেগমকে হত্যা করা হয়। ৪ আগস্ট তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনার কিছুদিন পরেই বিপুল হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল খুকু বেগমের।
তবে ৮৫ বছরের এই বৃদ্ধার দুটি পা নিখোঁজ ছিল। একটি পা পাশের একটি পুকুরে পাওয়া যায়। আরেকটি পা মঙ্গলবার একই এলাকার একজনের বাড়ির সেইফটি ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই বাড়ির এক নারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে নিয়ে আসলে তখন হাবিবুরের নাম উঠে আসে। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই আটক করা হয় হাবিবুরকে। কিন্তু ওই নারীর সামনে নিয়ে আনা হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন হাবিবুর রহমান। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতে মৃত্যু হয় তার।