পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট ছাড়াই যেভাবে বিমানে চড়ে বসল শিশু জুনায়েদ

পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট কিংবা বোর্ডিং পাস; কিছুই ছিল না জুনায়েদ মোল্লার। তারপরও কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে চড়ে বসে ১২ বছর বয়সী এই শিশু। এ ঘটনায় বিমানবন্দরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়, প্রশ্ন উঠেছে সেখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
জুনায়েদ মোল্লা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে। জুনায়েদ সম্প্রতি সময় নিউজের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিমানে ওঠার কাহিনী শুনিয়েছে। জুনায়েদ জানায়, সে ১,০০০ টাকা নিয়ে বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা সায়দাবাদ বাস কাউন্টারে চলে আসে। সায়দাবাদ থেকে সে চলে যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরে আসার পর তার বিমানে চড়ার শখ হয়।
বিমানবন্দরে ঢুকতে প্রথমবার সে বাধার মুখে পড়ে। জুনায়েদ জানায়, তাকে দোতালায় উঠতে দেওয়া হয়নি। তারপর সে অন্য কোন এক পাশ দিয়ে ছাদ বেয়ে ওঠে এবং বিমানবন্দরে ঢুকে পড়ে।
বিমানবন্দরের চেকিং কাউন্টারে তাকে চেকও করা হয়। এখানে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, সাথে কেউ আছে কিনা। তখন জুনায়েদ জানায় তার সাথে পরিচিত অন্য একজন আছে (এখানে জুনায়েদ মিথ্যে বলে)।
এরপর বিমানে বোর্ডিংয়ের জন্য অপেক্ষমানদের সারিতে দাঁড়িয়ে পড়ে জুনায়েদ। সেখান থেকে যাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে বোর্ডিং গেইট পার হয়ে বিমানে উঠে পড়ে সে। । বিমানে ওঠার পর করিডরে ঘুরতে দেখে তাকে সিটে বসতে বলেন এক বিমানবালা। সে একটি আসনে বসে পড়ে। সেই আসনের যাত্রী এসে তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কি একা নাকি সাথে কেউ আছে? এরপর বিমানের পাইলটের সহকারীকে ডাকা হয়। জুনায়েদ আবারো মিথ্যে কথা বলে জানায়, সাথে আরেকজন আছে। এরপর তার সঙ্গীকে খোঁজা শুরু হয়। এক পর্যায়ে প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পারার পর তাকে বিমান থেকে নামানো হয় জুনায়েদকে। এবং কয়েকজন অফিসার এসে তাকে বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মুকসুদপার থানার মাধ্যমে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
জুনায়েদ জানায়, বিমানে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। বিমানে ওঠা পর্যন্ত তার কোনো ভয় করেনি। তবে পরবর্তীতে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর সে ভয় পায়।
জুনায়েদের চাচা ইউসুফ মোল্লা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, জুনায়েদ ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত। হাফেজি মাদ্রায় ভর্তি করার পর সে কয়েকবার পালিয়ে আসে। এরপর তাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সে মাঝে মাঝে এমন বাড়ি থেকে চলে যায় আবার একাই ফিরে আসে।
জুনায়েদের ঢাকা যাওয়া ও বিমানে চড়া সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল না বলে জানান ইউসুফ মোল্লা। বিমাবন্দর থানা থেকে তাদের ফোন করা হলে ঢাকা গিয়ে জুনায়েদকে তারা নিয়ে আসেন।
জুনায়েদের বিমানে চড়ার ঘটনায় ১০ জনকে বিমানবন্দরের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা বিমাবনন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ, অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), কুয়েত এয়ারওয়েজ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
বুধবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।