ওষুধের মত কসমেটিকসের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পাবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর

প্রসাধনী পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)- এর পরিবর্তে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে (ডিজিডিএ) দায়িত্ব দিয়ে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস বিল-২০২৩ উত্থাপন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
দেশে ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জরিমানা, লাইসেন্স ব্যতীত কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানিতে জেল-জরিমানার প্রস্তাব রেখে বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হবে। এই সংসদ অধিবেশনেই ওষুধ ও কসমেটিকস আইন পাসের বিষয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
এ আইন বাস্তবায়িত হলে ওষুধের মত কসমেটিকস শিল্পেরও বিকাশ হবে বলে মনে করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আলম।
যদিও এই আইন বাস্তবায়িত হলে কসমেটিকস ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পণ্যের দাম বাড়ে যাবে বলে বিভিন্ন সময়ে দাবি করে আসছেন কসমেটিকস ব্যবসায়ীরা।
নুরুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা এখন ১৫৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করি। সেই দেশে ৩৪ হাজার কোটি টাকার কসমেটিকসের বাজার লাগেজ পার্টি আর জিনজিরার নকল পণ্যের ওপর নির্ভর করবে– তাতো হতে পারেনা।"
"কসমেটিকসের ৯৭ শতাংশের যোগান নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এগুলো আসে নকল পণ্য তৈরি এবং শুল্ক ফাঁকি দেওয়া আমদানির মাধ্যমে। এতে ক্রেতারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার," যোগ করেন তিনি।
আইনের খসড়ায় কসমেটিকস ভেজাল করলে বা কোনো ভেজাল কসমেটিকস উৎপাদন, বিক্রয়, মজুদ ও বাজারজাত করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
নুরুল আলম বলেন, "নকল, ভেজাল, মানহীন কসমেটিকস ব্যবহারের ফলে স্কিন ক্যান্সার, কিডনি-ফুসফুস ও লিভার রোগ, চোখের ইনফেকশন, হৃদরোগসহ নানান ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের প্রায় সব ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কসমেটিকসও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।"
কসমেটিকসের মান যাচাইয়ের সক্ষমতা ওষুধ প্রশাসনের আছে কি না জানতে চাইলে নুরুল আলম বলেন, অধিদপ্তরের আওতায় বিশ্বমানের ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। এর জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করবে। অধিদপ্তরের পাশেই ৫ কাঠা জমিতে ১০তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
নতুন আইনে, লাইসেন্স ব্যতীত ওষুধ উৎপাদন করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
ওষুধ ভেজাল করলে বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয়, মজুদ, বিতরণের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করা হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনুর্ধ্ব ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
এছাড়া, ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ ছাড়া, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো ওষুধ বিক্রয় করা হলে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে।
ফিজিশিয়ান স্যাম্পল জাতীয় কোনো ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মজুদ করা হলে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে।
আজ সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ড্রাগস অ্যাক্ট-১৯৪০ এবং ড্রাগস (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ রহিত করে যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ওষুধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩ পাস করার প্রস্তাব দেবেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।