চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম পুনঃনির্ধারণের দাবি ব্যবসায়ীদের

ডলারের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম পুনঃনির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিকারকরা।
একইসঙ্গে তারা পণ্যের এমআরপির (ম্যাক্সিমাম রিটেইল প্রাইস) সাথে ভ্যাট যুক্ত করা অথবা ভ্যাট সম্পূর্ণ মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন। যদিও এতে চিকিৎসা ব্যয় আরেক দফা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, রোগীর ওপর চাপ বাড়বে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ও চোখের লেন্স আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে গ্লোবেক্স মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমানুল্লাহ বাদল বলেন, "আমাদের দাবি প্রোডাক্টের দাম বাড়ানো নয়, ডলারের দামের সাথে দামটার সামঞ্জস্য করা। আমাদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট করে না দিলে আমাদের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।"
তিনি আরও বলেন, "দামের সাথে ভ্যাটও অ্যাডজাস্ট করতে হবে। এর আগে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দামের সাথে ভ্যাট অ্যাডজাস্ট করার কথা বলেছিল, সেসব ডকুমেন্টস আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছি। এখন যদি ভ্যাট বাড়ে তাহলে কার্ডিয়াক স্টেন্ট, লেন্সের দাম বাড়াতে হবে; এতে রোগীর খরচ বাড়বে।"
২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের কার্ডিয়াক স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম ২ হাজার থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একইভাবে, ১৪ ডিসেম্বর ১২ দেশের ১২৯ ধরনের লেন্সের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ধারিত দামেই হার্টের রিং ও লেন্স হাসপাতালগুলোকে সরবরাহ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
আমদানিকারকরা বলছেন, হার্টের রিং বা চোখের লেন্স সবই আমদানি-নির্ভর পণ্য। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করা কঠিন হচ্ছে, ফলে মানহীন পণ্য অবৈধ পথে মার্কেটে চলে আসছে। এতে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ওয়াসিম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "ডলারের দাম ১১০ টাকা ধরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সরকারিভাবে ডলার রেট আছে ১২০ টাকা, অন্যদিকে ব্যাংক ১২৫-১২৭ পর্যন্ত নিচ্ছে। ডলারের সাথে সমন্বয় করে এমআরপি পুনঃবিবেচনার অনুরোধ করেছি আমরা।"
তিনি বলেন, "মেডিকেল পণ্যের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করা, এমআরপি পুনঃবিবেচনা করা, ভ্যাট এমআরপিতে যুক্ত করার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। আমাদের ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, এখন যদি সেটি বেড়ে যায় তাহলে তো আমাদের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবেনা। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদের কথা শুনেছে, তারা বলেছে প্রাইস বাড়ানোর ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা আছে।"
এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আকতার হোসেন বলেন, "ডলারের মূল্য ও ভ্যাটের কারণে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বাড়ানোর জন্য যে প্রস্তাবনা দিয়েছে ব্যবসায়ীরা— তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।"
"তবে রোগীর ওপরে চাপ পড়বে এমন কোনো কিছুই করা হবে না। সরকারের সিদ্ধান্তে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যবসীয়দের অনুরোধ জানানো হয়েছে। যেখান থেকে চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো আমদানি করা হয়, সেখানে দর কষাকষি করে একটু স্বল্পমূল্যে টেকসই সরঞ্জাম নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে," যোগ করেন তিনি।