কর্মপরিকল্পনা তৈরি না করায় গণতন্ত্র সম্মেলনে জায়গা পায়নি বাংলাদেশ: শোলে

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ককে সীমিত করে তুলবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বারিধারার আমেরিকান সেন্টার অডিটোরিয়ামে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে শোলে ব্যাখ্যা করেন, গণতন্ত্রের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি না করার সিদ্ধান্তের কারণে এবারও আগামী ২৯-৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক চায় জোর দিয়ে শোলে বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে ব্যাপক সম্ভবনা দেখি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সুদৃঢ় সম্পর্ক শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশগুলোর সঙ্গে। যদি গণতন্ত্র কোথাও দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে এটি আমাদের সহযোগিতার সক্ষমতাকে সীমিত করে দেবে।'
তবে তিনি আরও বলেন, এর অর্থ এ নয় যে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা একেবারেই বন্ধ করে দেবে অথবা ওই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এমনকি ব্যাবসায়িক বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রেও দুর্বল গণতন্ত্র একটি 'লিমিটিং ফ্যাক্টর' হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতার অভাব থাকা দেশগুলোর প্রতি আস্থা রাখতে পারবে না বেসরকারি খাতগুলো।
শোলে বলেন, মানবাধিকার ও পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কখনো এর উদ্বেগ গোপন রাখেনি এবং ভবিষ্যতেও রাখবে না।
একই দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে শোলে বলেন, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারে অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্র শুনেছে এবং সরকার জানিয়েছে তারা এসব অঙ্গীকার রক্ষা করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এক প্রশ্নে শোলে বলেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
'আমরা মনে করি, যেখানেই হোক না কেন, সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হওয়া উচিত এবং এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে নির্বাচনের ফলাফল পরাজিত পক্ষও গ্রহণ করে। গণতন্ত্র একট কঠিন বিষয় এবং আমারও এটি নিয়ে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করছি,' বলেন শোলে।
এ সময় শোলে শক্ত সুশীল সমাজ, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, এবং শক্তিশালী মুক্ত গণমাধ্যম সুস্থ ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করে যাবে বলে জানান।
গণতন্ত্র সম্মেলন বিষয়ে তিনি বলেন, 'গত বছর প্রথম গণতন্ত্র সম্মেলন হওয়ার পর অংশগ্রহণকারী এবং যারা যোগ দেয়নি — উভয় ধরনের দেশকে গণতন্ত্র বিষয়ে আমাদের সামগ্রিক অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় অবদান রাখার অংশ হিসেবে পরের বছরের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানাই আমরা।'
বাংলাদেশ নিজের সিদ্ধান্তে এমন কোনো কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেনি জানিয়ে শোলে আরও জানান, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেতে পারে।
বাংলাদেশে মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের নিয়মিত ভ্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শোলে বলেন, 'আমার মনে হয় এতেই প্রমাণিত হয় দুই দেশের এ সম্পর্কের ওপর আমরা কতটা গুরুত্ব দেই।'
র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে শোলে বলেন, 'আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি সেগুলো আমাদের উদ্বেগের স্পষ্ট নির্দশন ছিল। জেনে ভালো লেগেছে, গত বছরে র্যাবের অনেক উদ্বেগজনক কর্মকাণ্ড কমে এসেছে। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে জবাবদিহিতা এবং টেকসই পুনর্গঠন দেখতে চাই। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমার মনে হয় না আমরা সে পর্যায়ে এখনো পৌঁছাতে পেরেছি।'
প্রাধান্যের শীর্ষে রোহিঙ্গারা
রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে শোলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের শীর্ষে রয়েছে এটি।
'বার্মা সংকট নিয়ে আমাদের বিস্তৃত প্রচেষ্টার অংশ এটি। মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে এনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা এ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। তারা (রোহিঙ্গারা) এটা করতে চায়, কিন্তু একটি নিরাপদ পদ্ধতিতে করতে ইচ্ছুক। তারা নাগরিক হিসেবে অন্যদের সঙ্গে সমানভাবে বিবেচিত হতে চায়।
'দুঃখজনকভাবে, সীমান্তের অপর পারে এ শর্তগুলো মেটানোর নিকটতম কোনো লক্ষণও নেই।'
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার সবচেয়ে বড় দাতা উল্লেখ করে শোলে বলেন, দেশটি শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাস করা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা কমাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে এসে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করার একটি কারণ হলো, আমরা একটি বার্তা দিতে চাই। আর তা হলো, ভয়ংকর ভূমিকম্প, পাকিস্তানের তীব্র বন্যা, ও ইউক্রেনের সংকটের মুহূর্তেও রোহিঙ্গা সংকট 'আমাদের এজেন্ডায় রয়েছে'।
গোলটেবিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার'র সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ইত্তেফাক'র সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, যমুনা টিভি'র বার্তা প্রধান ফাহিম আহমেদ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সম্পাদক ইনাম আহমেদ, এএফপি'র ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম, চ্যানেল ২৪'র নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, এবং সমকাল'র সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন।
বৈঠকে ডেরেক শোলে'র সঙ্গী ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।