বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বুধবার বিকেলে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ বাস আপ-ডাউন করছে। এই ধর্মঘটের কারণে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দাবি মানা না পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
সকাল থেকেই রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। চলাচল করছে না আন্তঃজেলা পর্যায়ের কোনো বাস।
গত শনিবার নাটোরে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভায় ১০ দফা দাবি আদায়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এরপর তারা বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছে তাদের দাবি পূরণে স্বারকলিপি দেয়।
সাফকাত মঞ্জুর বলেন, 'মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ হয়নি। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, এ ধর্মঘটের আওতায় থাকবে সব যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন। তবে এরই মধ্যে যদি দাবির পক্ষে আশ্বাস পাওয়া যায়, তাহলে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।
১০ দফা দাবিগুলো হলো:
১। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে।
২। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে।
৩। জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে।
৪। করোনাকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ের ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে।
৫। সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে।
৬। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে।
৭। পরিবহনের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৮। উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
৯। মহাসড়কে হাটবাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে।
১০। যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।
এদিকে ধর্মঘট চলায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। আনিসুর রহমান নামের এক যাত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জে যাবেন। তার স্ত্রী অসুস্থ। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট থাকায় তাকে ভেঙে ভেঙে নসিমনে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, "যেখানে ভাড়া লাগতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, সেখানে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার কারণে ১০০০ টাকার মতো লাগছে।"
মিজানুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, তার বিকেলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা আছে। কিন্তু তিনি নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টা জানতেন না। পরীক্ষা দিতে না পারলে তার 'ড্রপ ইয়ার' হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিএনপি নেতাদের দাবি, অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো রাজশাহীর গণসমাবেশে মানুষকে আসতে বাধা দিতে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশ কমিটির সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, 'সমাবেশে যেন নেতাকর্মীরা আসতে না পারে সে জন্য রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। ধর্মঘট দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকে রাখা যাবে না। যেকোন মূল্যে এই গণসমাবেশ সফল করা হবে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাফকাত মঞ্জুর বলেন, গণসমাবেশের সঙ্গে তাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই। বিষয়টি 'কাকতালীয়'। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের এই কর্মসূচির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।