লঞ্চ ডুবির ১৩ ঘন্টা পর ‘আলৌকিকভাবে’ বেঁচে থাকা এক যাত্রীকে উদ্ধার

ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্মান্তিক লঞ্চ ডুবির ১৩ ঘন্টা পর ডুবে যাওয়া লঞ্চ 'এমভি রিশান মর্নিং বার্ডে'র ভেতর থেকে জীবিত অবস্থায় একজনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
উদ্ধার করা ব্যক্তির নাম সুমন ব্যাপারী। মুন্সিগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার ফয়সাল ব্যাপারীর ছেলে তিনি। ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি পুরান ঢাকার বাদামতলীতে ফলের দোকানে কাজ করেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।
সোমবার সকালে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের লঞ্চ 'ময়ূর-২' মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার দিকে আসা ছোট লঞ্চ 'মর্নিং বার্ড'কে ধাক্কা দিলে ৫০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি পানিতে ডুবে যায়। এরপর সারাদিন কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ, নৌবাহিনী যৌথ উদ্ধার অভিযান চালিয়ে একে একে ৩২টি মরদেহ উদ্ধার করে। অভিযানের প্রায় শেষ দিকে ১৩ ঘন্টা পর ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করার সময় লঞ্চের ভেতরে আটকা পড়ে বেঁচে থাকা সুমন ব্যাপারীকে উদ্ধারের তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইনের মতে, পানির নিচে দীর্ঘ সময় সুমনের বেঁচে থাকাটা 'আলৌকিক' একটা ব্যাপার।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "এটা সত্যিই আলৌকিক। উনি নিশ্চই অক্সিজেন আছে এমন কোনো রুমে আটকা পড়েছিলেন। তাঁর বেঁচে থাকার পেছনে এটাই একমাত্র বৈজ্ঞানিক কারণ বলে মনে হয়েছে।"
ফায়ার সার্ভিসের আরেক কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, "এয়ার ব্লোয়ার দিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি তোলার সময় আমাদের ডুবুরিরা তাকে দেখতে পায়। এরপরই তাকে সেখান থেকে বের করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
তবে উদ্ধার হওয়া সুমনের সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বেশি তথ্য জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি 'শক' এর মধ্যে থাকায় কথা বলতে পারেননি।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া রতন নামে স্থানীয় এক ডুবুরি জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিটি নিশ্চই লঞ্চের ভেতরে কোনো 'এয়ার পকেট' খুঁজে পেয়েছিলেন, যেকারণে পানির নিচে তিনি দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পেরেছেন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশিদ উন নবী সোমবার রাতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, উদ্ধারকৃত ব্যক্তিকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বর্তমানে ঠিক আছে।
তিনি বলেন, "আমারা আগামীকাল পর্যন্ত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেবো তাকে আরও রাখা হবে নাকি রিলিজ দেওয়া হবে।"
উদ্ধার হওয়া সুমন ব্যাপারীর ভাতিজ আবুল মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার চাচা পুরান ঢাকার বাদামতলীতে একটি ফলের মার্কেটে কাজ করেন। কাজে যোগ দেওয়ার জন্যই গতকাল সকালে তিনি লঞ্চে করে ঢাকা আসছিলেন।"

বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ ডুবির ঘটনাকে 'পরিকল্পিত এবং হত্যাকাণ্ড' বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
লঞ্চ ডুবির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে গঠিত সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।