রোজা রেখেই করোনায় দারিদ্র্যে পড়াদের জন্য অর্থ সংগ্রহে হাঁটছেন শতবর্ষী প্রবাসী বাংলাদেশি
১৯২০ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দবিরুল চৌধুরী। ১৯৫৭ সালে তিনি লন্ডনে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অধ্যয়ন করতে যান। এরপর থেকে সেখানেই বসবাস করছেন।
লকডাউনের মাঝে শুধু ঘরে বসে না থেকে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শতবর্ষী দবিরুল। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ অন্তত এক ডজন দেশে করোনাভাইরাস দারিদ্র্যের হার বাড়িয়েছে। দারিদ্র্য মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহ করতে তিনি এখন রোজা রেখেই পূর্ব লন্ডনের নিজ বাড়ির বাগানে হাঁটছেন। খবর আল জাজিরার।
দবিরুল শতবর্ষী আরেক ব্রিটিশ নাগরিক টম মুরের কাছ থেকে এই কাজের অনুপ্রেরণা পান। টম মুর নিজ বাগানে হেঁটে ৩ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড সংগ্রহ করেন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে এই অর্থের পুরোটাই তুলে দেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
টম মুরের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই গত ২৬ এপ্রিল থেকে নিজ বাগানে একশ' চক্কর দেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়েছিলেন দবিরুল। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি নিজের লক্ষ্যপূরণে সমর্থ হন। তিনি এখন আরও অর্থ সংগ্রহের জন্য রোজা রেখেই নিয়মিত হাঁটছেন।
নিজের হাঁটার ভিডিও লাইভ স্টিমিংয়ের মাধ্যমে তিনি এ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন ৭৫ হাজার পাউন্ড।
যুক্তরাজ্যের অন্যান্য বয়স্ক নাগরিকদের মতো দবিরুল চৌধুরীকেও সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন পরিবার-পরিজনের সংস্পর্শ থেকে। সরকারি লকডাউন বিধিমালার আওতায় গত দুই মাস আগে নেওয়া এই পদক্ষেপ চলতি সপ্তাহেই পর্যালোচনা কর দেখবে যুক্তরাজ্য সরকার।
তহবিল সংগ্রহে খোলা সামাজিক গণমাধ্যমের জাস্টগিভিং শীর্ষক পেজে দবিরুল লিখেছেন, 'বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটি মানুষ কোনো প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়া হলে চরম দারিদ্র্য কবলিত হবে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে চলেছেন বাংলাদেশ এবং তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। এর ফলে শিশুসহ পরিবারের অন্যদের চরম অনাহারে দিন কাটাতে হবে।'
গত মঙ্গলবার নাগাদ মৃতের সংখ্যায় ইউরোপের শীর্ষ করোনা প্রভাবিত দেশের তালিকায় সবার উপরে চলে আসে যুক্তরাজ্য। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো- অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস মোট ৩২ হাজার নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯৯ জন মারা গেলেও- বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হিসাবে করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ইতোমধ্যেই দেশের বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রভাবিত করা শুরু করেছে।
চলতি মাসেই প্রকাশিত এক গবেষণায় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হতে চলেছে বলে জানিয়েছে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৪০টি জেলার দারিদ্র্য হার জাতীয় হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাঙামাটি ও ময়মনসিংহ। এই দুই জেলায় যথাক্রমে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৩০ দশমিক ০২ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য চক্রের পাঁকে বাধা পড়বে।
