বিশ্বব্যাপী বন উজাড় বন্ধের ঘোষণায় যোগ দিলো বাংলাদেশ

চলমান জলবায়ু সম্মেলনে 'গ্লাসগো নেতৃবৃন্দের বন ও ভূমি ব্যবহার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে' স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ বা কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, "আমরা বন ও ভূমি ব্যবহার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছি এবং তালিকায় আমাদের নাম হালনাগাদ করা হয়েছে।"
শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্লাসগোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সমন্বয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গ্লাসগোতে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে গত ২ নভেম্বর ১০০টিরও বেশি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই দেশগুলোতেই রয়েছে বিশ্বের ৮৫ শতাংশের বেশি বনভূমি।
তবে সম্মেলনের একেবারে শুরুতেই বন উজাড় বন্ধের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের যুক্তি, দেশের সংবিধানে ইতোমধ্যেই বন সংরক্ষণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বন উজাড় বন্ধের চুক্তিতে নাম লেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন 'বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন' (বাপা)-এর যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ রূপান্তর প্রচারের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি এবং ভূমিক্ষয় বন্ধ ও প্রতিহত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
প্রকৃতপক্ষে, গ্লাসগোর বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি নতুন নয়। এর আগে ২০১৪ সালে 'দ্য নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন অন ফরেস্টস' (এনওয়াইডিএফ) নামে জাতিসংঘের জলবায়ু সামিট থেকে একই ধরনের অনুমোদন এসেছিল।
এনওয়াইডিএফে ২০০টিরও বেশি দেশ, উপজাতীয় সরকার, কোম্পানি, আদিবাসী গোষ্ঠী ও এনজিও স্বাক্ষর করেছিল। সে সময়ে তারা ২০২০ সালের মধ্যে বন উজাড় ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি; বরং এ সময়ের মধ্যে বন উজাড় আরও বেড়েছে, যা মোট কার্বন নির্গমনে আনুমানিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখছে।
বর্তমান গ্লাসগো ঘোষণাটি আগের এনওয়াইডিএফের ব্যর্থতার কারণেই এসেছে।
তবে বাংলাদেশ কীভাবে বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে সন্দিহান দেশের জলবায়ু ও বনবিষয়ক বিশ্লেষকরা। কারণ বাংলাদেশ সুন্দরবনের (বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন) কাছে নির্মাণ করছে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে রেললাইন তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছে।
বন ও ভূমি ব্যবহারে গ্লাসগো নেতাদের এই ঘোষণাপত্রের প্রভাব কী হবে তা জানতে চাইলে বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমির হোসেন চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই ঘোষণার পর যে কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এর পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন উজাড় বন্ধের পাশাপাশি বনভূমিও বাড়াতে হবে।"
কপ-২৬ ঘোষণা অনুসারে, দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ রূপান্তরের উন্নয়ন করবে। এর পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যেই বনাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি ও ভূমিক্ষয় রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ঘোষণায় দেশগুলো বন সংরক্ষণ, টেকসই উন্নয়নের জন্য নীতিমালা সহজীকরণ, গ্রামীণ জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও কৃষি নীতি বাস্তবায়ন সহ মোট ছয়টি বিষয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
এছাড়া, ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধের লক্ষ্য পূরণে সরকারি ও বেসরকারি তহবিলে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে চলমান সম্মেলনে।