ঈদে ডিজিটাল সেলামি

ময়মনসিংহ শহরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে ঘিরে ধরছে তার দুই নাতি। নগদ সালামি দিয়ে আদর করে দিলেন। সেলামি পেয়ে খুশি নাতিরা। এটি গতবছরের স্মৃতি। এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। করোনায় পাল্টে দিয়েছে এসব মধুর রীতিনীতি।
মোস্তাফিজুর রহমান জানালেন চলমান সংকটে ঢাকা থেকে আসতে পারেনি তার ছেলে মেয়েরা। স্বাভাবিক ভাবেই মন খারাপ, কারণ নাতিরাও আসেনি। তাই বলে সালামি বাদ থাকবে কেন। সালামি তিনি দিয়েছেন বিকাশ করে।
সিদ্রাতুল মুনতাহা তাকোয়া গৃহিনি। ভাতিজা-ভাতিজিদের প্রতি ঈদে সালামি দেন তিনি। এবার ঈদের দিন সকালেই ফোন আসে ভাতিজা আরিফের। চাচি সালামি পাঠিয়ে দেন। তাই বাধ্য হয়েই শিখেছেন কিভাবে অনলাইনে টাকা পাঠাতে হয়। আর প্রযুক্তির এই কল্যাণে এবারও বাদ যায়নি সালামি দেয়া।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শিক্ষিকা সুফিয়া আক্তার রিনা বলেন, ছেলের বন্ধুবান্ধবরা বরাবরই সালামি নিতে আসে বাসায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সেই আনন্দটা নেই। আমি তাদের কয়েকজনের নম্বর যোগার করে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এমন দিন যে আসবে, ভাবিনি কোনো সময়। আমার খারাপ লাগছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কবে হবে সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
গৃহীনি সাবরিনা আক্তার জানান, তার বাবা তার মেয়ের জন্য অনলাইনে সালামি পাঠিয়েছেন। তবে আমি আমারে মেয়ের হাতে নগদ টাকা দিয়ে বলেছি, তোমার নানা পাঠিয়েছেন।
ময়মনসিংহ সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তা আনসারুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে প্রযুক্তির ব্যবহার বরাবরই জনপ্রিয়। তবে মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইনে ছোটখাটো লেনদেনে সাধারণ মানুষের প্রযুক্তির ব্যবহার বিভিন্ন কারনে বাড়ছে। যার একটি নজির আমরা এবার দেখতে পারছি। মানুষ লেনদেনে এভাবে অভ্যস্ত হয়ে পরলে, জীবনযাত্রা আরো সহজ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার আবুল কালাম বলেন সারাজীবন চেক, পেঅর্ডার ইত্যাদি ব্যবহার করে লেনদেন করতে দেখেছি। এখন হাতের মুঠোয় লেনদেন হচ্ছে। ব্যাংকে না গিয়েও ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। তবে সেলামিও ডিজিটাল হয়ে যাবে, এমনটা কল্পনাও করতে পারি নাই।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিষ্ট্রার ডা সৈয়দ হাসানুল ইসলাম আকাশ বলেন, সংকট আমাদের প্রচলিত ধারনা থেকে ভিন্ন পথে চলতে শিখাচ্ছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে। যা থেকে বাদ যাচ্ছেনা সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বা চাকরির ধরনও।